
ছবি: সংগৃহীত
নতুন গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে—আমাদের মস্তিষ্কে রয়েছে একটি প্রাকৃতিক 'স্মৃতি পরিষ্কারকারী' বা ‘মেমোরি জানিটর’। এটি এমন এক স্নায়বিক ব্যবস্থা, যা অপ্রয়োজনীয় বা বিভ্রান্তিকর স্মৃতিকে ইচ্ছাকৃতভাবে মুছে ফেলতে সক্ষম।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন-ম্যাডিসনের গবেষক জিয়াংগ্যাং শান ও ব্র্যাডলি পস্টেল এই গবেষণায় অংশ নেন। তাঁরা দেখতে পান, মানুষ যখন ইচ্ছাকৃতভাবে একটি তথ্য ভুলে যেতে চায়, তখন মস্তিষ্কে এক ধরনের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ সৃষ্টি হয়, যা সেই তথ্যকে কার্যকরভাবে সরিয়ে দেয়।
আমাদের মস্তিষ্কের কাজের স্মৃতির ধারণক্ষমতা খুব সীমিত—একসাথে ৪টি তথ্যের বেশি মনে রাখা প্রায় অসম্ভব। তাই পুরোনো বা অপ্রাসঙ্গিক স্মৃতি সরিয়ে নতুন তথ্য গ্রহণের জন্য মস্তিষ্ক ‘স্মৃতি মুছে ফেলার’ কৌশল ব্যবহার করে।
এই প্রক্রিয়াটি শুধু অগোচরে নয়, বরং সচেতনভাবে পরিচালিত হয়। যেমন—একটি পুরোনো ঠিকানা ভুলে গিয়ে নতুন ঠিকানা মনে রাখার সময়, কিংবা মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য ট্রমা বা অপ্রিয় স্মৃতি ভুলে যাওয়াটা একান্ত প্রয়োজনীয়।
মস্তিষ্ক কিভাবে স্মৃতি মুছে ফেলে?
গবেষণায় দেখা গেছে, “Forget” সংকেত পাওয়ার মাত্র ১৬০ মিলিসেকেন্ডের মধ্যেই মস্তিষ্কের সামনের অংশ থেকে পেছনের দিকে এক ধরণের স্নায়বিক তরঙ্গ (anterior-to-posterior wave) সঞ্চারিত হয়। এটি এমন একটি সুনির্দিষ্ট আদেশ, যা অপ্রয়োজনীয় স্মৃতিকে লক্ষ্য করে নিষ্ক্রিয় করে তোলে।
এই সক্রিয় ভুলে যাওয়ার প্রক্রিয়াটি প্যাসিভ ভুলে যাওয়ার চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর। প্যাসিভ ভুলে যাওয়া মানে একরকম অবহেলা করে স্মৃতি মুছে যাওয়া, কিন্তু সক্রিয় ভুলে যাওয়া মানে ইচ্ছা করে ‘ডিলিট’ বাটন টিপে দেওয়া।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার ধরন
২৯ জন প্রাপ্তবয়স্ককে দুটি রঙিন বার মনে রাখতে বলা হয় এবং পরে বলা হয়, একটি বার ভুলে যেতে। এরপর একটি নতুন বার দেখানো হয়। এই পরীক্ষায় EEG স্ক্যানের মাধ্যমে মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং নিশ্চিত হওয়া যায় যে সক্রিয়ভাবে ভুলে যাওয়ার সময় একটি নির্দিষ্ট তরঙ্গ তৈরি হয়।
মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব
যারা মানসিক চাপে ভোগেন, বারবার নেতিবাচক স্মৃতিতে আটকে যান বা হতাশাগ্রস্ত হন, তাদের মস্তিষ্ক এই সক্রিয় মুছে ফেলার ক্ষমতা কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে না। গবেষকরা বলছেন, এই 'স্মৃতি দমন' প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করা গেলে মানসিক রোগের চিকিৎসায় বড় অগ্রগতি সম্ভব।
এখন গবেষকেরা পরিকল্পনা করছেন—EEG-এর সঙ্গে ট্রান্সক্রানিয়াল ম্যাগনেটিক স্টিমুলেশন (TMS) ব্যবহার করে এই তরঙ্গ আরও শক্তিশালী করে কীভাবে মেমোরি ক্লিনআপ আরও দ্রুত ও কার্যকর করা যায়।
এছাড়া এই ধারণা অনুসরণ করে এমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি করার চিন্তাও চলছে, যেগুলো পুরোনো ও অপ্রয়োজনীয় তথ্য মুছে ফেলে নতুন ও প্রয়োজনীয় তথ্যকে জায়গা দিতে পারবে।
মুমু ২