
ছবি: সংগৃহীত
স্ট্রোক—একটি ভয়ংকর স্বাস্থ্যঝুঁকি, যা মানুষের মস্তিষ্কে স্থায়ী ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। ব্রিটেনের এনএইচএসের মতে, ‘যখন মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়, তখন স্ট্রোক হয়। এর ফলে কথা বলা, নড়াচড়া করার মতো ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে এবং পুরোপুরি সেরে উঠতে সময় লাগে।’
তবে আশার কথা হলো, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় সচেতনতা বজায় রাখলে অনেক স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব। পুষ্টিবিদ ভেনেসা কিং বলেন, ‘সঠিক খাদ্যাভ্যাস কেবল স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায় না, বরং স্ট্রোকের পর পুনরুদ্ধারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।’
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘Eating Well’ জানিয়েছে, যারা ‘Alternative Healthy Eating Index’ অনুযায়ী স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খান, তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি প্রায় ৪০% কম।
চমকপ্রদ বিষয় হলো—স্ট্রোক প্রতিরোধে সহায়ক এসব খাবার কোনো দুষ্প্রাপ্য সুপারফুড নয়, বরং আমাদের রান্নাঘরেই থাকা সাধারণ খাবার। নিচে পাঁচটি খাবারের তালিকা দেওয়া হলো, যেগুলো নিয়মিত খেলে স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস পেতে পারে:
১. স্যামন মাছ
স্যামন হলো মস্তিষ্কের জন্য একপ্রকার সুপারফুড। এতে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং হৃদয়বান্ধব নানা পুষ্টি উপাদান, যা রক্তচাপ কমায় এবং রক্তনালীর স্বাস্থ্য রক্ষা করে।
পুষ্টিবিদ ভেনেসা জানান, ‘মাত্র তিন আউন্স রান্না করা স্যামনে রয়েছে দৈনিক প্রয়োজনীয় ভিটামিন বি-৬ এর ২৩% এবং বি-১২ এর ১০০%-এর বেশি।’ এই দুই ভিটামিন হোমোসিস্টেইন নামক একটি রাসায়নিকের পরিমাণ কমায়, যা স্ট্রোকের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান।
স্যামন সালাদে, স্যামন বেকড ডিশ বা নিওসাজ সালাদের সঙ্গে খাওয়া যেতে পারে।
২. ছোলা
ছোলায় রয়েছে উচ্চমাত্রার আঁশ ও প্রোটিন, যা মস্তিষ্কের জন্য উপকারী। এক কাপ ছোলায় রয়েছে হোমোসিস্টেইন কমানোয় সহায়ক ভিটামিন বি-৬ এর ১০%।
ছোলা সহজলভ্য এবং প্রিকুকড অবস্থায় পাওয়া যায়, যা স্যুপ, সালাদ, তরকারি ও স্ন্যাকসে অনায়াসে ব্যবহার করা যায়।
৩. সয়াভিত্তিক খাবার
অনেকেই ভুল ধারণা পোষণ করেন সয়া খেলে ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু পুষ্টিবিদ অ্যামি ব্রাউনস্টাইন বলেন, ‘সয়া প্রোটিন রক্তচাপ কমায়। এতে থাকা ফাইটোইস্ট্রোজেন ও আইসোফ্ল্যাভোন নামক যৌগ রক্তনালীগুলোকে শিথিল করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।’
যারা মাংস খান, তাদের নিয়মিত সয়া খেতে হবে না। বরং সপ্তাহে অন্তত একবেলা মাংসের পরিবর্তে সয়া-ভিত্তিক খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
৪. পালং শাক
পালং শাকে রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফলেট—এই তিনটি উপাদান মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাড়ায়।
ভেনেসা বলেন, “অর্ধ কাপ রান্না করা পালং শাক থেকে ফলেটের ভালো উৎস এবং ম্যাগনেশিয়ামেরও ভালো পরিমাণ পাওয়া যায়।’
Healthline-এর তথ্য অনুযায়ী, পালং শাক খাওয়ার পর শরীরে তৈরি হওয়া নাইট্রিক অক্সাইড রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
২০২১ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন অন্তত ৬০ মিলিগ্রাম ভেজিটেবল নাইট্রেট (যা এক কাপ শাকে পাওয়া যায়) গ্রহণ করলে ইসকেমিক স্ট্রোকের ঝুঁকি ১৭% কমে।
৫. কফি
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, কফি স্ট্রোক প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে।
অ্যামি ব্রাউনস্টাইন বলেন, ‘ক্যাফেইনের পাশাপাশি কফিতে রয়েছে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড নামক এক ধরনের পলিফেনল, যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।’ তবে কফিতে অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টি না দেওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা, কারণ চিনি স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
স্ট্রোক.অর্গ-এর তথ্যমতে, অতিরিক্ত চিনি রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা ডায়াবেটিসের মাধ্যমে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
নিয়মিত স্যামন, ছোলা, সয়া, পালং শাক এবং সীমিত মাত্রায় কফি গ্রহণ করলে মস্তিষ্ক সুস্থ থাকে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত থাকে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে। পাশাপাশি, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করাও জরুরি।
সূত্র: https://www.getsurrey.co.uk/news/health/reduce-stroke-lower-blood-pressure-31913989
রাকিব