
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের পুত্র ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুল্লাহিল আমান আযমী তার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারে তার জীবনের এক বেদনাময় অধ্যায়ের কথা তুলে ধরেছেন। গুম হওয়ার সেই দীর্ঘ সময়ের যন্ত্রণাদগ্ধ স্মৃতি, মানসিক বিপর্যয়, লেখালেখির গল্প এবং তার মা সম্পর্কে গভীর ভালোবাসা উঠে এসেছে তার কথায়।
সাক্ষাৎকারে আব্দুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, “সমালোচকরা যখন আমার বিরুদ্ধে কথা বলেন, তারা দেখে না আমি প্রায় ৭০ হাজার ঘণ্টা কষ্টে কাটিয়েছি। গুম হয়ে থাকার সেই সময়টায় এতটাই বিষণ্নতায় ডুবে গিয়েছিলাম যে এক বছর ১৮ দিন গোসল করিনি।” তিনি আরও বলেন, “মা ছিলেন আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। ২০১৯ সালের ২৮ জুন মা মারা যান। আমি তখন গুম অবস্থায়। জানতেও পারিনি, কবর দিতে পর্যন্ত পারিনি। পরে মুক্তির পর জানতে পারি—এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় কষ্ট।”
তার মানসিক অবস্থার বর্ণনায় তিনি জানান, মা মারা যাওয়ার পর ২০১৯ সালের জুলাই মাসজুড়ে একের পর এক খারাপ স্বপ্ন দেখতেন তিনি। “আল্লাহ যেন পরোক্ষভাবে আমাকে জানিয়ে দিচ্ছিলেন, মা আর নেই,” বলেন তিনি।
গুমের সময়টায় একটিমাত্র ছেঁড়া গামছাই ছিল তার ব্যক্তিগত সম্পদ। সেই গামছা দিয়েই কখনো চোখ মুছতেন, কখনো নামাজ পড়তেন, আবার ফার্নিচার মুছতেন। তিনি বলেন, “ছবিতে হয়তো সুন্দর দেখা যায়, কিন্তু সেটা অনেক পুরোনো ও ছেঁড়া ছিল। এই গামছাটা নিয়ে যখন সমালোচনা হয়, তখন খুব কষ্ট পাই। যারা সমালোচনা করে, তারা জানে না আমি কী যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে গিয়েছি।”
লেখালেখি প্রসঙ্গে তিনি জানান, তার বাবা গোলাম আযম ১৯৬৪ সালে জেলে থাকাকালীন কিছু ছড়া লিখেছিলেন। সেই স্মৃতি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনিও কবিতা ও ছড়া লিখতে শুরু করেন। লিখেছেন মাকে নিয়ে, বাবাকে নিয়ে, সন্তানদের নিয়ে, স্ত্রীকে নিয়ে—সবার জন্যই কিছু না কিছু।
তিনি বলেন, “আমি একটি কবিতায় লিখেছিলাম— জুলুমের শেষে জাহান্নামের দেশে। যারা জুলুম করে, তারা শেষ পর্যন্ত সেখানেই যাবে। হাশরের ময়দানে আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন, 'তুমি কেন তাকে আটকে রেখেছিলে? সে গোলাম আযমের ছেলে ছিল।' এটা কি অপরাধ?”
দুঃখের সাথে জানান, ২০২১ সালের ৩১ মে তার সব লেখা—প্রায় ৩ হাজার পৃষ্ঠার পান্ডুলিপি—নিয়ে যাওয়া হয় এবং তা পুড়িয়ে ফেলা হয়।
নিজের মাকে নিয়ে তিনি বলেন, “একজন নারী ৬৮ বছর সংসার করে গেছেন, তার প্রতি একজন মানুষও অসন্তুষ্ট নয়। আমাদের আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে কাজের মানুষ—সবার আস্থার স্থল ছিলেন তিনি। তার জীবনী আমি একদিন লিখব। বাংলাদেশের প্রতিটি নারীর শেখার মতো কিছু ছিল তার জীবনে।”
রিফাত