
জাতীয় পাখি দোয়েল একসময় গ্রামীণ জনপদে ভোরের পরিচিত সুর ছিল। এর মিষ্টি শিসে ঘুম ভাঙত অসংখ্য মানুষের, প্রাণ জুড়িয়ে যেত প্রকৃতিপ্রেমিদের। ছোট আকৃতির সাদা-কালো পালকবিশিষ্ট চঞ্চল ও সংগীতপ্রিয় পাখিটি শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, বরং আমাদের বাস্তুতন্ত্রের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি পোকামাকড় খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে, যা কৃষি ও মানবস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
তবে অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, আধুনিকায়ন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বন উজাড়, বাসস্থান ধ্বংস এবং কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের কারণে আজ দোয়েল বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। একসময় যেখানেই তাকানো যেত, দেখা মিলত এই পাখির। আজ তা খুবই বিরল দৃশ্য। বাসস্থান ধ্বংস এর অন্যতম প্রধান কারণ। দ্রুত নগরায়ণের ফলে বন-জঙ্গল উজাড় হচ্ছে। খোলা মাঠ, বাগান, ঝোপঝাড় কিংবা গ্রামের বাড়ির আঙিনা- দোয়েলের সাবেক বাসস্থানগুলো আজ কংক্রিটের নানা নির্মানকাজের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া, কৃষিক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার দোয়েলের খাদ্যশৃঙ্খলে বিষক্রিয়া ঘটাচ্ছে, যার ফলে পাখির মৃত্যুহার বাড়ছে। শিকারিদের দৌরাত্ম্যও এই পাখির সংখ্যা হ্রাসের একটি উল্লেখযোগ্য কারণ। এছাড়াও পাখিপ্রেমীদের খাঁচাবন্দি প্রবণতাও এদের প্রজননে বাধা সৃষ্টি করছে।
এই সংকট মোকাবিলায় কিছু স্বেচ্ছাসেবী ও পরিবেশবাদী সংস্থা ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। তারা জনসচেতনতা বৃদ্ধি, বৃক্ষরোপণ এবং পাখি শিকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকেও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে আইন প্রয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে শুধু সংগঠন বা সরকারের প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়। দোয়েল রক্ষায় আমাদের সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
জাতীয় পাখি হিসেবে দোয়েল শুধু একটি প্রতীক নয়, এটি আমাদের সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের ধারক। আজ যদি আমরা এই পাখিকে রক্ষা না করি, তাহলে আগামী প্রজন্ম হয়তো শুধু পাঠ্যবই কিংবা টাকায় ছাপা ছবি দেখে এদের চিনবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য দোয়েলের কলতান টিকিয়ে রাখতে আমাদের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এখনই সময়, নির্বিচারে গাছ কাটা বন্ধ করা, কীটনাশকের ব্যবহার কমানো এবং সামাজিক বনায়নের উদ্যোগ গ্রহণের। আমাদের চারপাশে এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে দোয়েল নিরাপদে বাস করতে পারে এবং আবারও তার মধুর সুরে গ্রামবাংলার ভোর জাগে।
লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
প্যানেল