ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৯ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

ব্যাটারিচালিত রিক্সার বিপদ!

প্রকাশিত: ১৭:৩৭, ২৮ জুন ২০২৫

ব্যাটারিচালিত রিক্সার বিপদ!

রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালের সিঁড়ি থেকে বারান্দা পর্যন্ত প্রচুর রোগী। প্রতিটি ওয়ার্ডের কোণে কেউ হুইল চেয়ারে বসে, বিছানায় শুয়ে কিংবা মেঝেতে পাটি বিছিয়ে শুয়ে আছে, কাউকে গামছা দিয়ে হাত-পা ঝুলিয়ে রাখতেও দেখা যায়, যাদের প্রায় সবাই সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত। অনেকের স্থায়ী পঙ্গুত্বের আশঙ্কাও রয়েছে। 
এবার ঈদে ১০ দিনের দীর্ঘ ছুটিতে পঙ্গু হাসপাতালে ২ হাজার ৫৬ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে ৬৪৬ জনকে। তাদের মধ্যে ২৩৮ জন (৩৬.৮৪ শতাংশ) ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও সিএনজিচালিত অটোরিক্সা দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন। বাস, মাইক্রোবাস, ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের মতো চার চাকার যানবাহন দুর্ঘটনায় আহত হন ১৫৭ (২৪.৩০ শতাংশ) জন। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১২৭ (১৯.৬৫ শতাংশ) জন। ঈদযাত্রায় নিহতের ৬১ জন চালক, পরিবহন শ্রমিক ৫০, পথচারী ৫৮, নারী ৪০ ও শিশুর সংখ্যা ৩০ জন। অন্যদিকে সংবাদপত্রে প্রকাশিত চলতি বছর ঈদুল ফিতরের ছুটিতে দেশের ১০টি বড় হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীর তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, হাসপাতালে ভর্তি রোগীর ৩২ দশমিক ১০ শতাংশই ব্যাটারিচালিত রিক্সা দুর্ঘটনায় আহত।
রোগীর চাপ বেশি থাকায় অস্ত্রোপচারের জন্য কখনো দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়। অনেক সময় আহত ব্যক্তি অস্ত্রোপচারের জন্য উপযোগী থাকে না। ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৩৫০-৪০০ রোগী আসে, যার ৬০ শতাংশই সড়ক দুর্ঘটনায় আহত। শিল্প দুর্ঘটনায় আহত, দগ্ধ হয়ে হাড়ের ক্ষয়, ভবন থেকে পড়ে যাওয়ার সংখ্যাও কম নয়। সবচেয়ে বেশি আসে অটোরিক্সায় দুর্ঘটনার রোগী। 
হাসপাতাল সূত্র জানায়, দেশে ব্যাটারিচালিত রিক্সা দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। অনেকে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছেন, অনেকের আবার দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন হচ্ছে। এবারের ঈদুল আজহার ছুটিতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৬৪৬ জনের মধ্যে ৫০৮ জনের একাধিকবার অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়েছে। এখনো ১৫১ জন ভর্তি রয়েছেন। অনেকের হাত-পা হারাতে হয়েছে, যাদের একটি বড় অংশই অটোরিক্সা দুর্ঘটনায় আহত।
দেশের সড়ক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাজধানীসহ দেশের সড়ক-মহাসড়ক ও অলিতে-গলিতে ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সার আধিক্য মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সড়কগুলোতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির নেপথ্যে একমাত্র বাহন ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও সিএনজিচালিত অটোরিক্সা। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দুর্ঘটনার হার আরও বাড়বে। শুধু আইন করে বা কিছুদিন অভিযান চালিয়ে সমাধান হবে না। টেকসই সমাধানের জন্য সিটি করপোরেশন, বিআরটিএ ও ট্রাফিক বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। ব্যাটারিচালিত রিক্সা নিয়ন্ত্রণের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা অতীব প্রয়োজন। দেশে ব্যাটারিচালিত রিক্সার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঠেকাতে, সরকারকে এখনই কঠোর হতে হবে, না হয় মৃত্যুর মিছিল আরও দীর্ঘায়িত হবে, যা আমাদের কারও জন্যই কাম্য নয়।

প্যানেল

×