
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পার্টিকেল এক্সেলারেটর, লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার (LHC), আবারও রেকর্ড গড়েছে। ফ্রান্স-সুইজারল্যান্ড সীমান্তের নিচে অবস্থিত ১৭ মাইল দীর্ঘ এই গবেষণা টানেলে বিজ্ঞানীরা সীসা (lead) আয়নদের প্রায় আলোর গতিতে একে অপরের দিকে ধাক্কা মারেন। এই ধরণের এক পরীক্ষায়, ২০২৫ সালের ৩০ জুলাই, বিজ্ঞানীরা এমন একটি ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেন যা এতদিন কেবল লোককথা বা কিংবদন্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল- সীসা কয়েক ট্রিলিয়ন ভাগ সেকেন্ডের জন্য স্বর্ণে রূপান্তরিত হয়েছিল।
এই রূপান্তরকে বলা হচ্ছে ultraperipheral collision। এখানে সীসার দুই নিউক্লিয়াস একে অপরের খুব কাছাকাছি দিয়ে যায়, তবে সরাসরি সংঘর্ষ হয় না। বরং, তারা একে অপরকে ফোটনের প্রচণ্ড শক্তির মাধ্যমে প্রভাবিত করে। এই ফোটনের ঝড় নিউক্লিয়াস থেকে এক, দুই কিংবা তিনটি প্রোটন ছিটকে ফেলতে পারে। আর যখন তিনটি প্রোটন অপসারিত হয়, তখন সীসা-২০৮ সাময়িকভাবে রূপান্তরিত হয় স্বর্ণ-২০৫-এ, সময়কাল মাত্র 10⁻²³ সেকেন্ড। যদিও ক্ষণিকের জন্য, তবু এই রূপান্তর স্পষ্ট সিগন্যাল রেখে যায় LHC-এর ডিটেক্টর সিস্টেমে।
এই গবেষণাটি ALICE ডিটেক্টরে সম্ভব হয়েছে, যার Zero Degree Calorimeter নির্দিষ্টভাবে নিরপেক্ষ কণার ট্র্যাক রেকর্ড করে। গবেষকরা এমন সব সংঘর্ষ আলাদা করেন, যেখানে নির্দিষ্ট গতির প্রোটন ও অন্তত একটি নিউট্রন ধরা পড়ে। এরপর Monte Carlo simulation ব্যবহার করে নিশ্চিত করা হয় যে এসব ঘটনাই আসলে ফোটনের কারণে, না কি কোনো ভুয়া বা অনাকাঙ্ক্ষিত সংঘর্ষ।
এই গবেষণার তাৎপর্য শুধু স্বর্ণ তৈরি’র মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং, এটি পরবর্তী প্রজন্মের পার্টিকেল কোলাইডার তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে Electron-Ion Collider (EIC)-এর মতো গবেষণায় ব্যাকগ্রাউন্ড বিশ্লেষণে এটি সহায়তা দেবে। এছাড়া, নিউক্লিয়াসের গঠন এবং ফোটন-নিউক্লিয়াস ইন্টারঅ্যাকশনের গতিবিধি বুঝতে এটি এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
গবেষকরা ভবিষ্যতে ৪ বা ৫ প্রোটন অপসারণের ঘটনাও পর্যবেক্ষণ করতে চান, যাতে আরও ভারী মৌল যেমন হাফনিয়াম বা ট্যানটালামের মতো উপাদান তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। একই সঙ্গে তাঁরা এমন এক ট্রিগার সিস্টেম তৈরি করছেন যা রিয়েল টাইমে মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে অত্যন্ত বিরল ঘটনাগুলো ধরতে পারবে।
মুমু ২