নিজের টাকা তিন ব্যাংকে রাখেন, কেন? এআই এর ভয়াবহতা ব্যাখ্যা করলেন প্রযুক্তির জনক

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তির অন্যতম পথিকৃৎ ও ‘গডফাদার অব এআই’ হিসেবে পরিচিত কম্পিউটার বিজ্ঞানী জিওফ্রে হিন্টন বলেছেন, এই প্রযুক্তি দিন দিন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে—এবং এর ঝুঁকি মানুষ যতটা সিরিয়াসলি নেওয়া উচিত, ততটা নিচ্ছে না।

“এআই-এর ঝুঁকির বড় অংশ আসে এর অপব্যবহার থেকে, আর এসবই স্বল্পমেয়াদি ঝুঁকি। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে বিপদ আরও বড়—যদি এআই এতটাই বুদ্ধিমান হয়ে ওঠে যে, বুঝে ফেলে আমাদের আর প্রয়োজন নেই,” বলেন হিন্টন, যিনি এক সময় গুগলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং ২০১৮ সালে টিউরিং অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন এআই ও ডিপ লার্নিং নিয়ে অগ্রগামী কাজের জন্য। তিনি এই মন্তব্য করেন “The Diary of a CEO” পডকাস্টে।

এআই এখন দ্রুত বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে। শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করছে চ্যাটজিপিটি, কর্পোরেট দুনিয়ায় CEO-রা কর্মীদের এআই ব্যবহার বাধ্যতামূলক করছেন, এমনকি প্রযুক্তি জগতের বড় নাম মার্ক কিউবান ও জেনসেন হুয়াং বলছেন—এআই-ই শিগগির নির্ধারণ করবে কোন কর্মচারী বা প্রতিষ্ঠান সফল হবে, আর কে ব্যর্থ।

তবে এআই তৈরি করা প্রকৌশলীরা নিজেরাও এখনও পুরোপুরি জানেন না, এটি কীভাবে কাজ করে বা কীভাবে বিকশিত হয়। এ কারণেই অনেকেই এআই-এর ভবিষ্যৎ নিয়ে দ্বিধায় ভুগছেন—কেউ আশঙ্কা করছেন প্রযুক্তিগত বিদ্রোহের, যেখানে এআই মানুষের স্থান দখল করবে, আবার কেউ এসব কথা উড়িয়ে দিচ্ছেন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী বলে।

৭৭ বছর বয়সী হিন্টন বলেন, “আমি বলি, এআই আমাদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার ১০ থেকে ২০ শতাংশ সম্ভাবনা আছে। এটা আমার একধরনের অনুভূতির ভিত্তিতে বলা, কারণ আমরা এখনও এগুলো তৈরি করে চলেছি এবং মানুষ অনেক উদ্ভাবনী। আশা করি, যদি যথেষ্ট মেধাবী মানুষ পর্যাপ্ত গবেষণা ও সম্পদ নিয়ে এগিয়ে আসে, তবে আমরা এমনভাবে এআই তৈরি করতে পারব যাতে তারা কখনোই আমাদের ক্ষতি করতে না চায়।”

স্বল্পমেয়াদি ঝুঁকির দিক থেকে হিন্টন বলেন, এআই তথাকথিত “হ্যালুসিনেশন”-এর শিকার হয়—মানে এমন তথ্য তৈরি করে, যা আদতে ভুল বা কাল্পনিক। এ ছাড়া, এআই দিয়ে সহজেই তৈরি করা যায় ভুয়া ছবি, ভিডিও ও অডিও।

এ প্রযুক্তি ইতোমধ্যেই অনেক হোয়াইট-কলার খাতে এন্ট্রি-লেভেলের চাকরি অটোমেশনের পথে এগোচ্ছে, যদিও কিছু প্রযুক্তি নেতা বলছেন—এআই শেষমেশ চাকরি কাড়বে না, বরং আরও চাকরি সৃষ্টি করবে।

