ছবি: প্রতীকী
বর্তমানে অনলাইনে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা রক্ষায় পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা অত্যন্ত সাধারণ একটি বিষয়। কিন্তু আমরা অনেকেই যে সাধারণ একটি ভুল করে যাচ্ছি, তা আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য হ্যাক হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের একটি জরিপে দেখা গেছে, প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৬ জন মানুষ একই পাসওয়ার্ড বা তার সামান্য পরিবর্তিত রূপ একাধিক অ্যাকাউন্টে ব্যবহার করেন। যেমন কেউ যদি ‘Potato123’ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন, পরবর্তী অ্যাকাউন্টে হয়তো সেটা পরিবর্তন করে ‘Potato456’ বা ‘P0tato123’ লিখে রাখেন। অনেকের ধারণা, এভাবে সামান্য পরিবর্তন করলেই নিরাপত্তা বজায় থাকবে— কিন্তু বাস্তবে এটি একটি বড় ভুল।
২০২৫ সালের গবেষণায় সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান নর্ডপাস জানায়, যারা পাসওয়ার্ড পুনরায় ব্যবহার করেন, তাদের মধ্যে ৬২% একই পাসওয়ার্ডের সামান্য রূপান্তর করে থাকেন। অথচ নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি হ্যাকারদের কাছে সবচেয়ে সহজ সুযোগ তৈরি করে দেয়।
Keeper Security-এর প্রধান নির্বাহী ড্যারেন গুচিওনি জানান, "মানুষ সহজেই ভুল করে ভাবে এক অক্ষর বা সংখ্যা বদলালেই পাসওয়ার্ড নিরাপদ থাকে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, হ্যাকাররা ঠিক এই ধরণের আচরণ ধরেই তাদের পাসওয়ার্ড ভাঙার সফটওয়্যার তৈরি করে।"
তাঁর মতে, হ্যাকাররা আজকাল অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) দ্বারা চালিত। এই প্রযুক্তি একসঙ্গে লক্ষ লক্ষ পাসওয়ার্ড ও তাদের হালকা পরিবর্তিত রূপ পরীক্ষা করে ফেলে মুহূর্তের মধ্যেই।
সাম্প্রতিক আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি সাতজনের একজন মানুষ গত এক বছরে অনলাইন প্রতারণায় অর্থ হারিয়েছেন। গত তিন মাসে ৫০% মানুষ জানিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার চেষ্টা হয়েছে।
তাহলে করণীয় কী?
একই পাসওয়ার্ড বা তার রূপান্তর পুনরায় ব্যবহার করা একেবারেই নিরাপদ নয়। এমনকি আপনি যে ওয়েবসাইটটি খুব কম ব্যবহার করেন, সেটাও হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। একবার কোনো সাইট থেকে আপনার পাসওয়ার্ড ফাঁস হলে, আপনি যদি সেই পাসওয়ার্ড অন্যত্রও ব্যবহার করেন— তাহলে সব অ্যাকাউন্ট ঝুঁকিতে পড়ে।
ড্যারেন গুচিওনি পরামর্শ দিয়েছেন, এমন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উচিত যাতে কোনো নাম, জন্মতারিখ বা সাধারণ শব্দ না থাকে। পাসওয়ার্ড ideally ১৬ অক্ষরের বেশি দীর্ঘ ও একেবারে এলোমেলো হওয়া উচিত। এজন্য তিনি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার অ্যাপ ব্যবহারের পরামর্শ দেন, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে জটিল ও আলাদা পাসওয়ার্ড তৈরি ও সংরক্ষণ করে।
এছাড়াও, দুই স্তরের নিরাপত্তা (Two-Factor Authentication) ব্যবহারের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। যেমন: মোবাইলে কোড পাঠানো, ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা নিরাপত্তা কি ব্যবহার করা। এতে পাসওয়ার্ড ফাঁস হলেও, আপনার অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত থাকবে।
সবশেষে মনে রাখবেন— পাসওয়ার্ডের Predictability বা পূর্বানুমেয়তা হ্যাকারদের জন্য সবচেয়ে বড় সুযোগ। তাই, পাসওয়ার্ড ব্যবহারে নিয়মিত সচেতনতা ও আধুনিক সুরক্ষা পদ্ধতি ব্যবহার করাই সবচেয়ে নিরাপদ পথ।
সূত্র: ইয়াহু নিউজ
এম.কে.
