ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৯ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসমাবেশ

সংস্কার বিচার ও পিআর পদ্ধতির নির্বাচন দাবি

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৫৮, ২৮ জুন ২০২৫

সংস্কার বিচার ও পিআর পদ্ধতির নির্বাচন দাবি

জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ ১৬ দফা দাবিতে শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলন আয়োজিত মহাসমাবেশে বক্তব্য রাখেন সৈয়দ রেজাউল করীম

সংস্কার, বিচার ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। শনিবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী ময়দানে আয়োজিত জাতীয় মহাসমাবেশে জুলাই অভ্যুত্থানকে অতীতের মতো ব্যর্থ হতে না দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। এ সময় ইসলামবিরোধী সকল ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের প্রতিবাদ জানান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এই নেতা। এই মহাসমাবেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, উলামায়ে কেরাম, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবীরা অংশ নেন। লাখো জনতার সমাবেশ থেকে ১৬ দফা দাবি জানানো হয়।  স্বৈরাচার হটাতে দেশের মানুষের আত্মত্যাগকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হয়। 
জুলাই অভ্যুত্থানে জীবনউৎসর্গকারী বীর যোদ্ধাদের স্মরণ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির  মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, দুর্নীতি-দুঃশাসনমুক্ত সমৃদ্ধ ও উন্নত রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য এ দেশের মানুষ শত বছর ধরে আত্মত্যাগ করে যাচ্ছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য রক্তের নজরানা পেশ করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২৪-এর জুলাই-আগস্টেও আরেকটি রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। আমাদের অতীতের আত্মত্যাগ বিফলে গেছে ভুল নীতি এবং অসুস্থ রাজনীতির কারণে।

সুতরাং জুলাই অভ্যুত্থানকেও আমরা অতীতের মতো ব্যর্থ হতে দিতে পারি না। আবু সাঈদ ও মুগ্ধরা আমাদের স্মৃতিতে অম্লান হয়ে আছে। আহতরা এখনো ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে। তাই প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কার এখনই করতে হবে। পতিত স্বৈরতন্ত্রের সঙ্গে জড়িতদের বিচার করতে হবে। 
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজন করার কোনো বিকল্প নাই। আজকের এই জনসমুদ্র পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের পক্ষের জনসমুদ্র উল্লেখ করে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ১৯৭২ সালে রচিত সংবিধান ছিল দেশের মানুষের বোধ-বিশ্বাস ও গণআকাক্সক্ষা বিরোধী। সেই সংবিধান রচয়িতাদের স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান রচনা করার ম্যান্ডেটই ছিল না। তারা ভিনদেশের সংবিধান অনুসরণ করেছিলেন। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। কোনোক্ষেত্রেই কাক্সিক্ষত সমৃদ্ধি ও উন্নতি হয় নাই।

