
ছবিঃ সংগৃহীত
বর্ষা মানেই শিশুরা কখনও কখনও অবাঞ্ছিত ছুটিতে পড়ে—তাও আবার পেটের সংক্রমণের কারণে। ডায়রিয়া বা পেট ব্যথা হলে অভিভাবকেরা উদ্বিগ্ন হন ঠিকই, কিন্তু অনেকেই জানেন না, এই পেটের সমস্যা শিশুর মেজাজ, মনোযোগ ও আচরণেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ভারতের মেডিকোভার হাসপাতালের কনসালট্যান্ট শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ভ্রুক্শাল শামকুয়ার বলেন, “বর্ষায় পানি ও খাদ্যের দূষণ এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ শিশুদের মধ্যে পেটের সংক্রমণ বাড়িয়ে দেয়।” তিনি জানান, অধিকাংশ অভিভাবক শুধু শারীরিক লক্ষণ যেমন বমি, পাতলা পায়খানা বা পেট ব্যথা দেখতে পান, কিন্তু শিশুর মন-মেজাজ, মনোযোগ ও শিখনক্ষমতার ওপর যে এর প্রভাব পড়ে, তা অনেকেই বোঝেন না।
ডা. শামকুয়ার ব্যাখ্যা করেন, “পেট ও মস্তিষ্কের মধ্যে রয়েছে গাট-ব্রেইন অ্যাক্সিস নামের এক জটিল স্নায়ুব্যবস্থা, যা সর্বক্ষণ বার্তা আদান-প্রদান করে।”
সংক্রমণের কারণে যদি পেটের ভালো ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হয়, তাহলে সেরোটোনিন-এর মতো মেজাজ নিয়ন্ত্রণকারী রাসায়নিক উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটে। ফলে শিশুরা ক্লান্ত, খিটখিটে বা অস্থির হয়ে পড়ে।
শিশুর পেট ও মন ভালো রাখতে এই ৫টি পরামর্শ মেনে চলুন:
১. নিরাপদ পানীয় জল দিন: শিশুকে শুধু ফুটানো, ফিল্টারকৃত বা বিশুদ্ধ পানিই দিন। বাইরে থেকে কেনা বরফ, কোমল পানীয় বা রঙিন জুস একেবারে এড়িয়ে চলুন।
২. হাইজিন বা পরিচ্ছন্নতায় জোর দিন: খাওয়ার আগে ও টয়লেট ব্যবহারের পর হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সংক্রমণ প্রতিরোধে দারুণ কার্যকর।
৩. রাস্তার খাবার এড়িয়ে চলুন: বর্ষাকালে স্ট্রিট ফুড, কাঁচা সালাদ বা খোলা জায়গায় বিক্রিত খাবারে জীবাণু থাকতেই পারে। বরং বাসায় তৈরি খাবার খাওয়ানোই নিরাপদ।
৪. পেটের উপকারী খাবার খাওয়ান: শিশুর খাদ্যতালিকায় দই, ফলমূল ও ফাইবারযুক্ত খাবার যোগ করুন। এগুলো হজম শক্তি বাড়ায় ও ভালো ব্যাকটেরিয়া তৈরি করতে সহায়তা করে।
৫. অসুস্থ হলে দ্রুত ব্যবস্থা নিন: বমি, ডায়রিয়া বা পেট ব্যথা দেখা দিলেই দ্রুত পর্যাপ্ত তরল দিন ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। দেরি করলে শারীরিক জটিলতার পাশাপাশি মেজাজ ও আচরণগত সমস্যা বাড়তে পারে।
লক্ষণ যেগুলোর দিকে খেয়াল রাখবেন:
বারবার বমি
পাতলা পায়খানা (ডায়রিয়া)
পেট ব্যথা বা ক্র্যাম্প
দুর্বলতা, খিটখিটে মেজাজ
মনোযোগে ঘাটতি
বর্ষাকালে শিশুর পেটের সংক্রমণ যেন মনের সংক্রমণে না রূপ নেয়—সেই দিকটাও গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু পেটের চিকিৎসা নয়, সময়মতো যত্ন ও পরিচ্ছন্ন অভ্যাস গড়ে তোলাই শিশুর স্বাস্থ্য, মন ও শিখনক্ষমতা রক্ষার মূল চাবিকাঠি।
সূত্র: www.moneycontrol.com
নোভা