
ছবিঃ সংগৃহীত
বর্তমান সময়ের তরুণরা উচ্চশিক্ষার সুযোগ বাড়লেও মানসিকভাবে আগের চেয়ে অনেক বেশি চাপে ভুগছেন। ভালো রেজাল্ট, ক্যারিয়ার পরিকল্পনা, পারিবারিক প্রত্যাশা এবং প্রতিযোগিতামূলক সমাজব্যবস্থার চাপে তারা প্রায়ই একাকিত্ব, হতাশা, এমনকি বিষণ্নতার মতো মানসিক সংকটে পড়ছেন। শিক্ষার লক্ষ্য পূরণের এই দৌড়ে কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে আনন্দ, আত্মবিশ্বাস আর মানসিক সুস্থতা।
📌 চাপের উৎস কী কী?
১. ফলাফল ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা:
বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন প্রায় পুরোপুরি জিপিএ বা রেজাল্ট কেন্দ্রিক। এতে শিক্ষার মূল আনন্দ বা গবেষণার মানসিকতা তৈরি না হয়ে, শুধু ভালো রেজাল্টের জন্য চাপ অনুভব করে।
২. কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তা:
শুধু ডিগ্রি থাকলেই চাকরি মেলে না—এমন বাস্তবতায় তরুণরা আরও একাধিক কোর্স, সার্টিফিকেট ও স্কিল অর্জনের জন্য রাতদিন পরিশ্রম করছেন, যা মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করছে।
৩. পরিবার ও সমাজের অতিরিক্ত প্রত্যাশা:
অনেক সময় পরিবার বা আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে এমন চাপ আসে—“তোমাকে ডাক্তার হতে হবে”, “তুমি বিসিএস না দিলে কিছুই হবে না”—যা আত্মপরিচয় গঠনে বাধা দেয় এবং চরম হতাশা তৈরি করে।
৪. সোশ্যাল মিডিয়া ও তুলনার সংস্কৃতি:
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা লিংকডইনে বন্ধুদের সফলতা দেখে নিজের জীবনকে ব্যর্থ মনে করে অনেক তরুণ-তরুণী। এই ‘কমপ্যারিজন ট্র্যাপ’ মানসিক অস্থিরতা বাড়িয়ে দেয়।
🧠 মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে
সম্প্রতি ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ১৫–২৫ বছর বয়সীদের মধ্যে হতাশা ও উদ্বেগের হার বেড়েছে ৩০% পর্যন্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া প্রতি ৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩ জন মানসিক চাপ বা অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারে ভুগছে বলে জানিয়েছে একাধিক স্বাস্থ্য জরিপ।
🗣️ শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) এর শিক্ষার্থী আব্দুল আলীম বলেন,
“একদিকে পরিবার বলছে বিসিএস দাও, অন্যদিকে শিক্ষক বলছেন গবেষণার দিকে মনোযোগ দাও, আর আমি চাই কনটেন্ট ক্রিয়েটর হতে। দিনশেষে মনটা খুব ভারী লাগে।”
🩺 সমাধান কী হতে পারে?
- কাউন্সেলিং সেবা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বাধ্যতামূলক করা
- শিক্ষা পদ্ধতিতে নমনীয়তা ও মানসিক স্বাস্থ্য সংযোজন
- ক্যারিয়ার গাইডলাইন ও লাইফ স্কিল প্রশিক্ষণ
- পরিবারের সঙ্গে খোলামেলা যোগাযোগ
- ডিজিটাল ডিটক্স ও মেডিটেশন অভ্যাস
মনোবিজ্ঞানী ডা. শায়লা রওশন বলেন,“উচ্চশিক্ষা মানেই শুধুমাত্র অ্যাকাডেমিক পারফরম্যান্স নয়, এটি হওয়া উচিত একজন তরুণের আত্ম-উন্নয়ন ও মানসিক বিকাশের ক্ষেত্র। কিন্তু আমরা সেটিকে একটা প্রতিযোগিতার জালে আটকে ফেলেছি।”
আলীম