ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৯ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

পারকিনসন রোগ সম্ভবত মস্তিষ্কে নয়, শুরু হতে পারে কিডনি থেকে!

প্রকাশিত: ০১:৫৩, ২৯ জুন ২০২৫

পারকিনসন রোগ সম্ভবত মস্তিষ্কে নয়, শুরু হতে পারে কিডনি থেকে!

ছবি: সংগৃহীত।

দীর্ঘদিন ধরে পারকিনসন রোগকে মস্তিষ্কের একমাত্র স্নায়বিক ব্যাধি হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে এসেছে, যেখানে ডোপামিন হরমোনের ঘাটতির ফলে স্নায়বিক ক্ষতি হয়। তবে চীনের উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি নতুন গবেষণা বলছে, এই রোগের সূচনা হতে পারে শরীরের এক অপ্রত্যাশিত অঙ্গে—কিডনিতে।

গবেষণাটি মূলত ‘আলফা-সিনিউক্লিন’ (α-Syn) নামের একটি প্রোটিনকে কেন্দ্র করে, যা পারকিনসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। যখন এই প্রোটিনের গঠনে ত্রুটি দেখা দেয় ও এটি দলা পাকিয়ে জমে যায়, তখন তা মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতায় ব্যাঘাত ঘটায়।

গবেষকরা বলছেন, এই ভুলভাবে গঠিত α-Syn প্রোটিন শুধু মস্তিষ্কেই নয়, কিডনিতেও জমতে পারে। তারা ধারণা করছেন, এই প্রোটিন কিডনি থেকে মস্তিষ্কে স্থানান্তরিত হয়ে পারকিনসনের সূচনায় ভূমিকা রাখতে পারে।

গবেষণাপত্রে গবেষকরা লিখেছেন, “আমরা প্রমাণ পেয়েছি যে কিডনি একটি পেরিফেরাল অঙ্গ হিসেবে প্যাথলজিকাল α-Syn-এর উৎস হিসেবে কাজ করে।”

গবেষণার অংশ হিসেবে গবেষকরা জেনেটিকালি তৈরি ইঁদুর ও মানুষের টিস্যু নমুনা পরীক্ষা করেন—এর মধ্যে ছিল পারকিনসন ও ‘লুই বডি’ ডিমেনশিয়া আক্রান্ত রোগীদের টিস্যু এবং দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নমুনা।

গবেষণায় দেখা যায়, পারকিনসন ও লুই বডি ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ১১ জনের মধ্যে ১০ জনের কিডনিতে অস্বাভাবিক α-Syn জমা ছিল। কিডনি রোগে আক্রান্ত কিন্তু কোনো স্নায়বিক সমস্যাহীন ২০ জনের মধ্যে ১৭ জনের দেহেও এই প্রোটিনের ত্রুটিপূর্ণ গঠন পাওয়া গেছে। এটি ইঙ্গিত দেয়, কিডনিই হতে পারে এই ক্ষতিকর প্রোটিনের মূল জমার স্থান, যা পরবর্তীতে মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে।

ইঁদুরের উপর করা পরীক্ষায় দেখা যায়, সুস্থ কিডনিযুক্ত ইঁদুর দেহে ইনজেক্ট করা α-Syn পরিষ্কার করে ফেলতে পারে, কিন্তু কিডনির কার্যকারিতা নষ্ট হওয়া ইঁদুরদের দেহে এই প্রোটিন জমে এবং পরে তা মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে। যখন কিডনি ও মস্তিষ্কের মধ্যবর্তী স্নায়ু বিচ্ছিন্ন করা হয়, তখন এই প্রোটিনের ছড়ানো বন্ধ হয়।

এছাড়া রক্তের মাধ্যমেও এই প্রোটিন মস্তিষ্কে যেতে পারে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন। রক্তে α-Syn এর পরিমাণ কম থাকলে মস্তিষ্কের ক্ষতিও কম হয়।

যদিও গবেষণার নমুনা সংখ্যা সীমিত এবং ইঁদুরের দেহে দেখা ফলাফল সরাসরি মানুষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, তবুও গবেষণার এই নতুন দিক পারকিনসন রোগের চিকিৎসায় ভবিষ্যতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে।

গবেষকরা বলছেন, আলঝেইমার রোগের মতোই পারকিনসনও বিভিন্ন উপায় ও ঝুঁকির মাধ্যমে উদ্ভূত হতে পারে। আগে ধারণা করা হতো, রোগটি অন্ত্রে (gut) শুরু হয়; এখন ধারণা করা হচ্ছে, কিডনিও এতে যুক্ত।

গবেষণাপত্রে আরও বলা হয়েছে, “রক্ত থেকে α-Syn অপসারণ পারকিনসনের অগ্রগতি রোধ করতে পারে—যা লুই বডি সংক্রান্ত রোগগুলোর চিকিৎসা ব্যবস্থায় নতুন দৃষ্টিভঙ্গি যোগ করতে পারে।”

সূত্র: https://short-link.me/15YjQ

মিরাজ খান

×