
ছবি: সংগৃহীত
জ্বর কমে যাওয়ার পরও শরীরে ব্যথা থেকে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা, যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এটি সাধারণত জ্বরের কারণ এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়ার ফল।
জ্বর চলে গেলেও শরীরে ব্যথা থাকার প্রধান কারণগুলো:
১. ভাইরাল আর্থ্রাইটিস (Viral Arthritis): ভাইরাল সংক্রমণ, যেমন চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু, বা কিছু সাধারণ ভাইরাল জ্বরের ক্ষেত্রে জ্বর চলে যাওয়ার পরও জয়েন্ট বা গাঁটে ব্যথা থাকতে পারে। এটিকে 'ভাইরাল আর্থ্রাইটিস' বলা হয়। এই ব্যথা গোড়ালি, পায়ের আঙুল, হাত, কব্জি, বা হাঁটুতে বেশি অনুভূত হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এই ব্যথা কয়েক সপ্তাহ বা এমনকি কয়েক মাস ধরেও থাকতে পারে, বিশেষ করে চিকুনগুনিয়ার পর।
২. পেশী ব্যথা এবং ক্লান্তি:
-
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়া: যখন শরীরে কোনো ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয়, তখন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় হয়। এই প্রক্রিয়ায় সাইটোকাইনস (Cytokines) নামক কিছু রাসায়নিক নির্গত হয়, যা প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং পেশীতে ব্যথা বা অস্বস্তি ঘটাতে পারে। জ্বর চলে গেলেও এই প্রদাহ এবং এর ফলে সৃষ্ট ব্যথা কিছুদিন ধরে থাকতে পারে।
-
পেশী দুর্বলতা: জ্বরের সময় শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং পেশীগুলো শক্তি হারায়। জ্বর কমে যাওয়ার পরও পেশীগুলো সম্পূর্ণ শক্তি ফিরে পেতে কিছুটা সময় নেয়, যার কারণে ব্যথা বা ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে।
-
পানিশূন্যতা (Dehydration): জ্বরের সময় শরীর থেকে ঘাম এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে প্রচুর তরল বেরিয়ে যায়, যা পানিশূন্যতার কারণ হয়। পানিশূন্যতা পেশীগুলোতে টান বা ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
৩. পুষ্টি ও ঘুমের অভাব: জ্বরের সময় অনেকে ঠিকমতো খেতে পারেন না এবং পর্যাপ্ত ঘুম হয় না। পুষ্টির অভাব এবং ঘুমের স্বল্পতা শরীরের দুর্বলতা ও ব্যথা বাড়াতে পারে, যা জ্বর চলে যাওয়ার পরও অনুভূত হয়।
৪. নির্দিষ্ট কিছু রোগের বৈশিষ্ট্য: কিছু রোগের ক্ষেত্রে জ্বর কমে গেলেও শরীর ব্যথা বা জয়েন্ট ব্যথা একটি পরিচিত লক্ষণ। যেমন:
-
চিকুনগুনিয়া: এই জ্বরের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো জ্বর সেরে যাওয়ার পরও তীব্র গাঁট ব্যথা দীর্ঘদিন ধরে থাকা। অনেক সময় এই ব্যথা এতটাই তীব্র হয় যে হাঁটতেও কষ্ট হয়।
-
ডেঙ্গু: ডেঙ্গু জ্বরেও শরীর ও পেশীতে তীব্র ব্যথা হতে পারে, যা জ্বর কমে যাওয়ার পরও কিছুদিন থাকতে পারে।
৫. অতিরিক্ত টক্সিন: শরীরে জমে থাকা টক্সিন বা বর্জ্য পদার্থগুলো সঠিকভাবে শরীর থেকে বেরিয়ে না গেলে তা শরীর ব্যথাকে দীর্ঘায়িত করতে পারে।
করণীয়:
-
পর্যাপ্ত বিশ্রাম: জ্বর পরবর্তী সময়ে শরীরকে পুরোপুরি সুস্থ হতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম খুব জরুরি।
-
পুষ্টিকর খাবার: ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন, যা শরীরের শক্তি ফিরে পেতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
-
পর্যাপ্ত পানি পান: শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও তরল পানীয় পান করুন।
-
হালকা ব্যায়াম: যদি ব্যথার তীব্রতা কম থাকে, তাহলে হালকা স্ট্রেচিং বা হাঁটাচলা পেশীগুলোকে সচল রাখতে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
-
চিকিৎসকের পরামর্শ: যদি ব্যথা তীব্র হয়, দীর্ঘদিন ধরে থাকে, বা এর সাথে অন্য কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসক কারণ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা দিতে পারবেন।
সাধারণত, জ্বর পরবর্তী ব্যথা কয়েক দিন বা সপ্তাহের মধ্যে নিজে থেকেই কমে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং তখন চিকিৎসকের সাহায্য প্রয়োজন।
সাব্বির