
ছবি: সংগৃহীত
নোশির শেরিয়ারজি গোয়াডিয়া একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভয়ঙ্কর বি-২ "স্টেলথ" বোমারু বিমানের অন্যতম নকশাবিদ ছিলেন। তিনি ১৯৪৪ সালের ১১ এপ্রিল মুম্বাইয়ের এক পারসি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কিশোর বয়সেই অসাধারণ মেধার অধিকারী গোয়াডিয়া মাত্র ১৫ বছর বয়সে পিএইচডি সমমানের জ্ঞান অর্জন করেন বলে দাবি করা হয়।
তিনি ১৯৬৩ সালে আমেরিকায় পাড়ি জমান এবং ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের উত্তররপ কর্পোরেশনে (বর্তমানে নর্থরপ গ্রুম্যান) যোগ দিয়ে কাজ করেন বিখ্যাত বি-২ "স্পিরিট" স্টেলথ বোমারু প্রকল্পে। তার মূল কাজ ছিল বিমানের নিঃসরণ নকশা তৈরি করা—যা তাপ ও রাডার সিগনেচার থেকে বিমানটিকে অদৃশ্য রাখতে সহায়তা করে।
গোয়াডিয়া ১৯৮৬ সালে একটি বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে চাকরি ছাড়েন। তিনি পরে নিজস্ব পরামর্শক প্রতিষ্ঠান খোলেন, কিন্তু ১৯৯৭ সালে এক চুক্তি নিয়ে বিবাদে তার নিরাপত্তা ছাড়পত্র বাতিল হয়ে যায়। তখন থেকে তার জীবনে নেমে আসে আর্থিক সঙ্কট, আর সেখান থেকেই জন্ম নেয় বিশ্বাসঘাতকতার পথ।
কী অপরাধ করেছিলেন?
২০০৩ সালে তিনি চীনের সাথে গোপনে সম্পর্ক স্থাপন করেন এবং তাদের একটি স্টেলথ ক্রুজ মিসাইল প্রকল্পে সাহায্য করতে থাকেন। তিনি ছয়বার চীনে যান এবং "Catch a Monkey" ছদ্মনামে বিভিন্ন প্রযুক্তিগত নকশা ও গোপন তথ্য আদানপ্রদান করেন। চীনা কর্তৃপক্ষকে তিনি এমন একটি নিঃসরণ নকশা সরবরাহ করেন, যা বি-২ বোমারুর মতোই রাডার ও ইনফ্রারেড থেকে অদৃশ্য থাকতে সহায়তা করে।
এই বিশ্বাসঘাতকতার বিনিময়ে তিনি প্রায় $১১০,০০০ ডলার আয় করেন, যা দিয়ে নিজের মাউই দ্বীপে অবস্থিত ৩.৫ মিলিয়ন ডলারের ভিলার ঋণ পরিশোধ করেন।
২০০৫ সালের অক্টোবরে এফবিআই তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে গোপন সামরিক তথ্য উদ্ধার করে। ২০১০ সালে হোনোলুলুতে অনুষ্ঠিত চার মাসব্যাপী বিচারে তাকে ১৪টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং ৩২ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
আজ কেন তার নাম আলোচনায়?
২০২৫ সালের মে মাসে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়, চীনের একটি সামরিক ঘাঁটিতে বি-২ বোমারুর মতো দেখতে একটি ড্রোন প্রস্তুত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি হয়তো সেই তথ্য থেকেই তৈরি, যা গোয়াডিয়া চীনের হাতে তুলে দিয়েছিলেন।
নোশির গোয়াডিয়া নিজেই স্বীকার করেছিলেন, “আমি যা করেছি তা গুপ্তচরবৃত্তি এবং দেশদ্রোহিতা, কারণ আমি চীনের সঙ্গে সামরিক গোপন তথ্য ভাগ করেছিলাম।”
মুমু ২