
ছবি: সংগৃহীত
কোলন ক্যানসার, যেটিকে কলোরেক্টাল ক্যানসারও বলা হয়, এটি বৃহৎ অন্ত্রের শেষ অংশ—অর্থাৎ কোলন বা রেকটামে হয়ে থাকে। এটি সাধারণত ছোট ছোট, অ-ক্যানসারজাত কোষের দল (পলিপ) হিসেবে শুরু হয়, যা সময়ের সঙ্গে ক্যানসারে রূপ নিতে পারে। বেশিরভাগ কোলন ক্যানসারের ক্ষেত্রে আগে থেকে কোনো বড় ঝুঁকি না থাকলেও পারিবারিক ইতিহাস, অতিরিক্ত ওজন এবং জীবনধারা এই ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ৫০ বছরের পর এই রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে। প্রাথমিক লক্ষণগুলো অনেক সময়ই হালকা হয় এবং হজমজনিত সমস্যা বা পেটের সংক্রমণ বলে মনে হতে পারে। তবে কিছু সতর্কতা সংকেত রয়েছে, যেগুলো অবহেলা করা ঠিক নয়।
১. মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন
কোলন ক্যানসারের প্রথম দিকের লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মলত্যাগের স্বাভাবিক অভ্যাসে পরিবর্তন। যেমন:
-
ঘন ঘন ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য
-
কখনও ডায়রিয়া, কখনও কোষ্ঠকাঠিন্য—দুইয়ের পর্যায়ক্রম
-
মলের আকৃতি হঠাৎ সরু বা পাতলা হয়ে যাওয়া
এই পরিবর্তনগুলো সাময়িক বা তুচ্ছ বলে মনে হতে পারে। অনেকেই খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ বা হজমের গোলমাল বলে মনে করেন। তবে যদি এই পরিবর্তন কয়েকদিনের বেশি স্থায়ী হয় বা বারবার ফিরে আসে, তাহলে এটি কোলনে বেড়ে ওঠা টিউমারের কারণে হতে পারে, যা মলত্যাগের স্বাভাবিকতা ব্যাহত করে।
২. মলে রক্ত থাকা
মলে রক্ত থাকা কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়। এটি দেখা যেতে পারে—
-
মলের উপরে বা টয়লেট পেপারে উজ্জ্বল লাল রক্ত
-
গাঢ় বা কালচে, চটচটে মল—পুরনো রক্তের লক্ষণ
কখনো কখনো রক্তপাত এতটাই সামান্য হয় যে খালি চোখে ধরা পড়ে না, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে রক্তাল্পতা (অ্যানিমিয়া) সৃষ্টি করতে পারে। যদিও এটি অনেক কারণে হতে পারে—যেমন পাইলস বা সংক্রমণ—তবুও বারবার হলে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাদ দেওয়া উচিত নয়।
৩. পেটে অস্বস্তি বা ব্যথা
চলমান পেটব্যথা বা অস্বস্তি অনেক সময় কোলন ক্যানসারের প্রথমদিকের লক্ষণ হতে পারে। যেমন:
-
পেটের ক্র্যাম্প বা গ্যাসের ব্যথা
-
পেট ফেঁপে থাকা বা অতিরিক্ত ভরা ভরা ভাব
-
সাধারণ পেটব্যথা, যা সহজে সারছে না
এই উপসর্গগুলো অনেক সময় হজমের সমস্যা বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়। তবে যদি ব্যথা বারবার হয় এবং খাবার বা জীবনধারার সঙ্গে সম্পর্ক না থাকে, তাহলে এটি টিউমারজনিত উত্তেজনা বা ব্লকেজের লক্ষণ হতে পারে।
৪. দুর্বলতা ও অবসাদ
অকারণে অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা কোলন ক্যানসারের একটি সূক্ষ্ম লক্ষণ হতে পারে, বিশেষ করে যদি অন্য উপসর্গের সঙ্গে যুক্ত হয়। ধীরে ধীরে রক্তপাতের ফলে শরীরে আয়রনের ঘাটতি হয়, যা রক্তাল্পতা তৈরি করে। এতে অক্সিজেন পরিবহনে সমস্যা হয় এবং ফলে ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট ও দুর্বলতা দেখা দেয়। অনেকেই একে মানসিক চাপ বা ঘুমের অভাব বলে ভাবেন, কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৫. দ্রুত ও অজানা ওজন হ্রাস
পর্যাপ্ত কারণ ছাড়া হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া বেশিরভাগ ক্যানসারেরই সাধারণ লক্ষণ। শরীর যখন ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করে, তখন রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় থাকে এবং টিউমার হজম ও ক্ষুধার ওপর প্রভাব ফেলে। খাদ্যাভ্যাস বা ব্যায়ামে কোনো পরিবর্তন না করেও যদি ওজন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যদিও এটি সাধারণত ক্যানসারের একটু পরে দেখা যায়, কখনো কখনো এটি প্রাথমিক সংকেতও হতে পারে।
আবির