
গত ১৩ জুন শুরু হওয়া ইরান-ইসরাইল যুদ্ধের ১২ দিন পর অবশেষে তা যুদ্ধবিরতির পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ যুদ্ধবিরতিকে সাময়িক হিসাবে ধরে নেওয়া যায়। কেননা তা লঙ্ঘনের স্পষ্ট আলামত ও উপাদান এখনো বিদ্যমান। ইরানের ওপর আক্রমণ শানাতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু অনেক লুকোচুরির খেলা খেলেছেন। ক্ষণে ক্ষণে কথার পরিবর্তন করেছেন। তাই যুদ্ধের উত্তেজনা থেকেই যাচ্ছে।
বিনা উসকানিতে এ যুদ্ধ প্রথমে শুরু করে ইসরাইল। তাই বলা চলে ইসরাইল আগ্রাসনকারী দেশ আর ইরান প্রতিরোধকারী। ১৩ জুন একেবারে প্রথম প্রহরে ইসরাইল ইরানের পরমাণু ও বিভিন্ন সামরিক স্থাপনার ওপর হামলা শুরু করে। হত্যা করে ফেলা হয় ইরানি সামরিক বাহিনীর প্রধানসহ বিভিন্ন সামরিক শাখার বিশ জনেরও অধিক প্রধান প্রধান জেনারেলদের। হত্যা করা হয় কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানীদের। আশ্চর্যের বিষয় হলো অকস্মাৎ এত বড় ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও মাত্র ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যেই ইরান ইসরাইলের ওপর মিসাইল বৃষ্টি বর্ষণ করতে সক্ষম হয়। ইরানের এমন পাল্টা হামলা ইসরাইলকে বিস্মিত করে তোলে। এতে স্পষ্ট হয় যে ইসরাইল ভুল হিসাব-নিকাশ কষেছিল। পরবর্তী দিনগুলোতে যুদ্ধের গতি ও মাত্রা যতই তীব্র হয়েছে ইসরাইলের অসহায়ত্ব ততই ফুটে উঠেছে। শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের সাহায্যে এগিয়ে এসে ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় বোমাবর্ষণ করে। ইরান এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় কাতার ও ইরাকে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু করে। এই প্রণালি দিয়েই বিশ্বের শতকরা ২০ ভাগ তেল পরিবহন করা হয়। এমতাবস্থায় যুদ্ধের বিস্তৃতি রোধ ও বিশ্ব বাণিজ্যের বিপর্যয়কর ধাক্কা সামলাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর মত ও মনোভাব পরিবর্তন করেন। ফলে ইরানের ওপর চাপানো অন্যায় যুদ্ধের সাময়িক বিরতি ঘটে।
১২ দিনের এ যুদ্ধে ইরানের সামরিক ও আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বেশি। কিন্তু ইরান তার দূরপাল্লার মিসাইল ব্যবহার দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পেরেছে। ইরান সেইসঙ্গে আরব দেশগুলোসহ বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিয়েছে যে ইসরাইল কোনো অজেয় শক্তি নয়। ইসরাইলকেও আঘাত করে গাজার মতো ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে ফেলা যায়। ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্মিলিত শক্তি ইরানের বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর পরিবর্তনের (রিজিম চেঞ্জের) যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল তাও থেকে গেল অধরা। এমনকি তারা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করতেও ব্যর্থ হয়েছে। পারমাণবিক বোমা তৈরি করা যায় এমন সমৃদ্ধ ইউরোনিয়াম সম্ভবত ইরান আগে থেকেই লুকিয়ে ফেলেছে। কিংবা এ ধরনের ইউরেনিয়ামের মজুদ আসলে ইরানের কাছে ছিলই না। কেননা এমন সমৃদ্ধ ইউরোনিয়াম আক্রান্ত হওয়া পরমাণু স্থাপনা তিনটিতে যদি সত্যিই থাকত তাহলে এর ধ্বংসাবশেষ থেকে সৃষ্ট তেজস্ক্রিয়তায় লাখ লাখ লোকের প্রাণহানি ঘটতো। কিন্তু মার্কিন হামলায় এ ধরনের তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েনি। এখন ইরান পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি (এনপিটি) থেকে বের হয়ে যেতে চাইবে। ফলে আগামী দিনে ইরান সত্যিই পরমাণু বোমা তৈরির গোপন কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে।
