
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস বা গেস্টেশনাল ডায়াবেটিস শুধুমাত্র মায়ের জন্যই নয়, গর্ভস্থ শিশুর জন্যও ভয়ংকর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এই অবস্থায় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে গর্ভধারণের শেষ পর্যায়ে শিশুর ওজন অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যেতে পারে, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানে ম্যাক্রোসোমিয়া (Macrosomia) নামে পরিচিত। এতে মা ও শিশুর উভয়ের স্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ে।
কেন বিপজ্জনক এই ডায়াবেটিস?
শিশুর অতিরিক্ত ওজন:
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে গর্ভের শিশুর ওজন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়, যা প্রসবের সময় জটিলতা তৈরি করে।
সিজারিয়ান ডেলিভারির ঝুঁকি বাড়ে:
ম্যাক্রোসোমিয়া হলে স্বাভাবিক প্রসব প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে, যার ফলে অধিকাংশ সময় সিজারিয়ান সেকশনের প্রয়োজন হয়।
শিশুর হাইপোগ্লাইসেমিয়া:
জন্মের পর শিশুর রক্তে গ্লুকোজ হঠাৎ করে অনেক কমে যেতে পারে, যা হাইপোগ্লাইসেমিয়া নামক বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করে।
জন্মের পর শিশুর মৃত্যুঝুঁকি:
গর্ভধারণের শেষ ৪–৮ সপ্তাহে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে শিশুর মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
অতিরিক্ত অ্যামনিওটিক ফ্লুইড:
গর্ভে পানি বা অ্যামনিওটিক ফ্লুইড বেড়ে গেলে তা পলি হাইড্রোমিনিয়াস নামে পরিচিত জটিলতার সৃষ্টি করে। এতে গর্ভফুল (placenta) সময়ের আগে আলাদা হয়ে যেতে পারে।
মায়ের উচ্চ রক্তচাপ ও খিঁচুনি:
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে গর্ভবতী মায়েরা একলাম্পসিয়া বা খিঁচুনিতে আক্রান্ত হতে পারেন, যা জীবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে যা করবেন:
✔️ গর্ভাবস্থায় নিয়মিত রক্তে গ্লুকোজ পরীক্ষা করুন
✔️ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়েট ও শারীরিক পরিশ্রম বজায় রাখুন
✔️ ইনসুলিন প্রয়োজন হলে তা নিয়ম মেনে গ্রহণ করুন
✔️ গর্ভকালীন প্রতিটি চেকআপ সময়মতো করুন
✔️ জন্মের পর শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করতে নিউনেটাল কেয়ারে রাখুন
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসকে অবহেলা করলে এর পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ। তাই মা ও গর্ভস্থ শিশুর নিরাপত্তার জন্য এই অবস্থাকে গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ ও নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা অত্যন্ত জরুরি। সুস্থ মা, সুস্থ সন্তান—এই লক্ষ্যেই সচেতন হোন।
মিমিয়া