
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নারী উন্নয়নের জন্য দরিদ্র-অসহায় মহিলাদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করতে তিনটি হাট-বাজারে নির্মিত মহিলা মার্কেটগুলো এখন পুরুষদের দখলে। শুরু থেকেই নিয়মনীতি উপেক্ষা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। উপজেলা পরিষদ, এলজিইডি ও পৌরসভার যথাযথ তদারকি না থাকায় তিনটি মার্কেটের ২২ টি দোকানের ২০ টি বেদখল হয়ে গেছে। দোকানগুলো অপেশাদারী একশ্রেণির প্রভাবশালী তাদের নামে বরাদ্দ নিয়ে সাবলেট দিয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে মহিলা মার্কেট কথাটি পর্যন্ত লেখা নেই।
কলাপাড়া পৌর শহরের নতুন বাজারে ১০ কক্ষের, লালুয়ার বানাতি বাজারে ৬ কক্ষের ও মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের তেগাছিয়া বাজারে ৬ কক্ষের মোট তিনটি মহিলা মার্কেট নির্মাণ করা হয়। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০২ অর্থবছর পর্যন্ত স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর মার্কেট তিনটি নির্মাণ করে। ২০০৩ সালের মাঝামাঝি সময় মার্কেটগুলো চালু করা হয়। নীতিমালায় বলা হয়েছে বাজারে দোকান রয়েছে, কিন্তু মানসম্মত নয় নিজেই দোকান চালান এমন মহিলা। মহিলা মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পরিবারের সদস্য। মহিলা নিজের বাড়িতে দোকান করেন। উৎপাদনশীল ক্ষুদ্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বিধবা কিংবা স্বামী পরিত্যক্তা। পরিবার প্রধান মহিলা যিনি ব্যবসা করতে আগ্রহী। অর্থনৈতিকভাবে অসুবিধাগ্রস্ত। এমনসব মহিলাদের মধ্যে দোকান বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও বরাদ্দকালেই তা মানা হয়নি।
বলা রয়েছে কোন দোকানঘর বরাদ্দপ্রাপ্ত মহিলা ছাড়া কোন পুরুষ পরিচালনা করতে পারবেন না। উপজেলা হাট-বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি দোকানের প্রতি বর্গফুট হিসাবে ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়। প্রাপ্ত ভাড়ার শতকরা পাঁচ ভাগ সরকারকে ৭-ভূমি রাজস্ব খাতে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে প্রদান করতে হবে। ১৫ ভাগ মহিলা মার্কেটের রক্ষণা-বেক্ষণে ব্যয় হবে। বাকি ৮০ ভাগ সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের তহবিলে জমা হবে। কোনভাবেই বরাদ্দ পাওয়া মহিলা এ দোকান অন্য কারও কাছে হস্তান্তর করতে পারবেন না। নারীদের স্বাবলম্বী করার সরকারের এ উদ্যোগ এলজিইডি কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিনিধিদের চরম উদাসীনতায় মার্কেট তিনটির দোকানগুলো নারীদের কাছ থেকে বেহাত হয়ে গেছে।
কলাপাড়া পৌর শহরের নতুন বাজারে দুই দিকে মুখ করা ১০ কক্ষের মার্কেটটিতে ১০জন মহিলার নামে কাগজে-কলমে বরাদ্দ দেওয়া রয়েছে। কিন্তু সকল দোকান পুরুষ লোকজন চালাচ্ছেন। যার মধ্যে অধিকাংশ সাবলেট দেয়া রয়েছে। এমনকি লোহালক্কর, টিনের দোকান পর্যন্ত বসানো হয়েছে। মার্কেটের মেরামতসহ কোন কাজ করা হয় না। এমনকি মার্কেটের পাশের টয়লেটটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে। টয়লেটের ট্যাংকির ওপরে তোলা হয়েছে স্থাপনা। বানাতি বাজারে দুই মহিলা কখনও কখনও দোকান করতেন, তাও এখন নাই। তেগাছিয়া বাজারের একটি দোকানও মহিলা দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে না। ফলে নামে মাত্র ভাড়ায় নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে করা সরকারের নেওয়া উদ্যোগ এখন ভেস্তে যেতে বসেছে। একজন ইউপি মেম্বার জানালেন, এ মার্কেট মহিলাদের নামে আছে কামে নাই। অনেক মহিলারা জানান, তারা সেলাইসহ ক্ষুদে দোকান পরিচালনা করছেন। কিন্তু তাদের দোকানপাট নেই। ওইসব নারীদের মধ্যে বরাদ্দ দেয়া হলে সরকারের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হতো।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক মো. রবিউল ইসলাম জানান, কলাপাড়া পৌরসভার মার্কেটটি ভেঙে নতুন কওে বহুতল করার পরিকল্পনা রয়েছে। আর লালুয়া ও তেগাছিয়ার মার্কেটের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিবেন।
রাজু