রাজনৈতিক সংস্কৃতি কলুষিত হয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো, সংবিধান মেনেই স্বৈরাচার তৈরি হয়েছে। এ জন্যই আমরা সংস্কারের প্রশ্নে অটল-অবিচল ও আপোষহীন অবস্থান নিয়েছি।
এদিকে শনিবার সকাল থেকেই সারাদেশের মানুষ মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে জড়ো হতে থাকে। সড়কে মিছিল, গাড়িতে স্লোগানে তাদের মুখর থাকতে দেখা যায়। সবার হাতেই ছিল দলটির নির্বাচনী মার্কা হাতপাখা। সেকারণে এই মহাসমাবেশকে নির্বাচনী প্রচারের বড় অংশ হিসেবেও আখ্যা দেন। তবে দুপুর নাগাদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হাত পাখা আর সাদা পোশাকের জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
জুলাই অভ্যুত্থানের প্রধান লক্ষ ছিলো দেশকে স্বৈরাচারের হাত থেকে রক্ষা করা উল্লেখ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির বলেন, ৫৪ বছরের জমা হওয়া জঞ্জাল দুর করতে অভ্যুত্থানের পরে সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। আমরা মতামত দিয়েছি। এখন সংস্কার নিয়ে দ্বিতীয় দফা আলোচনা চলছে। আমরা লক্ষ্য করছি, মৌলিক সংস্কারে কেউ কেউ গড়িমসি করছেন। এটা জুলাইয়ের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা। স্বৈরাচার  তৈরি রাস্তা খোলা রাখা যাবে না। সংস্কার না করেই নির্বাচন আয়োজন করে দেশকে আবারও আগের অবস্থায় নিয়ে যাওয়া যাবে না। রাষ্ট্রের মূলনীতিসহ সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের মতো বিষয়ে ঐকমত্য না হলে গণভোটের আয়োজন করতে হবে।
পতিত ফ্যাসিস্ট জুলুমের রাষ্ট্র তৈরি করেছিল এবং হাজার হাজার মানুষকে গুম ও খুন করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা দেশ থেকে চুরি করে নিয়ে গেছে। লাখো মানুষকে কারাবন্দি করেছে । চাঁদাবাজি করে মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করেছে। আর ২৪ এর জুলাইয়ে তো প্রকাশ্যে গণহত্যা করেছে। ফলে তাদের কোনো ক্ষমা নাই। যারা সরাসরি ফৌজদারি অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের বিচার করতে হবে। যারা অপরাধে সহায়তা করেছে, তাদেরও বিচার করতে হবে।
তিনি বলেন, বিচারের ক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রগতি হলেও পতিত সরকারের অধিকাংশ মন্ত্রী-এমপি এবং নেতারা এখনো জেলের বাইরে আছে। অনেকেই দেশের বাইরে থেকে উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে। আজকের এই মহাসমাবেশ থেকে ঘোষণা করছি, অবিলম্বে ফ্যাসিবাদের সঙ্গে জড়িত সকলকে শাস্তির আওতায় আনতেই হবে। সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে অতীতের মতোই বাতাসে নানা রকম কথা ভাসছে। আমরা আমাদের চোখ কান খোলা রেখেছি। যোগ্যদের বাদ দিয়ে যদি তথাকথিত ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদদের’ নিয়োগ দেওয়া হয়, তা কারও জন্যই সুখকর হবে না। 
দেশের সকল মানুষের ভোটের দাম সমান মনে করিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির বলেন, কারও ভোট যাতে অবমূল্যায়ন না হয়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। তাই আগামী নির্বাচনে সংসদের উভয়কক্ষে অবশ্যই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে। যে দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সংসদে তাদের সেই অনুপাতে আসন থাকবে। এই পদ্ধতিতে রাষ্ট্র পরিচালনায় সকলের মতের প্রতিফলন ঘটবে। কোনো দল জালেম হওয়ার সুযোগ পাবে না। এটা জেনজির দাবি। এটা এখন জনগণের দাবি। দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের দাবি। সকল ধর্মের মানুষেরও দাবি। 
তিনি বলেন, আমরা বারবার রক্ত দিয়েছি, কিন্তু সফলতা পাই নাই। কারণ, আমরা প্রতিবারই নেতা ও নীতি বাছাই করতে ভুল করেছি। আমরা ৫৪ বছরে অনেক দলকে দেশ শাসন করতে দেখেছি। কিন্তু ইসলামকে এখনো ক্ষমতায় নিতে পারি নাই। এবার ইসলামপন্থিদের ঐক্যের ব্যাপারে গণপ্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। আগামী নির্বাচনে শুধু ইসলামী দলই নয়, বরং দেশপ্রেমিক আরও অনেক রাজনৈতিক দলও একবাক্স নীতিতে আসতে পারে, ইনশা আল্লাহ। যদি আমরা একত্রে নির্বাচন করতে পারি, যদি কার্যকর ঐক্য গড়ে তুলতে পারি, তাহলে বাংলাদেশে ইসলামপন্থিরাই হবে প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব আমাদের হাতেই আসবে 
অন্তবর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সংস্কার, বিচার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের যে অঙ্গীকার নিয়ে আপনারা দায়িত্ব নিয়েছেন, সেই দায়িত্ব পালনে অবিচল থাকুন। কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হবেন না। নিরপেক্ষ থেকে দায়িত্ব পালন করুন। আমরা আপনাদের পাশে ছিলাম, আছি এবং থাকব ইনশা আল্লাহ।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, রাজনৈতিক চরিত্র, চাঁদাবাজির ক্ষেত্রে অবস্থার এখনো কোনো পরিবর্তন হয়নি জানিয়ে তিনি একটি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ  তোলেন। তিনি বলেন, কারও নাম ধরে সমালোচনা করতে চাই না। তবে পুরানো রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি জিইয়ে রাখার চেষ্টা সহ্য করা হবে না। রাজনীতির নামে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজীকে অবশ্যই প্রতিহত করা হবে, ইনশা আল্লাহ। আমাদের প্রধান লক্ষ্য হবে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং গণমানুষের জীবনমান উন্নত করা। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ দেশ গড়ে তোলা। মানুষের বিশ্বাস ও চিন্তার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
কৃষক ও  শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, অতীতে কেউ আপনাদের স্বার্থ রক্ষা করে নাই। আপনাদের শ্রম ও ঘামের প্রকৃত মূল্য কেউ দেয় নাই। ইসলামী শক্তি ক্ষমতায় এলে আপনাদের স্বার্থ নিশ্চিত করা হবে। একই সঙ্গে 
ব্যবসায়ীদের জন্য তিনি বার্তা দেন। জেন-জি তরুণদের উদ্দেশ্যে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, তোমরা আমাদের ভবিষ্যৎ। তোমাদের সম্ভাবনা বিকাশের জন্য আমরা ওয়াদাবদ্ধ। আমি আমার প্রিয় তরুণ-যুবকদের আশ্বস্ত করতে চাই, আগামীর বাংলাদেশে তোমরাই হবে মূল শক্তি । ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তার ব্যবস্থা করবে ইনশা আল্লাহ।

