ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

ইউরিক এসিডের অসহ্য যন্ত্রণা: এড়িয়ে চলুন এই ৫ খাবার

প্রকাশিত: ১৬:৩২, ২৮ জুন ২০২৫

ইউরিক এসিডের অসহ্য যন্ত্রণা: এড়িয়ে চলুন এই ৫ খাবার

ছবি: সংগৃহীত

দিন দিন বেড়ে চলা মানসিক চাপ ও কাজের চাপের কারণে আমাদের খাদ্যাভ্যাসে আসে শিথিলতা। সহজলভ্য ও মুখরোচক খাবারের প্রতি ঝুঁকে পড়া এখন সাধারণ প্রবণতা হয়ে উঠেছে। তবে এর ফলে আমরা নানা ধরনের জীবনধর্মী রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ি। ডায়াবেটিস ও স্থূলতার মতো কয়েকটি রোগ নিয়ে বিশ্বজুড়ে সচেতনতা বাড়লেও, কিছু কিছু সমস্যা এখনো আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। তেমনই একটি সমস্যা হলো শরীরে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া—যা প্রাথমিকভাবে বোঝা যায় না, কিন্তু ধরা পড়ে তখনই যখন তা সমস্যার পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

ইউরিক এসিড মূলত শরীরে পিউরিন নামক একটি যৌগ ভাঙার পর তৈরি হয়। স্বাভাবিকভাবে এটি মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। তবে যদি শরীর খাদ্য হজম ও বিপাক ক্রিয়ায় ব্যর্থ হয়, তাহলে ইউরিক এসিড সঠিকভাবে নিষ্কাশিত হয় না এবং ধীরে ধীরে রক্তে জমতে থাকে। এর ফলে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সুস্থ থাকতে হলে প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে কিছু সতর্কতা রাখা প্রয়োজন।

ইউরিক এসিড বাড়লে কী হয় শরীরে?

যখন শরীর পিউরিন ভাঙতে ব্যর্থ হয়, তখন ইউরিক এসিড রক্তে জমে হাইপারইউরিসেমিয়া নামক সমস্যার সৃষ্টি করে। এই অবস্থায় কিডনির কার্যকারিতায় প্রভাব পড়তে পারে। ইউরিক এসিড বেশি হলে শরীরের জয়েন্ট ও টিস্যুতে স্ফটিক তৈরি হয়, যার ফলে ব্যথা, ফোলাভাব ও গাউট নামক জটিল অবস্থা দেখা দিতে পারে। সাধারণ উপসর্গের মধ্যে রয়েছে জয়েন্টে ব্যথা, চাপ বা অস্বস্তি, ত্বকে লালচে ভাব ইত্যাদি।

শরীরে ইউরিক এসিডের স্বাভাবিক মাত্রা কত?

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাধারণত একজন মানুষের রক্তে ইউরিক এসিডের স্বাভাবিক মাত্রা প্রতি ডেসিলিটারে ৩.৫ থেকে ৭.২ মিলিগ্রাম (mg/dL)। তবে বয়স, লিঙ্গ ও স্বাস্থ্যের অবস্থান অনুযায়ী এই মাত্রা ভিন্ন হতে পারে। ওয়েবএমডির মতে, মহিলাদের ক্ষেত্রে ৬ mg/dL এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে ৭ mg/dL এর বেশি হলে ইউরিক এসিড বেড়েছে বলে ধরা হয়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে তা জানা জরুরি।

ইউরিক এসিড নিয়ন্ত্রণে ঘরোয়া পরামর্শ: এড়িয়ে চলুন এই ৫টি খাবার

খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনলে ইউরিক এসিড সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। কলকাতার পুষ্টিবিদ মালা চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ‘পিউরিন ভেঙেই শরীরে ইউরিক এসিড তৈরি হয়। তাই পিউরিনযুক্ত খাবার কম খেলে শরীরের ইউরিক এসিড কমে আসতে পারে।’ নিচে এমন পাঁচটি খাবার তুলে ধরা হলো, যেগুলো এড়িয়ে চলা বা সীমিত খাওয়া উচিত—

১. সয়াবিন

জার্নাল Frontiers in Nutrition-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সয়া বা সয়াপ্রোটিন শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রা দ্রুত বাড়ায়। তবে তফু (tofu) খেলে এর তেমন প্রভাব পড়ে না।

২. লাল মাংস

PLOS One নামক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা জানাচ্ছে, যারা নিয়মিত লাল মাংস খান, তাদের ইউরিক এসিডের মাত্রা নিরামিষভোজীদের তুলনায় অনেক বেশি। তাই লাল মাংস সীমিত খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

৩. অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাংস (Organ Meat)

আর্থ্রাইটিস ফাউন্ডেশনের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলিজা, গিজার্ড, অন্ত্র ইত্যাদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাংসে পিউরিনের পরিমাণ অত্যধিক থাকে। এগুলো ইউরিক এসিড বাড়িয়ে গাউটের ঝুঁকি তৈরি করে।

৪. সামুদ্রিক খাবার

ওয়েবএমডির তথ্য অনুযায়ী, চিংড়ি, লবস্টার, মাশেলস, সার্ডিনের মতো সামুদ্রিক খাবারে প্রচুর পরিমাণে পিউরিন থাকে। এগুলো ইউরিক এসিড বাড়িয়ে গাউটের সমস্যা বাড়ায়।

৫. কোমল পানীয় (সোডা)

ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কোমল পানীয়তে পিউরিন কম থাকলেও এতে থাকা ফ্রুক্টোজ ইউরিক এসিড বৃদ্ধির জন্য দায়ী। এটি একমাত্র কার্বোহাইড্রেট যা সরাসরি ইউরিক এসিড বাড়ায়।

 

 

সূত্র: এনডিটিভি।

রাকিব

×