
ছবি: সংগৃহীত
এক মর্মান্তিক ঘটনায়, 'কাঁটা লাগা' গানে অভিনয়ের মাধ্যমে পরিচিত মডেল ও অভিনেত্রী শেফালি জারিওয়ালা শুক্রবার (২৭ জুন) হৃদ্রোগজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে জানা গেছে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৪২ বছর। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর স্বামী পরাগ ত্যাগী ও আরও কয়েকজন তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান, কিন্তু চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হঠাৎ এই মৃত্যু পুরো বিনোদন অঙ্গনকে নাড়িয়ে দিয়েছে এবং আবারও হৃদ্স্বাস্থ্যের গুরুত্ব সামনে এনেছে। যদিও নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা হৃদ্রোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে সাহায্য করে, তবুও নিচের ৫টি হঠাৎ দেখা দেওয়া উপসর্গ জানা এবং সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি—যেগুলো কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা হঠাৎ হৃদ্যন্ত্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দিতে পারে।
১. হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়া
হঠাৎ করে একজন মানুষ অজ্ঞান হয়ে গেলে এবং তার জ্ঞান না ফিরলে, সেটি হৃদ্যন্ত্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার (সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট) একটি প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। এ সময় মস্তিষ্কে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছায় না, ফলে ব্যক্তি সাড়া দেন না এবং ঝাঁকিয়ে তোলার পরেও জ্ঞান ফিরে আসে না। এই সময় খুব অল্প সময়ের মধ্যেই চিকিৎসা না পেলে জীবন রক্ষা করা কঠিন হয়ে যায়।
২. নাড়ি অনুভব না হওয়া
কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের সময় হৃদ্যন্ত্র পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় বা এত অনিয়মিতভাবে ধকধক করে যে রক্ত পাম্প করতে পারে না। এতে শরীরে কোনো নাড়ি বা পালস পাওয়া যায় না। একই সঙ্গে শ্বাস নেওয়া বন্ধ হয়ে যায় অথবা ব্যক্তি শুধু হেঁচকি মতো গ্যাসপাতে থাকে (এটি অ্যাগোনাল ব্রিদিং নামে পরিচিত), যা স্বাভাবিক শ্বাস নয় এবং দ্রুত চিকিৎসা না হলে মারাত্মক হতে পারে।
৩. বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি
কখনো কখনো কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের আগে কেউ বুকে ব্যথা, চাপ বা অস্বস্তি অনুভব করতে পারেন। এর সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, বমিভাব বা মাথা ঘোরা দেখা দিতে পারে। এই উপসর্গগুলো হৃদ্যন্ত্রের চাপের সংকেত হতে পারে এবং হঠাৎ হৃদ্যন্ত্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার পূর্বে ঘটে থাকে।
৪. হৃদস্পন্দনের অস্বাভাবিকতা বা খুব দ্রুত হওয়া
কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের পূর্বে অ্যারিদমিয়া নামক অনিয়মিত হার্টবিট দেখা দিতে পারে, যা হার্টকে দ্রুত ও অগোছালোভাবে কাঁপাতে থাকে (যেমন ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন)। এতে হৃদ্যন্ত্র রক্ত পাম্প করতে পারে না এবং হঠাৎ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
৫. শরীর দুর্বল লাগা, মাথা ঘোরা বা শ্বাসকষ্ট
অনেক সময় কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ঠিক আগেও কেউ কেউ খুব দুর্বল, মাথা ঘোরানো বা শ্বাস নিতে কষ্ট অনুভব করতে পারেন। এগুলো হৃদ্যন্ত্র সঠিকভাবে কাজ করছে না—এমন সতর্কতা সংকেত এবং জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন।
হার্ট অ্যাটাক বনাম কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট: পার্থক্য কী?
যদিও এই দুইটি হৃদ্সংক্রান্ত জটিলতা, তবে হৃদ্রোগ (Heart Attack) এবং হৃদ্যন্ত্র বন্ধ হয়ে যাওয়া (Cardiac Arrest) এক নয়।
হার্ট অ্যাটাক হয় যখন হৃদ্যন্ত্রের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়, সাধারণত করোনারি ধমনীতে জমাট বাঁধা রক্তের কারণে। এতে হৃদ্পেশিতে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছাতে না পারায় সেই অংশ ক্ষতিগ্রস্ত বা মৃত হয়ে যায়। হার্ট অ্যাটাকের সময় সাধারণত হৃদ্যন্ত্র চলতে থাকে, কিন্তু বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বমি বমি ভাব, ঘাম ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় হঠাৎ হৃদ্যন্ত্রের বৈদ্যুতিক সংকেতের গোলযোগের কারণে, যার ফলে হার্ট ধকধক করা বন্ধ করে দেয় এবং মস্তিষ্কসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে তৎক্ষণাত জ্ঞান হারানো, নাড়ি থেমে যাওয়া ও শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। এটি হঠাৎ ঘটে এবং কয়েক মিনিটের মধ্যেই প্রাণঘাতী হতে পারে।
কিছু কিছু মানুষকে ঠান্ডা পানি পান বা অতিরিক্ত মানসিক চাপেও হৃদ্রোগে আক্রান্ত হতে দেখা গেছে। তবে শেফালি জরিওয়ালার মতো আকস্মিক মৃত্যুর ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, হৃদ্স্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলা না করাই শ্রেয়।
যদি উপরের যে কোনো উপসর্গ দেখা যায়, অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সময়মতো পদক্ষেপ নিলে বহু জীবন বাঁচানো সম্ভব।
আবির