
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বে আধিপত্য বিস্তারের এক অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত হয় পারমাণবিক অস্ত্র। তবে ইতিহাস বলে, এই অস্ত্র মানবজাতির জন্য মারাত্মক ঝুঁকি ও ধ্বংসের প্রতীক। তাই বিভিন্ন সময় কিছু দেশ পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে স্বেচ্ছায় সরে এসেছে এবং অস্ত্রগুলো ধ্বংস করেছে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে। এমনই পাঁচটি দেশের অনন্য দৃষ্টান্ত আজ বিশ্বজুড়ে আলোচনার বিষয়।
নয়টি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ, কিন্তু ব্যতিক্রম রয়েছে
বর্তমানে বিশ্বের ৯টি দেশ পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ হিসেবে স্বীকৃত। তবে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (NPT)-তে স্বাক্ষর করেছে ১৮৯টি দেশ, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও চীন, এই পাঁচটি স্বীকৃত পারমাণবিক শক্তিধর দেশও রয়েছে।
তবে এর বাইরে এমন পাঁচটি দেশ রয়েছে যারা একসময় পারমাণবিক কর্মসূচিতে যুক্ত ছিল, বা অস্ত্রের অধিকারী ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে তা স্বেচ্ছায় বন্ধ করে দিয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা: নিজের হাতে তৈরি, নিজের হাতেই ধ্বংস
দক্ষিণ আফ্রিকা ইতিহাসের একমাত্র দেশ যারা নিজেরা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে পরে স্বেচ্ছায় ধ্বংস করেছে।
* ১৯৮০-এর দশকে তারা ছয়টি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করেছিল।
* কিন্তু ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে রাজনৈতিক পরিবর্তন ও আন্তর্জাতিক চাপে তারা কর্মসূচি বন্ধ করে।
*১৯৯১ সালে তারা NPT-তে স্বাক্ষর করে* এবং পুরোপুরি পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত দেশ হয়ে ওঠে।
ইউক্রেন: উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ১৯০০ বোমা
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ইউক্রেনের ভূখণ্ডে প্রায় ১৯০০টি পারমাণবিক অস্ত্র রয়ে যায়।
* স্বাধীনতার পর ১৯৯৪ সালে বুদাপেস্ট মেমোরেন্ডামে স্বাক্ষর করে ইউক্রেন এই অস্ত্রগুলো রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর করে।
* এরপর তারা NPT-তে যোগ দেয় এবং নিজেকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত ঘোষণা করে।
বেলারুশ ও কাজাখস্তান: সোভিয়েতের অস্ত্র ফিরিয়ে দিল যারা
সোভিয়েতের অবসানের পর বেলারুশ ও কাজাখস্তানের ভূখণ্ডেও পারমাণবিক অস্ত্র অবশিষ্ট ছিল।
*বেলারুশ:*
১৯৯০-এর দশকে অস্ত্রগুলো রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর করে এবং ১৯৯৩ সালে *NPT-তে যোগ দেয়*।
*কাজাখস্তান:*
প্রায় ১,৪০০টি পারমাণবিক অস্ত্র ছিল তাদের হাতে।
১৯৯৪ সালে সেগুলো *রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর* করে তারা *পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের পথ বেছে নেয়*।
লিবিয়া: গোপন কর্মসূচির স্বেচ্ছা পরিত্যাগ
আফ্রিকার দেশ লিবিয়া ১৯৭০-এর দশক থেকে গোপনে একটি পারমাণবিক কর্মসূচি পরিচালনা করছিল।
*কিন্তু ২০০৩ সালে মুয়াম্মার গাদ্দাফির সরকার আন্তর্জাতিক চাপ ও কূটনৈতিক আলোচনার পর কর্মসূচি পরিত্যাগের ঘোষণা দেয়।
*তারা সব পারমাণবিক উপকরণ ও যন্ত্রপাতি আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের কাছে হস্তান্তর করে, এবং NPT-এর শর্ত মেনে চলে।
বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যতিক্রম। তারা নৈতিক ও রাজনৈতিক বিবেচনায় নিজে থেকে অস্ত্র তৈরি করে তা ধ্বংস করেছে। অন্যদিকে, ইউক্রেন, বেলারুশ, কাজাখস্তান এবং লিবিয়া অনেকাংশে আন্তর্জাতিক চাপ, কূটনৈতিক প্রতিশ্রুতি এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতার অভাবে পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যেতে পারেনি।
এই দেশগুলোর পদক্ষেপ প্রমাণ করে, পারমাণবিক অস্ত্রের মালিকানা কোনো জাতির জন্য গর্ব নয়, বরং তা দায়িত্ব ও ঝুঁকির ভার। বিশ্ব যখন নতুন করে পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে পড়ছে, তখন এই পাঁচটি দেশের উদাহরণ হতে পারে শান্তির বার্তা।
ছামিয়া