ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৫ আগস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২

নেতানিয়াহুর নতুন গাজা পরিকল্পনা, সেনাবাহিনী কেন নারাজ?

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:০৭, ৫ আগস্ট ২০২৫

নেতানিয়াহুর নতুন গাজা পরিকল্পনা, সেনাবাহিনী কেন নারাজ?

ছবি: সংগৃহীত

প্রায় দুই বছর ধরে চলমান ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের মধ্যেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজার পুরো অংশ দখলের চিন্তাভাবনা করছেন। সম্প্রতি তার এই পরিকল্পনার খসড়া সামনে এসেছে, যা দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন তুলেছে। তবে এই পরিকল্পনাকে ঘিরে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (IDF)-এর ভেতরে দ্বিমত স্পষ্টভাবে প্রকাশ পাচ্ছে।

নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, তিনি খুব শিগগিরই নিরাপত্তা মন্ত্রিসভাকে আহ্বান করবেন গাজা পরিস্থিতি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য। তার মতে, যুদ্ধের তিনটি প্রধান লক্ষ্য হলো: শত্রুকে পরাজিত করা, জিম্মিদের মুক্ত করা এবং গাজা যেন ভবিষ্যতে আর কখনো ইসরায়েলের জন্য হুমকি না হয় তা নিশ্চিত করা।

এই প্রেক্ষাপটে, ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ এক প্রতিবেদনে জানায়, নেতানিয়াহু এখন গাজা স্ট্রিপ পুরোপুরি দখল করার পরিকল্পনার দিকে এগোচ্ছেন। তার ঘনিষ্ঠ এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, "সবকিছু নির্ধারিত হয়ে গেছে, আমরা পুরো গাজা দখলে নিচ্ছি। যদি আইডিএফ প্রধান এতে রাজি না হন, তবে তার উচিত পদত্যাগ করা।"

কিন্তু ইসরায়েলি সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এয়াল জামির এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, গাজায় এখনো প্রায় ২০ জন জীবিত জিম্মি রয়েছে, এবং পুরো গাজা দখল করা হলে তাদের জীবন হুমকির মুখে পড়বে। এছাড়াও তিনি রাজনৈতিক নেতৃত্বের কৌশলগত অস্পষ্টতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন, যা সেনাবাহিনীকে দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলতে পারে।

অন্যদিকে, নেতানিয়াহুর সরকারে থাকা বেজালেল স্মোট্রিচ ও ইতামার বেন-গভির গাজায় ইহুদি বসতি পুনঃস্থাপন ও সামরিক শাসন চালুর দাবি তুলেছেন। তবে সেনাবাহিনী এর বিরোধিতা করে বিকল্প পরিকল্পনা তৈরি করছে, যেখানে তারা এখনো যেসব এলাকায় অভিযান চালায়নি, সেগুলোতে সম্প্রসারণের কৌশল উপস্থাপন করতে চায়।

বর্তমানে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার প্রায় ৭৫ শতাংশ অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে, অবশিষ্ট ২৫ শতাংশ এলাকাও তাদের দখলে আসবে। এতে পুরো গাজা স্ট্রিপ সরাসরি ইসরায়েলের সামরিক নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। কিন্তু এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পর সেখানে বসবাসরত প্রায় ২.২ মিলিয়ন সাধারণ মানুষ এবং সেখানকার মানবিক সাহায্য সংস্থাগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে।

এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ ইসরায়েল সফর করে জানান যে তিনি যুদ্ধ শেষের একটি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন। কিন্তু দোহাতে হওয়া অস্ত্রবিরতির আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় ইসরায়েলের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, “হামাস কোনো চুক্তিতে আগ্রহী নয়, তাই নেতানিয়াহু এখন জিম্মি উদ্ধারে সমাধানে এগোচ্ছেন।”

সব মিলিয়ে, নেতানিয়াহুর এই পরিকল্পনা কেবল একটি নতুন সামরিক রণকৌশল নয়, বরং এটি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ভেতরের দ্বিধা এবং গাজার জনগণের ভবিষ্যৎকে গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। যুদ্ধ, কূটনীতি, মানবিক সংকট ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের এক জটিল মিশ্রণে নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পুরো মধ্যপ্রাচ্য।

মুমু ২

×