
আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি, যেখানে চারপাশে সবাই হাসছে- অন্তত সামাজিক মাধ্যমে তাই দেখা যায়। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট খুললেই দেখা যায়, একটার পর একটা হাসিমুখের ছবি। চোখে আনন্দ, ক্যাপশনে সুখের কথা, আর কমেন্টে ‘সো কিউট’, ‘ভেরি নাইস’, ‘লাভ ইউ’ টাইপ শব্দের বন্যা। দেখে মনে হয়, জীবনটা বুঝি নিখুঁত।
কিন্তু বাস্তবতা ঠিক উল্টো।
এই সব ছবির আড়ালে লুকিয়ে থাকে অজস্র না বলা কথা, একাকিত্ব আর চাপা কান্না। যারা প্রতিদিন অনলাইনে এক্টিভ, নিয়মিত ছবি আপলোড করে—তাদের অনেকেই বাস্তবে ভীষণ একা। তাদের হাসি ছবিতে ঠিকই ধরা পড়ে, কিন্তু মনের কান্না কেউ শোনে না।
আজকের দিনে আমরা অনেকেই বাস্তব সম্পর্ক থেকে দূরে সরে গেছি। বন্ধুত্ব এখন ‘ফলো রিকোয়েস্ট’ বা ‘লাইক কমেন্ট’-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ। কাছের মানুষগুলোকে সময় দেওয়া ভুলে গেছি, অথচ ভার্চুয়াল ফ্রেন্ডলিস্টে শত শত নাম। দিনশেষে, যখন মনের কথা বলার জন্য কাউকে খুঁজি, তখন দেখা যায়- সবার ‘বিজি’ ট্যাগ লেগে আছে।
আমার নিজের জীবনে এমন অনেক সময় এসেছে, যখন মন খারাপ ছিল, কাউকে কিছু বলতে চাইছিলাম। কিন্তু কাকে বলব? সবার জীবনে এত ব্যস্ততা যে নিজের কথা বলার মানুষও যেন আজকাল পাওয়া যায় না। তখন মনে হয়েছে, ফেসবুকে ঢুকে সবার আনন্দঘন পোস্টগুলো দেখে কেন যেন আরও বেশি একা লাগছে।
এই একাকিত্বটা চুপিসারে ছড়িয়ে পড়ছে। কারও চোখে পড়ে না, কেউ বুঝতেও পারে না। অথচ মানুষ মাত্রই চায়, কেউ একজন তার মনের কথা বুঝুক। কাউকে বলতে না পারলে মন ভার হয়ে থাকে।
তবে সমস্যাটা শুধু একার নয়। আমরা সবাই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি। হয়তো যার ছবিতে হাসি দেখে হিংসে করি, সেই মানুষটাও ঠিক আমার মতো একা। আমরা সবাই চাই, কেউ একজন আমাদের জিজ্ঞেস করুক, ‘তুই কেমন আছিস?’
তাই মনে হয়, এখনই সময় একটু থেমে ভাবার। সামাজিক মাধ্যম আমাদের জীবনের অংশ, সেটা থাকবেই। কিন্তু তার চেয়েও জরুরি হলো, বাস্তব জীবনের সম্পর্কগুলো রক্ষা করা। বন্ধু, পরিবার, প্রিয় মানুষদের সঙ্গে সময় কাটানো, মন খুলে কথা বলা- এসবের বিকল্প নেই।
স্মার্টফোন, ছবি, লাইক, ফিল্টার- সব ঠিক আছে। কিন্তু বাস্তব জীবনের হাসি, ভালোবাসা, বোঝাপড়া এগুলোর দরকার আরও বেশি। একটা সত্যিকারের আলাপ, একটা মন থেকে বলা ‘তুই থাকিস পাশে’- এইটুকুই অনেক।
চলুন, আবার ফিরে যাই মানুষ হয়ে ওঠার জগতে। যেখানে ভালো থাকা মানে ছবির হাসি নয়, বরং সত্যিকারের কারও পাশে থাকাটা।
লেখক : শিক্ষার্থী গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
প্যানেল