
ছবিঃ সংগৃহীত
উচ্চ কোলেস্টেরলের সমস্যা অনেকেরই আছে, আর সেই সমস্যা কমাতে আমরা অনেক সময় খাবারের তালিকায় পরিবর্তন আনি—ফাইবার বাড়াই, চর্বি কমাই, চিনি এড়িয়ে চলি। তবে আপনি কি জানেন, এক কাপ গ্রিন টি-ও হতে পারে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের এক প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যকর উপায়?
পুষ্টিবিদদের মতে, গ্রিন টি-তে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট—বিশেষ করে ক্যাটেচিন, যা শরীরে ক্ষতিকর LDL কোলেস্টেরল (যাকে “খারাপ কোলেস্টেরল” বলা হয়) কমাতে সাহায্য করে।
গ্রিন টি শুধু কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় না, বরং এটি রক্তনালিতে প্ল্যাক জমা হওয়া থেকে রক্ষা করে এবং অন্ত্রে চর্বি শোষণ কমিয়ে দেয়। এতে হৃদরোগের ঝুঁকিও কিছুটা কমে যেতে পারে।
গবেষণায় কী পাওয়া গেছে?
একাধিক ছোট-বড় গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে কোলেস্টেরল কিছুটা কমে।
একটি গবেষণায় টাইপ-২ ডায়াবেটিস ও কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রতিদিন তিন কাপ করে গ্রিন টি পান করেছেন, এবং তাদের মোট কোলেস্টেরল কমেছে।
আরও একটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গ্রিন টি বা তার নির্যাস নিয়মিত গ্রহণ করলে LDL ও মোট কোলেস্টেরল কমার সম্ভাবনা থাকে।
তবে গবেষণাগুলোতে স্পষ্টভাবে বলা হয়নি দিনে ঠিক কতটুকু গ্রিন টি খেলে এই উপকার পাওয়া যাবে, কারণ ব্যক্তিভেদে খাদ্যাভ্যাস, বয়স ও শারীরিক অবস্থা ভিন্ন হয়।
কিছু সতর্কতা ও পরামর্শ
গ্রিন টি যতই উপকারী হোক, অতিরিক্ত পান করলে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে।
গ্রিন টি-তে ক্যাফেইন থাকে, যা বেশি খেলে হতে পারে—
- ঘুমের সমস্যা
- মাথাব্যথা
- মন খারাপ হওয়া
- পেটের গ্যাস বা অস্বস্তি
তবে চিন্তার কিছু নেই, কারণ গ্রিন টি-তে ক্যাফেইনের পরিমাণ কফির চেয়ে অনেক কম (প্রায় এক-তৃতীয়াংশ)।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—হার্বাল চা বা ভেষজ চা অনেক সময় ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া করতে পারে। যেমন:
- রক্ত পাতলা করার ওষুধ
- ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ
তাই গ্রিন টি বা যে কোনো চা নিয়মিত খাওয়া শুরু করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গ্রিন টি পান করার সময় যা মাথায় রাখবেন
- চিনিমুক্ত গ্রিন টি পান করুন
- ভালো ব্র্যান্ড ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা পণ্য কিনুন
- কৃত্রিম রঙ, ফ্লেভার বা কীটনাশকমুক্ত পণ্য বেছে নিন
- দিনে ২–৩ কাপের বেশি না খাওয়াই ভালো
ঘরেই বানিয়ে নিতে পারেন এই গ্রিন টি রেসিপিগুলো
- হানি গ্রিন টি – মধুর হালকা স্বাদে গরম গ্রিন টি
- বেরি–গ্রিন টি স্মুদি – অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদানে ভরপুর
- ম্যাচা গ্রিন টি লাটে – দুধের সাথে ম্যাচার দারুণ সংমিশ্রণ
গ্রিন টি মানেই শুধু ওজন কমানো বা ‘ডায়েট’ নয়—এটি হতে পারে কোলেস্টেরল কমানোর সহজ, নিরাপদ ও প্রাকৃতিক একটি উপায়। তবে মনে রাখবেন, চা একা কিছু করতে পারে না—এটি কাজ করবে পরিমিত, সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং সুস্থ জীবনযাপনের অংশ হিসেবে।
যে কোনো বড় পরিবর্তনের আগে অবশ্যই আপনার চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।
“গ্রিন টি উপকারী হতে পারে, তবে সেটা তখনই কার্যকর হবে যখন আপনি পুরো স্বাস্থ্যকর জীবনের অংশ হিসেবে এটি গ্রহণ করবেন”—পুষ্টিবিদ উমো ক্যালিন্স।
এইভাবেই এক কাপ চা আপনার হৃদয়ের জন্য হতে পারে এক অনন্য যত্ন।
মারিয়া