ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৫ আগস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২

ধাপে ধাপে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে রাশিয়া

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:২৫, ৫ আগস্ট ২০২৫

ধাপে ধাপে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে রাশিয়া

ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ায় ইন্টারনেট এখন আর আগের মতো উন্মুক্ত নয়। আজকাল সেখানে ইন্টারনেটে প্রবেশ করাটা শুধু কঠিন নয়, বরং অনেক সময় বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। ইউটিউব ভিডিও চালু না হওয়া, স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটে ঢুকলে কিছুই না দেখা, এমনকি মোবাইল ইন্টারনেট দিনের পর দিন বন্ধ থাকার ঘটনা, সবই দেশটির সরকারের কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ।

ক্রেমলিন বহু বছর ধরেই ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণে আনতে একাধিক আইন, প্রযুক্তি ও কৌশল প্রয়োগ করছে। তারা অননুমোদিত ওয়েবসাইট ব্লক করছে, ভিপিএন (VPN) নিষিদ্ধ করছে, এবং ব্যবহারকারীদের উপর নজরদারি বাড়িয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, রাশিয়া ধীরে ধীরে চীনের “গ্রেট ফায়ারওয়াল” এর মতো একটি নিজস্ব নিয়ন্ত্রিত ইন্টারনেট গড়ে তুলছে।

এই নিয়ন্ত্রণের শিকড় ২০১১-১২ সালের বিক্ষোভে, যখন অনলাইনে সরকারবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল। এরপর সরকার ও প্রশাসন শুরু করে ধাপে ধাপে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের নানা ব্যবস্থা- ওয়েবসাইট ব্লক, ব্যবহারকারীর তথ্য রাশিয়ান সার্ভারে রাখার বাধ্যবাধকতা, টেলিগ্রাম অ্যাপ নিষিদ্ধের ব্যর্থ চেষ্টা, এবং সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের কারণে সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের।

২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর হয়। তখন ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম একযোগে নিষিদ্ধ করা হয়। ইউটিউব ধীরগতি করে দেওয়া হয়। ভিপিএনের উপর চাপ আরও বেড়ে যায়, যাতে নাগরিকরা নিষিদ্ধ ওয়েবসাইটে না যেতে পারে।

সম্প্রতি একটি নতুন আইন পাস হয়েছে, যেখানে ‘চরমপন্থী’ কনটেন্ট অনলাইনে খোঁজার জন্যও সাধারণ ব্যবহারকারীদের শাস্তি দেওয়া হতে পারে। এই আইন অনুযায়ী LGBTQ+ বিষয়, সরকারবিরোধী সংগঠন, কিছু শিল্পীর গান, এমনকি প্রয়াত বিরোধীদলীয় নেতা আলেক্সেই নাভালনির স্মৃতিকথাও ‘চরমপন্থী’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

রাশিয়ার সরকার এখন WhatsApp নিষিদ্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তার পরিবর্তে তারা চালু করেছে ‘MAX’ নামে একটি “জাতীয় মেসেঞ্জার”। এই অ্যাপটি শুধু মেসেজিং নয়, বরং সরকারি পরিষেবা, পেমেন্ট ও অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত হবে। এটি সকল স্মার্টফোনে বাধ্যতামূলকভাবে প্রি-ইনস্টল করা হবে।

রাশিয়ার অর্ধেকের বেশি ওয়েবসাইট এখনও বিদেশি হোস্টিংয়ে চলছে। কিন্তু সরকার এখন এসব ধাপে ধাপে ব্যবস্থা নিচ্ছে, যাতে ব্যবহারকারীরা বাধ্য হয় রাশিয়ান হোস্টিংয়ে স্থানান্তর হতে। ইন্টারনেট লাইসেন্স ফি বাড়িয়ে ছোট কোম্পানিগুলো বাদ পড়েছে, এবং IP অ্যাড্রেস এখন মাত্র কয়েকটি বড় কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করছে, যার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম কোম্পানি Rostelecom-ই এককভাবে ২৫% নিয়ন্ত্রণ করছে।

Human Rights Watch-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, রাশিয়া এখন ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণে আগের চেয়ে অনেক বেশি পারদর্শী। যদিও দেশটি এখনও সম্পূর্ণভাবে বিশ্ব ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়নি, তবে যে পথে তারা এগোচ্ছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

মুমু ২

×