ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৫ আগস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২

‘আমরা গরুর খাবার খাচ্ছি বাঁচার জন্য’

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৮:২০, ৫ আগস্ট ২০২৫

‘আমরা গরুর খাবার খাচ্ছি বাঁচার জন্য’

ছবি: সংগৃহীত

সুদানের পশ্চিমাঞ্চলের উত্তর দারফুর রাজ্যের এল-ফাশার শহরে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। আরব-সমর্থিত আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (RSF) শহরটি অবরোধ করে রাখায় খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে স্থানীয় মানুষজন বাধ্য হয়ে গবাদিপশুর খাবার ‘আমবাজ’ (চিকনর গুঁড়ো করা বাদামের খোসা) খেয়ে দিন পার করছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ওসমান আঙ্গারো আল জাজিরাকে বলেন, “আমরা খুব কষ্টে আছি। মানবিক সহায়তা দরকার। খাদ্য ও ওষুধ, যেভাবেই হোক, আকাশপথে বা স্থলপথে পৌঁছানো দরকার। এভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।”

ডাক্তার ও পশু চিকিৎসক জুলফা আল-নূর জানান, তার পরিবার প্রতিদিন একটি মাত্র বেলা খাবার পায়, যা দেওয়া হয় একটি দাতব্য রান্নাঘর “মাতবাখ আল-খায়ের” থেকে। এমনকি গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত ‘আমবাজ’ও প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। তিনি বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানান।

জাতিসংঘ-সমর্থিত “ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (IPC)” জানিয়েছে, এল-ফাশারে দুর্ভিক্ষ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।

RSF দুই মাস ধরে এল-ফাশার শহর অবরোধ করে রেখেছে। খাদ্যবাহী ট্রাক এবং মানবিক সহায়তা বহনকারী কনভয়গুলোতে হামলার ঘটনাও ঘটছে। ফলে স্থানীয় বাজারে পাচার হওয়া কিছু পণ্যের দাম জাতীয় গড় দামের চেয়ে ৫ গুণ বেশি।

এই দুর্ভিক্ষের মাঝেই কলেরার মারাত্মক প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে কলেরায় মৃত্যু হয়েছে ১৯১ জনের। কেবল তাউইলা শহরেই মারা গেছে ৬২ জন। দক্ষিণ দারফুরের নাইলা শহরের কালমা ও ওতাশ ক্যাম্পে মারা গেছে আরও শতাধিক মানুষ।

এখন পর্যন্ত ৪,০০০-এরও বেশি কলেরা রোগী শনাক্ত হয়েছে। পশ্চিম দারফুরের জেবেল মারা এলাকায় ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

“ডাক্তারস উইদাউট বর্ডারস” (MSF) জানিয়েছে, তারা তাউইলায় ১৪৬টি শয্যা বিশিষ্ট দুটি কলেরা চিকিৎসাকেন্দ্র চালাচ্ছে। তবে বর্ষা মৌসুমে অপরিষ্কার পানি, নোংরা পরিবেশ এবং বিশুদ্ধ পানির অভাবে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

এল-ফাশার ক্যাম্পে থাকা একজন প্রাক্তন শিক্ষক সামির বলেন, “খাবারের অভাবে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দুর্ভিক্ষের ফলে দুর্বল হয়ে মানুষ কলেরায় মারা যাচ্ছে।”

এল-ফাশারের বাসিন্দারা জানান, প্রতিদিন সকাল-বিকেল RSF-এর কামান ও ড্রোন হামলা চলছে। মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। কবরস্থানের সংখ্যা বাড়ছে।

মানবাধিকার সংস্থা ‘ইমার্জেন্সি লইয়ার্স’ জানিয়েছে, শহর থেকে পালানোর সময় একদল বাসিন্দা রাস্তার পাশের একটি গ্রামে RSF-এর হামলার শিকার হয়। এতে অন্তত ১৪ জন নিহত এবং বহু আহত হয়।

২০২৩ সালের এপ্রিলে সুদানের রাজধানী খার্তুমে সেনাবাহিনী ও RSF-এর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়, যা এখন দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। সেনাপ্রধান আব্দেল ফাত্তাহ আল-বুরহান ও RSF প্রধান হেমেদতির ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে দেশটি এখন ভয়াবহ মানবিক সংকটে।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, এ যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত এবং প্রায় ১.৩ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বিশ্বজুড়ে এটি এখন সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকটগুলোর একটি।

মুমু ২

×