ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৯ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

গুগল ক্রোম নয়, এই ৩টি ব্রাউজারেই মিলবে নিরাপদ ও প্রাইভেসি-ভিত্তিক ইন্টারনেট অভিজ্ঞতা! বলছেন বিশেষজ্ঞরা

প্রকাশিত: ০০:২৩, ২৯ জুন ২০২৫; আপডেট: ০০:২৪, ২৯ জুন ২০২৫

গুগল ক্রোম নয়, এই ৩টি ব্রাউজারেই মিলবে নিরাপদ ও প্রাইভেসি-ভিত্তিক ইন্টারনেট অভিজ্ঞতা! বলছেন বিশেষজ্ঞরা

ইন্টারনেট ব্যবহারে প্রতিদিনই আমরা যেসব ব্রাউজারের ওপর নির্ভর করি, সেগুলোর নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা নিয়ে ক’জনই বা গভীরভাবে ভাবি? অথচ এই ব্রাউজারগুলোর মাধ্যমেই আমাদের সার্চ, যোগাযোগ ও শেখার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন হয়। আর এক্ষেত্রে বেশিরভাগ ব্যবহারকারীর পছন্দ সাধারণত গুগল ক্রোম।

তবে প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, গুগল ক্রোমের বাইরেও রয়েছে এমন কিছু ব্রাউজার, যেগুলো শুধু ব্যবহারেই সহজ নয়, বরং ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার দিক থেকেও অনেক বেশি উন্নত।

সম্প্রতি গুগলের বিরুদ্ধে এক ফেডারেল রায়ে উঠে আসে, তারা অবৈধভাবে মোবাইল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে ক্রোমকে ডিফল্ট ব্রাউজার বানিয়ে রেখেছিল, যা ব্যবহারকারীদের বিকল্প ব্রাউজার ব্যবহারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

তথ্য নিরাপত্তা বিশ্লেষক মিশাল খান এ প্রসঙ্গে বলেন, “আপনি যখন গুগলকে আপনার ডিফল্ট ব্রাউজার, সার্চ ইঞ্জিন ও পাসওয়ার্ড ম্যানেজার বানান, তখন আপনি এককথায় নিজের সমস্ত তথ্য একটি একচেটিয়া কর্পোরেশনের হাতে তুলে দিচ্ছেন, যাদের মূল লক্ষ্যই আপনার তথ্য ব্যবহার করে মুনাফা করা।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই তিনটি ব্রাউজার নিরাপত্তা ও গোপনীয়তায় গুগল ক্রোমের চেয়েও এগিয়ে

১. মজিলা ফায়ারফক্স
মজিলা ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত এই ওপেন সোর্স ব্রাউজারটি প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের চোখে অন্যতম নিরাপদ একটি বিকল্প।

মিশাল খান বলেন, “ফায়ারফক্স ব্যবহারকারীদের তথ্য ট্র্যাক করে না কিংবা গোপনে প্রধান কার্যালয়ে পাঠায় না। গুগল ক্রোম ঠিক বিপরীত প্রতিনিয়ত আপনি কী দেখছেন, কী খুঁজছেন, তার ভিত্তিতে আপনার একটি প্রোফাইল তৈরি করে বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য।”

তিনি আরও যোগ করেন, “ক্রোমের তুলনায় ফায়ারফক্স অনেক কম রিসোর্স ব্যবহার করে, ফলে আপনি একসাথে প্রচুর ট্যাব খুলেও নিশ্চিন্তে ব্রাউজ করতে পারেন।”

মোবাইল ব্যবহারকারীদের জন্য রয়েছে ফায়ারফক্স ফোকাস নামের একটি সংস্করণ, যেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্র্যাকার ব্লক করে এবং একটি টাচেই ব্রাউজিং হিস্টোরি মুছে ফেলা সম্ভব।

২. ব্রেইভ (Brave)
সাইবার নিরাপত্তা পডকাস্ট ‘Bare Knuckles and Brass Tacks’-এর সহ-উপস্থাপক জর্জ কামাইড বলেন, “আমি ব্রেইভ ব্যবহার শুরু করি মূলত বিজ্ঞাপন ও ট্র্যাকিং থেকে বিরক্ত হয়ে। এই ব্রাউজারটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে থার্ড-পার্টি কুকি ও ট্র্যাকারগুলো ব্লক করে।”

তিনি আরও বলেন, “আপনি জিমেইল ব্যবহার করছেন ব্রেইভ-এ, তবুও অপ্রয়োজনীয় বিজ্ঞাপন আসছে না। আমার পরিবারের সদস্যরাও ব্রেইভে শিফট করেছে শুধুমাত্র এর বিজ্ঞাপনমুক্ত পরিষ্কার ইন্টারফেসের কারণে।”

৩. ডাকডাকগো (DuckDuckGo)
ডিজিটাল প্রোডাক্ট লিডার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষক জিল হেইঞ্জ জানান, রাজনৈতিক পরিবেশে গোপনীয়তার ওপর বাড়তে থাকা হুমকি থেকেই তিনি ডাকডাকগো-তে সুইচ করেন।

“ডাকডাকগো আপনার ব্রাউজিং হিস্টোরি সংরক্ষণ করে না, ফলে এসব তথ্য কেউ চাইলেও সংগ্রহ করতে পারে না,” বলেন জিল। “যেকোনো সময় আমি কোনো বিষয়ে কৌতূহলী হলে এখানে সার্চ করি এবং জানি, তা আমার পরিচয়ের সঙ্গে চিরদিনের মতো যুক্ত হয়ে যাচ্ছে না বা ভবিষ্যতে আমাকে লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপন আনা হবে না।”

এই ব্রাউজারটির সবচেয়ে বড় সুবিধা, একটি ক্লিকে সমস্ত ট্যাব ও হিস্টোরি মুছে ফেলা যায়, যা ব্যবহারকারীদের মধ্যে নিরাপত্তার অনুভূতি তৈরি করে।

ব্রাউজার বদল মানে নিরাপদ ভবিষ্যতের পথে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া
ব্রাউজার বদলে নিতে কিছুটা সময় লাগতে পারে ঠিকই, তবে তা দীর্ঘমেয়াদে আপনাকে এনে দিতে পারে অনেক বেশি স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা।

ন্যাশনাল ব্যুরো অফ ইকোনমিক রিসার্চ-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, যখন গবেষকরা অংশগ্রহণকারীদের দুই সপ্তাহ ধরে মাইক্রোসফট বিং ব্যবহার করতে অর্থ প্রদান করেন, তাদের মধ্যে প্রায় ২২ শতাংশ সেই অভ্যাস ধরে রাখেন।

অর্থাৎ মানুষ একবার সুযোগ পেলে বিকল্প প্রযুক্তি বেছে নিতেও পিছপা হন না। প্রযুক্তি জায়ান্টদের আধিপত্য কেবল তখনই বজায় থাকে, যখন আপনি বুঝতেই পারেন না আপনার সামনে আরও ভাল বিকল্পও রয়েছে।

আপনার ব্রাউজিং অভিজ্ঞতা কতটা সুরক্ষিত হবে, সেই সিদ্ধান্ত এখনো আপনার হাতে। সাহস করে একবার পরিবর্তনের পথে হাঁটলেই খুলে যেতে পারে নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার নতুন দিগন্ত।

 

 


সূত্র:https://tinyurl.com/325asamu

আফরোজা

×