বস্তুত ইসরাইল-যুক্তরাষ্ট্র উভয়ে মিলে ইরানের ওপর আক্রমণ পরিচালনা করে তা থেকে তেমন কিছুই অর্জন করতে পারেনি। বরং এতে একদিকে যেমন ইসরাইলের সামরিক অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে, অন্যদিকে তেমনি প্রমাণিত হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র আর বড় আকারের যুদ্ধব্যয় নির্বাহ করতে সক্ষম নয়। যুক্তরাষ্ট্রের এ অক্ষমতা গত ২০ বছরের আফগান যুদ্ধেই ফুটে উঠেছিল। আফগান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ একেবারে জলে গিয়েছিল। আফগান যুদ্ধ ব্যয়ের কারণেই ২০০৭-০৮ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু সে সময় এর বিপরীতে চীনা অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার ডাবল ডিজিটের উপরে অবস্থান করতে থাকে। সেই থেকে শুরু হওয়া চীনের অর্থনৈতিক উত্থানকে যুক্তরাষ্ট্র আর কখনই লাগাম টেনে ধরতে পারেনি। এখন ডোনাল্ড ট্রাম্প যতই বলছেন ‘মেক আমেরিকা গ্রেট আ্যগেইন’ কিন্তু সে অনুযায়ী কাজ হচ্ছে না। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর যে অতিরিক্ত আমদানি শুল্ক আরোপ করেছিলেন তা থেকেও সরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বেশ বুঝতে পারছেন চাইলেই বিশ্বব্যবস্থাকে আর পেছনে ফেরানো সম্ভব নয়। কিন্তু তা সত্বেও যুক্তরাষ্ট্র পুরনো নীতি অনুসরণ করতে যেয়ে সেই অনন্তকালের যুদ্ধে জড়িয়ে যাচ্ছে। বস্তুত যুক্তরাষ্ট্র যখন রণতরী থেকে যুদ্ধবিমান উড়াচ্ছে, এর বিপরীতে চীন তখন বিশ্বের নানা বন্দরে পণ্য বোঝাই বাণিজ্য জাহাজ ভেড়াচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র যখন ইসরাইল-ইরান যুদ্ধে নিজেকে জড়িয়ে মহাব্যস্ত, চীন ঠিক সেসময় (১৬-১৮ জুন ২০২৫) কাজাখস্তানের আস্তানায় মধ্য এশিয়ার পাঁচটি দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব ও কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপন নিয়ে মহানিমগ্ন।
এবারের এই ইরানের ওপর হামলা করতে যেয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার পুরনো মিত্রদের একচেটিয়া সমর্থন লাভে ব্যর্থ হয়েছে। দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ যখন আফগানিস্তান ও ইরাক আক্রমণ করেছিলেন সেসময় প্রায় ৫০টি মিত্র দেশ সরাসরিভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী হয়েছিলো। কিন্তু এবার যুক্তরাষ্ট্রকে তার পরম মিত্র ইউরোপীয় দেশগুলোও অকুণ্ঠ সমর্থন দেয়নি। আরব রাষ্ট্রগুলো ছিল বিরক্ত ও বিব্রত। এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের দুই বন্ধু দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান এবারের ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে পর্যবেক্ষক সদস্য হিসাবে যোগদান করা থেকে শেষ মুহূর্তে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। এ সিদ্ধান্ত তারা নেয় ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ থেকে সৃষ্ট উত্তেজনার কারণে। এদিকে জাতিসংঘ মহাসচিবও ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণকে সরাসরি নিন্দা জানিয়েছেন। এটিও এক বিরল ঘটনা। সুতরাং ইসরাইলের দ্বারা তাড়িত ও উদ্বুদ্ধ হয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে যেভাবে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়েছেন তা যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের মধ্যেই বিভক্তি সৃষ্টি করেছে। এছাড়া ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজ দেশেও হয়েছেন যথেষ্ট সমালোচিত ও বিরোধিতার সম্মুখীন। বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে আলোচনার টেবিলে বসিয়ে রেখে যেভাবে অকস্মাৎ ইসরাইলকে দিয়ে হামলা করিয়েছেন তা যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বব্যাপী নিন্দিত দেশে পরিণত করেছে। প্রাচীন কিংবা মধ্যযুগেও কোনো রাজদূতকে কিম্বা সন্ধি আলোচনার বৈঠককে যথেষ্ট সমীহ ও সম্মান জানানো হতো। