ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ: প্রতিদিন তিনটি করে খেতে হবে যে ফল

প্রকাশিত: ১৬:০৬, ২৮ জুন ২০২৫

ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ: প্রতিদিন তিনটি করে খেতে হবে যে ফল

ছবি: প্রতীকী

ডায়াবেটিস বা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সে ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের জন্য রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—এমন পরামর্শই দিয়েছে ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন (BHF)। কারণ মাত্রাতিরিক্ত গ্লুকোজ শরীরের কোষে শক্তি জোগালেও দীর্ঘমেয়াদে তা হার্ট, কিডনি এবং চোখের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।

BHF জানায়, উচ্চ রক্তচাপ বা ব্লাড সুগারের উপসর্গ খুব সহজে বোঝা যায় না। সাধারণত উপসর্গ দেখা দেয় যখন ডায়াবেটিস পুরোপুরি বিকাশ লাভ করে। তাই আগেভাগেই সতর্ক থাকা জরুরি।

সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন মাত্র তিনটি খেজুর খাওয়ার অভ্যাস বেশ কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি হ্রাসে সহায়ক হতে পারে।

গবেষণায় কী উঠে এসেছে?

২০২০ সালে ১০০ জন টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীর উপর একটি র‍্যান্ডমাইজড কন্ট্রোল ট্রায়াল চালানো হয়। এদের মধ্যে অর্ধেককে প্রতিদিন তিনটি করে খেজুর খেতে বলা হয়, বাকিরা খেজুর খাননি। গবেষণায় দেখা গেছে, খেজুর খাওয়ার ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রায় তেমন পার্থক্য দেখা না গেলেও, কোলেস্টেরলের ক্ষেত্রে তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।

খেজুর খাওয়া ব্যক্তিদের মোট কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়ে। গবেষকদের মতে, খেজুরের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় এটি রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

চিকিৎসকের পরামর্শ

ব্রিটিশ চিকিৎসক ড. আমির খান ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক ভিডিওতে জানান, ‘গত এক বছর ধরে আমি প্রতিদিন তিনটি করে খেজুর খাচ্ছি। এটি দীর্ঘমেয়াদে রক্তে গ্লুকোজ ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না, এমনকি ডায়াবেটিকদের ক্ষেত্রেও নয়।’

তিনি পরামর্শ দেন, পরিশোধিত চিনি বাদ দিয়ে প্রাকৃতিক মিষ্টি হিসেবে খেজুর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে।

খেজুর শুধু একা খাওয়াই নয়, এটি ওটস, বাদাম বা লেন্টিল সালাদের সঙ্গে মিশিয়েও খাওয়া যায়। অনেকে আবার পিনাট বাটার বা ডার্ক চকলেটের সঙ্গে খেজুর খেয়ে থাকেন।

আরও কিছু উপকারিতা

১. গর্ভাবস্থা ও সন্তান জন্মে সহায়তা:

গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্থার শেষ দিকে খেজুর খেলে প্রসবকালীন সময় কমে এবং সিজার বা কৃত্রিমভাবে সন্তান জন্মদানের প্রয়োজন কমতে পারে। এতে থাকা কিছু যৌগ অক্সিটোসিন হরমোনের মতো কাজ করে, যা গর্ভে সংকোচন সৃষ্টি করতে সাহায্য করে।

পুরুষদের জন্য খেজুর স্পার্ম কাউন্ট ও মটিলিটি বাড়াতে পারে। নারীদের ডিম্বাণুর গুণগত মান এবং হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করতেও ভূমিকা রাখতে পারে।

২. হজম ও অন্ত্রের স্বাস্থ্যে সহায়ক:

খেজুরে প্রচুর আঁশ থাকে, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের প্রাপ্তবয়স্কদের গড় আঁশ গ্রহণের পরিমাণ দৈনিক ১৮ গ্রাম, যেখানে ন্যূনতম চাহিদা ৩০ গ্রাম। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দিনে একবারে খেজুর, কিসমিস, শুকনো ডুমুর ইত্যাদি খাওয়ার পরামর্শ দেন।

৩. অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ:

খেজুরে রয়েছে পলিফেনল, ক্যারোটিনয়েড ও লিগন্যানসের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা দীর্ঘমেয়াদি নানা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

তাহলে প্রতিদিন তিনটি খেজুর?

ড. খান বলেন, প্রতিদিন ২-৩টি খেজুর খাওয়া নিরাপদ এবং পুষ্টিকর খাদ্য তালিকার অংশ হিসেবে গ্রহণ করা যায়। তবে অতিরিক্ত খেলে তা ডায়রিয়া বা শর্করা ও ক্যালোরির মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ডায়াবেটিস রোগীরা প্রতিদিন ১-২টি খেজুর খেতে পারেন—তবে নিজের শারীরিক অবস্থা, ওষুধ এবং ডায়েট অনুযায়ী তা নির্ধারণ করতে হবে। প্রক্রিয়াজাত খেজুরজাত পণ্য, যেগুলোতে বাড়তি চিনি যোগ করা হয়, সেগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো।

 

সূত্র: https://www.getsurrey.co.uk/news/health/eating-three-one-fruit-every-31914656?int_source=nba

রাকিব

×