এআই-ভিত্তিক প্রতারণাও বাড়ছে, বলছেন ক্রিপ্টো ফরেনসিক ফার্ম CoinStructive-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ক্রিস গ্রোশং ও জোসেফ আলবিনানা। তারা Forbes-কে বলেন, এআই দিয়ে ঠোঁটের সাথে কথা মিলিয়ে ভিডিও বানানো, ভুয়া ফার্মওয়্যার তৈরি কিংবা ভিডিও চ্যাটে অন্যের রূপ ধারণ করে প্রতারণা করা এখন খুব সহজ। আর এতে প্রতারিত ব্যক্তিরা তাদের ব্যক্তিগত ও আর্থিক তথ্য ভাগ করে ফেলেন।

হিউম্যানিটি এখন এক ‘নির্ধারণী মোড়ে’ দাঁড়িয়ে, এমন মন্তব্য করেন হিন্টন সিবিএস-এর ‘60 Minutes’-এ ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে। তিনি বলেন, “আমার মূল বার্তা হচ্ছে—এখানে বিশাল অনিশ্চয়তা রয়েছে, ভবিষ্যতে কী হবে তা কেউ জানে না।”

ভবিষ্যতের এআই-এর জন্য প্রস্তুতি

হিন্টন ২০২৩ সালের মে মাসে গুগল ছেড়ে দেন, যেন এআই-এর ঝুঁকি নিয়ে স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারেন। তিনি তখন The New York Times-কে বলেন, সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি নিশ্চিত নয়, বরং স্বাস্থ্যসেবা খাত ইতোমধ্যেই এআই থেকে বিপুল উপকার পেয়েছে।

তিনি ‘60 Minutes’ সাক্ষাৎকারে বলেন, এআই বুঝতে আরও গবেষণা প্রয়োজন, এর লাগাম টানতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে এবং এআই-চালিত সামরিক রোবটের ওপর বিশ্বব্যাপী নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে। হিন্টনের মতে, এসব সুরক্ষা ব্যবস্থা—যা-ই হোক না কেন—তা দ্রুতই কার্যকর করতে হবে, তা প্রযুক্তি কোম্পানিই করুক, মার্কিন সরকার অথবা বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্র।

সোমবারের পডকাস্টে হিন্টন বলেন, এআই-ভিত্তিক প্রতারণা থেকে রক্ষা পেতে কিছু করণীয় হলো:

• আপনার অর্থ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে রাখুন

• নিয়মিতভাবে আপনার ডেটা বাইরের হার্ড ড্রাইভে ব্যাকআপ নিন

তিনি বলেন, “যদি প্রতারণার শিকার হন, তাহলে অন্তত সব কিছু হারাবেন না—সামান্য ক্ষতি হবে এবং আপনি দ্রুত আপনার কম্পিউটার ও মোবাইল ফেরত পাবেন।”

নিজের টাকাও তিনি তিনটি ভিন্ন ব্যাংকে রাখেন বলে জানান।

আরও ব্যাপকভাবে চিন্তা করলে, সম্পদ বিচিত্রকরণ (diversification) যে কোনো সময়েই বুদ্ধিমানের কাজ, বলেন আর্থিক বিশ্লেষক ও ব্যক্তিগত অর্থ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ক্রিস ব্রাউনিং।

তিনি CNBC Make It-এ প্রকাশিত এক লেখায় বলেন, আপনার টাকা পাঁচটি আলাদা অ্যাকাউন্টে রাখুন:

• বিল পরিশোধের জন্য এক চেকিং অ্যাকাউন্ট

• দৈনন্দিন খরচের জন্য আরেকটি চেকিং অ্যাকাউন্ট

• তিনটি সেভিংস অ্যাকাউন্ট—দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয়, স্বল্পমেয়াদি সঞ্চয় এবং জরুরি ফান্ডের জন্য।

ব্রাউনিং লেখেন, “চেষ্টা করুন যেন সব অ্যাকাউন্ট একই ব্যাংকে না থাকে। যদি একটিতে প্রযুক্তিগত সমস্যা হয়, তাহলে বাকিগুলোতে নির্ভর করতে পারবেন।”