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই প্রাচীন রীতিনীতিও লঙ্ঘন করে নিজেকে অসংলগ্ন, অস্থির ও অবিশ্বস্ত হিসাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। কাতারের আমির বিলাসী বিমান উপহার দিয়ে তাঁকে খুশি করতে পারেন। কিম্বা পাকিস্তানি সরকার নোবেল পুরস্কার দেবার প্রস্তাবনা পেশ করে তাঁকে পুলকিত করতে পারে। কিন্তু আসলে পৃথিবীর কোনো দেশ কিংবা এর রাষ্ট্রনায়ক কিংবা বিশ্বজনীন বিশিষ্টজন এরা কেউই আর ট্রাম্পের কথার ওপর আস্থা-বিশ্বাস ও ভরসা রাখতে পারবে না। এটা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের যুক্তরাষ্ট্রের গ্রহণযোগ্যতাকে ভীষণভাবে নিচে নামিয়ে ফেলবে।
ইরান-ইসরাইল যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এই দুর্বলতা ও অসহায়ত্ব চীন-রাশিয়াকে পুলকিত করবে নিশ্চয়ই। এই যুদ্ধের মাঝেই রাশান প্রেসিডেন্ট পুতিন ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিন একান্তে কথা বলেছেন। এ দেশ দুটি প্রকাশ্যেই ইরানের ওপর হামলার জন্য ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা করেছে। ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের এই পরাজয়ের ফলে চীন-রাশিয়া তাদের ব্রিকস জোটকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে, যা প্রভাব বিস্তার করতে থাকবে বিশ্বের অন্য দেশগুলোর ওপর। বিশেষ করে লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, পশ্চিম ও মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর ওপর চীনা প্রভাব-প্রতিপত্তি আরও বেশি করে বাড়বে। আগামী দশকে চীন হয়ে উঠবে বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতির প্রধানতম খেলোয়াড়। চৈনিক উত্থান ঠেকানোর জন্য যে ধরনের কর্মকৌশল ও নেতৃত্ব দরকার তা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আদৌ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। মনে হচ্ছে জো বাইডেন ব্যর্থতার যে ডালি অসম্পূর্ণ রেখেছিলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিগুণ গতিতে তা সম্পূর্ণ করতে নেমে পড়েছেন।
আধুনিককালের পৃথিবীতে প্রত্যেকটি দেশেরই ভাগ্য জড়িয়ে আছে বিশ্ব অর্থনীতি ও বিশ্বরাজনীতির গতিপ্রকৃতির সাথে। কোনো দেশই আর এ থেকে নিজেকে পৃথক ও বিচ্ছিন্ন করে রাখতে পারে না এবং তা সম্ভবও নয়। বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতির ঢেউ এসে আছড়ে পড়বেই তার ওপর। আমাদের রাষ্ট্র বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বাংলাদেশকে এই বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতির গতিপ্রকৃতির ওপর নজর রেখেই তার সমরনীতি, কূটনীতি, পররাষ্ট্রনীতি ও বাণিজ্যনীতি সাজাতে হবে।
গত মে মাসে সংগঠিত চার দিনের পাক-ভারত যুদ্ধ এবং জুন মাসে সংঘটিত ১২ দিনের ইরান-ইসরাইল যুদ্ধের ফলাফল প্রমাণ করে যে চীন নিরাপদ দূরত্ব থেকেই যেনো নেপথ্যে অনেক কিছুর নিয়ন্ত্রক। ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসন, পাক-ভারত যুদ্ধ, ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ এসব যুদ্ধের ফলাফলের শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত সুবিধাভোগী চীন রাষ্ট্র। চীন সকল ধরনের যুদ্ধের সুফল পাচ্ছে তার অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও অগ্রগামিতার কারণে। চীন তার সামরিক শক্তিকে আড়াল করে রেখেছে, যা কাউকে দেখাবার প্রয়োজন হয়নি। এর পরিবর্তে চীনা অর্থনৈতিক শক্তির ঝলক যুদ্ধরত পক্ষসহ সকলেই প্রত্যক্ষ করছে।
