
ছবি: সংগৃহীত।
মঙ্গল গ্রহে পাঠানো নাসার ১৯ বছর বয়সী মহাকাশযান Mars Reconnaissance Orbiter (MRO) নতুন এক বৈজ্ঞানিক কৌশল আয়ত্ত করেছে। বিজ্ঞানীদের ভাষায় এটি “ভেরি লার্জ রোল” বা খুব বড় ঘূর্ণন। এর মাধ্যমে যানটি ১২০ ডিগ্রি কোণে ঘুরে গিয়ে মঙ্গলের অভ্যন্তরে আরও পরিষ্কারভাবে নজর দিতে পারছে।
এই কৌশলে MRO তার পেছনের অংশে থাকা SHARAD (Shallow Radar) যন্ত্রটি ব্যবহার করে মঙ্গলের মাটির নিচে এক কিলোমিটার গভীর পর্যন্ত অনুসন্ধান করতে পারে। এতে বরফ, বালু, পাথরের মতো উপাদান আলাদা করে শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। বরফ শনাক্ত করার গুরুত্ব আরও বেশি, কারণ এটি ভবিষ্যতের মানব মিশনের জন্য অত্যাবশ্যক এক স্থলসম্পদ হতে পারে।
তবে এই নতুন কৌশলের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেহেতু SHARAD-এর অ্যান্টেনা যানটির পিছনের দিকে, তাই সাধারণ অবস্থানে রাডার সিগনাল স্পেসক্রাফটের অন্যান্য যন্ত্রের সাথে সংঘর্ষে পড়ে দুর্বল হয়ে যায়। ১২০ ডিগ্রি রোল দিয়ে যানটি ঘুরিয়ে SHARAD-কে সরাসরি মঙ্গলপৃষ্ঠে তাক করানো হলে রাডার সিগনাল দশগুণ পর্যন্ত শক্তিশালী হয়ে যায় এবং উপপৃষ্ঠের ছবি আরও পরিষ্কার আসে।
এমন কৌশল বাস্তবায়নে রয়েছে কিছু ঝুঁকিও। যানটির ডিজাইনে সর্বোচ্চ ৩০ ডিগ্রি পর্যন্ত রোল দেওয়ার সুবিধা ছিল। ১২০ ডিগ্রি রোল দিলে যানটির যোগাযোগ অ্যান্টেনা আর পৃথিবীমুখী থাকে না, এমনকি সৌর প্যানেল সূর্যের আলো ধরতেও পারে না। ফলে পুরো রোল চলাকালীন ব্যাটারির ওপর নির্ভর করতে হয়।
NASA-র জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরির (JPL) প্রকল্প ব্যবস্থাপক রেইড থমাস বলেন, “এই ধরনের বড় রোলের আগে বিশেষ বিশ্লেষণ প্রয়োজন হয় যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে ব্যাটারিতে যথেষ্ট শক্তি মজুদ রয়েছে।”
এই কারণে বছরে এক বা দুইবারের বেশি এই ধরনের ‘ভেরি লার্জ রোল’ অনুমোদিত নয়।
২০০৬ সালে উৎক্ষেপিত MRO, মূল মিশনের চেয়ে বহু বছর পেরিয়ে এখনও মঙ্গলের কক্ষপথে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। বৈজ্ঞানিকভাবে নতুন কিছু তথ্য পেতে এটি এখন পরীক্ষামূলক কৌশল প্রয়োগে আগ্রহী। উল্লেখযোগ্যভাবে, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ESA) মঙ্গলযান Mars Express-এও এক সময় নতুন যন্ত্র যুক্ত করা হয়েছিল, যেখানে ভিজ্যুয়াল মনিটরিং ক্যামেরা (VMC) পুনঃকাজে লাগানো হয়।
NASA-র আরও দুটি যান—MAVEN ও Mars Odyssey—এখনও মঙ্গলে কক্ষপথে রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে যদি হোয়াইট হাউজের প্রস্তাবিত বাজেট পাস হয়, তাহলে এই দুটি মিশনও বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
এমতাবস্থায়, MRO-এর এই নতুন কৌশল মঙ্গল অনুসন্ধানে এক নতুন দিগন্তের দ্বার খুলে দিচ্ছে—অন্তত যতদিন না পর্যন্ত বাজেট কাটের কাঁচি এসে পড়ে।
সূত্র: https://short-link.me/11IPx
মিরাজ খান