তোমাদের জীবনের প্রথম ভোট হোক সত্যের পক্ষে, কল্যাণের পক্ষে, ইসলামের বাক্সে। যদি তোমরা এটা করতে পারো, এ দেশকে আমরা গড়ে তুলবই ইনশা আল্লাহ। আমাদের কেউ দমাতে পারবে না ইনশা আল্লাহ। আমরা কথা দিচ্ছি, আমাদেরকে দায়িত্ব দিলে দুর্নীতি ও দুঃশাসনমুক্ত একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ তোমাদের উপহার দেব ইনশা আল্লাহ। সেই সঙ্গে প্রবাসী ও উলামায়ে কোরামের প্রতিও তিনি বার্তা রাখেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি ও সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক চায় জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সহযোগিতামূলক সম্পর্ক চাই। নিরাপদ সম্পর্ক চায়। তবে কোনো আগ্রাসী মনোভাব, অবৈধ হস্তক্ষেপ বা চোখ রাঙানি প্রত্যাশা করে না। বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, উপজাতি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং মুসলমান, সকলে মিলেই আমরা বাংলাদেশি। এই দেশ আমাদের সকলের। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সবার জন্য সমান সুযোগ ও মর্যাদা প্রদান করা আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গীকার। 
তিনি বলেন, নারীরা আমাদের জনশক্তির অর্ধেক। দেশগঠনে নারীদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নারীর স্বাধীনতা, সম্মান ও অধিকার নিশ্চিত করতে চায়। আমরা নারীর প্রতি কোনো প্রকার সহিংসতা বরদাশত করবো না। নারীকে পণ্য বানাতে দেব না। নারীর প্রকৃত মর্যাদা সমুন্নত করাই আমাদের পবিত্র দায়িত্ব। এ মহাসমাবেশ থেকে ফিলিস্তিনি জনতার প্রতি পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করা হয়।
আজ পর্যন্ত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কখনো অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করে নাই। শর্টকাট পথে ক্ষমতায় যেতে চায় নাই। নীতি বিসর্জন দেয় নাই জানিয়ে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, সবকিছুর উর্ধে আমরা ইসলাম, দেশ ও জনগণের স্বার্থকে প্রধান্য দিয়েছি। আগামীতেও আমরা জনপ্রত্যাশাকে পূরণ করতে চাই। আপনারা অনেক ঘাম ঝরিয়েছেন, অনেক সময় দিয়েছেন। অনেকে রক্ত দিয়েছেন, জীবন দিয়েছেন।

আপনাদের কোরবানির বদৌলতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আজ গণমানুষের শক্তিশালী রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। এখন সময় ফসল ঘরে তোলার। সুতরাং মহাসমাবেশ থেকে ফিরে গিয়েই কমিটিগুলোকে আরও সক্রিয় করুন। গ্রাম-মহল্লা ও ভোট কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করুন। সকল ভোটারের কাছে গিয়ে দাওয়াত দিন। তাদের সামনে ইসলামের সৌন্দর্য ও শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরুন। সকল ধর্ম, মত ও পথের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করুন। সকল পেশাজীবিদের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করুন। 
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তাদের মহাসমাবেশ থেকে দেশে রাজনৈতিক সংস্কার, বিচার বিভাগে স্বচ্ছতা ও পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে ১৬ দফা দাবি উত্থাপন করে। রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত মহাসমাবেশে ইসলামী আন্দোলনের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান ‘মহাসমাবেশের ঘোষণাপত্র’ পাঠ করেন।

মহাসমাবেশকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ধিত অংশ ও আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে একটি গৌরবময় মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ঘোষণাপত্রে বলা হয়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা বাস্তবায়ন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং স্বৈরতন্ত্র রোধে র সংস্কার প্রস্তাবনাগুলো সক্রিয় বিবেচনায় নিতে আহবান জানানো হয়। 
ঘোষণাপত্রে উত্থাপিত ১৬ দফা দাবিসমূহ হলো- সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ রাষ্ট্র পরিচালনার মূল নীতিরূপে পুনঃস্থাপন। সংসদের উভয় কক্ষে সংখ্যানুপাতিক পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন। জুলাই সনদের ঘোষণা ও শোষণমুক্ত রাষ্ট্র বিনির্মাণে জাতীয় ঐকমত্য। ভবিষ্যৎ স্বৈরাচার ও দলীয় কর্তৃত্ববাদ রোধে মৌলিক রাষ্ট্র সংস্কার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রশাসনে ফ্যাসিবাদী প্রভাবমুক্ত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা। পতিত ফ্যাসিবাদের বিচার ও পালাতক অপরাধীদের ফিরিয়ে আনার কূটনৈতিক পদক্ষেপ।

পাচারকৃত অর্থ উদ্ধার ও দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও খুন-খারাবি রোধে প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা। ভারতের সঙ্গে করা সব চুক্তি প্রকাশ ও দেশবিরোধী চুক্তির বাতিল। জাতীয় নির্বাচনের আগে সব পর্যায়ে স্থানীয় নির্বাচন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধান প্রণয়ন। দুর্নীতিবাজ, ঋণখেলাপি ও সন্ত্রাসীদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিবেশ নিশ্চিত করা।

ঘুষ-দুর্নীতি ও রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা বন্ধ এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার। ইসলাম ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ববিরোধী কর্মকা-ে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ। জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে দুর্নীতিবাজ ও চাঁদাবাজদের প্রতিহত করা। রাষ্ট্রের সর্বস্তরে ইসলামের আলোকিত আদর্শ বাস্তবায়নের আহ্বান।
ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত মহাসমাবেশে বাংলাদেশ জাময়াতে ইসলামীর সেক্রেরেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘সমস্ত ইসলামী দল, ব্যক্তি, সংগঠনের মধ্যে মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও আজ যে ঐক্যের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, সৈয়দ ম্মদ রেজাউল করীমের আহ্বানে আজ এই ঐতিহাসিক মহাসমাবেশে যারা বসে আছেন, তারাই হচ্ছেন এই ঐক্যের মহাকা-ারী।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাকে বলতে চাই আপনি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যেটা হয়েছে, তার চেয়ারম্যান। আপনি জাতির কাছে নিরপেক্ষ থাকার অঙ্গীকার করেছেন। আপনার অঙ্গীকারের প্রতি আপনি সাবধান থাকবেন। আপনার কোনো কোনো ভূমিকায় জাতির মধ্যে কিন্তু সংশয় তৈরি হয়েছে। পরিষ্কার বলতে চাই, আপনি সোজা থাকবেন। আমরা আমাদের জন্য, কোনো দলের জন্য পক্ষপাতিত্ব চাই না। দুই হাজার ছাত্র-জনতার জীবন, হাজার হাজার মানুষের রক্ত আমরা ব্যর্থ হতে দেব না। জাতির যে দাবি উচ্চকিত হয়েছে, নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সেটা নিশ্চিত করতে হবে। 
তিনি বলেন, আপনি (প্রধান উপদেষ্টা) জাতির উদ্দেশে ভাষণে একটা কথা বলবেন, সরকার প্রধান হিসেবে একটা কথা বলবেন, রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে একটা কথা বলবেন, পরে একটা দলের সঙ্গে আলোচনায় গিয়ে সেই কথা ভুলে যাবেন, এতে নিরপেক্ষতা ভঙ্গ হয়েছে। আপনি সোজা থাকুন। রাজনৈতিক সংলাপে আপনি দোষ করেননি। বৈঠক করার অধিকার সবার আছে। কিন্ত, এক জায়গায় কথা বলে মত পরিবর্তন করবেন কেন?

আপনাকে জাতির সামনে আসতে হবে, সব দলের সঙ্গে বসে আপনি বলবেন, আমাদের এই অসুবিধা, আসুন আমরা সবাই মিলে এইটা করি, আমরা রাজি আছি। কিন্তু, আপনার এই ভূমিকায় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আগামী ৮/১০ মাস পরে যদি নির্বাচন হয়, আপনি সোজা থাকবেন কিনা, সেটার প্রমাণ আপনাকে দিতে হবে। 
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আজকের এই সমাবেশ থেকে, এই জনসমুদ্র থেকে এই বার্তা আপনাদের বুঝতে হবে, পিআর পদ্ধতি ছাড়া বাংলাদের মানুষ নির্বাচন গ্রহণ করবে না। একটা দল বলছে, সরকার গঠনের পর সংস্কার। কীভাবে বুঝলেন আপনারা ক্ষমতায় যাবেন। জনগণের ভোট আগে পান, তারপর ক্ষমতায় যাবেন।

আরো পড়ুন  

×