বাংলাদেশ হাসিনা পরবর্তী যুগে একটি মোড় পরিবর্তনকারী চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। ২৫ বছর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ যে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধ (ওয়ার অন টেরোর) শুরু করেছিলেন, তাতে এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী হয়েছিল ভারত। মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশের পক্ষে সেকালে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত যৌথ বলয়ের বাইরে যাওয়া সম্ভব ছিল না। কিন্তু দীর্ঘ আড়াই দশক পর সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এখন ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আর আগের মতো এক কাতারে থাকছে না। অন্যদিকে চীনা শক্তির উত্থানে এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রভাব ও অর্থনৈতিক শক্তি ক্রমহ্রাসমান। ইরান-ইসরাইল যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতায় দ্রুতই এ অঞ্চল মার্কিনিদের শক্তিমত্তার ক্ষয়িষ্ণু ধারা আরও স্পষ্ট হয়ে দেখা দেবে।
বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতের কোটি কোটি মানুষকে চরম দারিদ্র্যসীমা থেকে মুক্ত করতে হলে এই তিনটি দেশেরই প্রয়োজন চীনা অর্থ ও বিনিয়োগ। এ কারণে এরা সবাই চীনা অর্থনৈতিক বলয়ের মধ্যে ঢুকে পড়তে চাইবে। শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মালদ্বীপ এবং আফগানিস্তানও একই পথে হাঁটবে। এদের মধ্যে যে দেশ নিজের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গোলযোগ ও মতভেদের কারণে চীনের লোভনীয় প্রকল্প ও আর্থিক প্রস্তাবনা থেকে নিজেকে দূরে রাখবে সে পিছিয়ে পড়বে।
চীন আজকাল এ অঞ্চলে বিবদমান দুই দেশকে কাছে এনে পরস্পরের সঙ্গে করমর্দন (হ্যান্ডশেক) করিয়ে দিচ্ছে। যেমন দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর গত ২১ মে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান অবশেষে চীনের মধ্যস্থতায় বেইজিংয়ে নিজেদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে একমত হয়। কয়েক বছর আগে চীন এভাবে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে দিতে পেরেছিল। সুতরাং আগামীতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার উত্তেজনা কমাতে চীন হতে পারে প্রধানতম নিয়ামক শক্তি।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র যদি গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসন বন্ধ করতে না পারে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সমর্থন না দেয় এবং সর্বোপরি ইসরাইলের প্রতি নমনীয় হয়ে একচোখা নীতি অনুসরণ করেই চলে তাহলে মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নয়ন চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হতে থাকবে। মুসলিম জনগোষ্ঠীর লোকজন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কাজ ও উদ্যোগগুলোকে সন্দেহ ও অশুভ দৃষ্টিতে দেখতে থাকবে। বিশেষ করে ইরানের মতো মুসলিম দেশের ওপর বিনা উসকানিতে হামলা চালানোর ঘটনা মুসলিম জনগোষ্ঠীর মনে গভীর বেদনা ও ক্ষুব্ধতার রেখাপাত করবে। আর এর প্রতিফলন ঘটবে রাজনীতিতে। তাই বাংলাদেশের রাজনীতিতেও গড়ে উঠতে পারে প্রচণ্ড মার্কিনবিরোধী মনোভাব। যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক গতিপথ ও নীতি নির্ধারণে যথেষ্ট প্রভাব ফেলবে।
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
প্যানেল