ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে যে পানীয়

প্রকাশিত: ১১:৪৩, ২৮ জুন ২০২৫

রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে যে পানীয়

ছ‌বি: সংগৃহীত

হাই বা লো, গরম কিংবা ঠান্ডা— এক কাপ সবুজ চা বা গ্রীন টি হতে পারে উচ্চ রক্তচাপের সহজ ও প্রাকৃতিক প্রতিকার। সম্প্রতি ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নেভাডার গবেষকরা এক যৌথ গবেষণায় দাবি করেছেন, নিয়মিত গ্রীন টি পান করলে রক্তচাপ কমে। এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে ‘Blood Pressure’ নামক একটি বৈজ্ঞানিক জার্নালে।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় অর্ধেক প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন। তাদের মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জানেই না যে তারা এই বিপদের মুখে রয়েছেন, কারণ উচ্চ রক্তচাপ সাধারণত কোনও লক্ষণ ছাড়াই শরীরে নীরবে চলতে থাকে। কিন্তু এই রোগ যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তবে তা হৃদযন্ত্র, কিডনি, চোখ এমনকি মস্তিষ্কেও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করতে পারে।

এই সমস্যা প্রতিরোধে জেনেটিক বা জন্মগত কারণের বাইরে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে জীবনযাপন পদ্ধতি। খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, ঘুম ও মানসিক চাপ— সবকিছুই জড়িয়ে আছে এর সঙ্গে। গবেষণায় দেখা গেছে, সুষম ও কম সোডিয়ামযুক্ত খাদ্য যেমন ড্যাশ ডায়েট অনুসরণ করলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তবে এই গবেষকদল জানতে চেয়েছিলেন, আদৌ কি কোনও একটি নির্দিষ্ট খাবার বা পানীয় উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই তারা প্রায় ১৫,০০০ গবেষণার মধ্যে থেকে ৩৬টি নির্ভরযোগ্য ও মানসম্পন্ন গবেষণা বেছে নেন। এই সব গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, যারা নিয়মিত গ্রীন টি পানে অভ্যস্ত, তাদের সিস্টোলিক (উচ্চ) ও ডায়াস্টোলিক (নিম্ন) রক্তচাপ গড়ে ১ mm/Hg হ্রাস পেয়েছে। যদিও এই পরিবর্তন চিকিৎসা ক্ষেত্রে খুব বড় কোনও পরিবর্তন নয়, তবে বৈজ্ঞানিকভাবে তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মত গবেষকদের।

গ্রীন টি বিভিন্ন রূপে পান করা যায়— পাতা, নির্যাস, ক্যাপসুল কিংবা বিশেষ উপাদান EGCG-এর মাধ্যমে। কিন্তু কোন রূপ সবচেয়ে কার্যকর এবং কোন মাত্রায় খেলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়, তা এই গবেষণা এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি। কারণ, অংশগ্রহণকারী গবেষণাগুলোতে ব্যবহার করা পদ্ধতিতে পার্থক্য ছিল।

বাস্তব জীবনে এই তথ্যের মানে হলো— আপনি যদি প্রতিদিন এক বা দুই কাপ গ্রীন টি পান করেন, তাহলে তা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে একটি সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। গ্রীন টি ক্যাফিনযুক্ত হলেও তা ব্ল্যাক টির তুলনায় অনেকটাই কম। ফলে এটি অতিরিক্ত উত্তেজনা তৈরি না করে বরং শরীরকে কিছুটা শান্ত রাখে। এছাড়া গ্রীন টিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান প্রদাহ কমাতে, রক্তে শর্করা ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে এবং মস্তিষ্ক ও হজমে উপকারে আসে। এমনকি কিছু গবেষণায় ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাসের কথাও বলা হয়েছে।

গবেষকরা পরামর্শ দিচ্ছেন, খালি পেটে গ্রীন টি পান করলে এর উপকারী উপাদানগুলো শরীরে বেশি কার্যকরভাবে শোষিত হয়। যদিও খাবারের সঙ্গে খেলেও কিছু উপকার পাওয়া যায়, তবে খালি পেটে খেলেই তা সর্বোচ্চ উপকার দেয়। তবে গ্রীন টি-তে থাকা ট্যানিন উপাদান উদ্ভিজ্জ উৎসের লৌহ শোষণে বাধা দিতে পারে। তাই যারা রক্তাল্পতার সমস্যায় ভোগেন, তাদের ক্ষেত্রে সাবধান থাকা জরুরি।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো— যদি সম্ভব হয়, টি-ব্যাগের পরিবর্তে খোলা পাতার গ্রীন টি ব্যবহার করা ভালো। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু টি-ব্যাগে মাইক্রোপ্লাস্টিক থাকতে পারে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

সবশেষে মনে রাখা দরকার, শুধু গ্রীন টি পান করলেই রক্তচাপ ঠিক হয়ে যাবে না। এটি একটি পরিপূরক সহায়ক মাত্র। দীর্ঘস্থায়ী সুস্থতার জন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং পর্যাপ্ত ও গুণগত ঘুম। এসব কিছুই মিলে গড়ে তুলবে একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা— যা আপনাকে রক্তচাপসহ আরও অনেক রোগ থেকে সুরক্ষা দেবে।

ছোট ছোট পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই শুরু হতে পারে বড় পরিবর্তনের পথ। দৈনিক মাত্র পাঁচ মিনিটের ব্যায়ামও রক্তচাপে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে এক কাপ গ্রীন টি আর একটু সচেতন জীবনযাপনেই আপনি পেতে পারেন দীর্ঘমেয়াদি উপকার।

সূত্র: ইটিং ওয়েল

এম.কে.

×