ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে পড়েছে অক্সফোর্ড-ক্যামব্রিজ, বিশেষজ্ঞরা বলছেন যুক্তরাজ্যের জন্য এটি ‘রেড ফ্ল্যাগ’

প্রকাশিত: ১৯:৩৭, ২৮ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৯:৩৮, ২৮ জুন ২০২৫

বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে পড়েছে অক্সফোর্ড-ক্যামব্রিজ, বিশেষজ্ঞরা বলছেন যুক্তরাজ্যের জন্য এটি ‘রেড ফ্ল্যাগ’

ছবি: সংগৃহীত।

বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‌্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে পড়েছে যুক্তরাজ্যের নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে করে আন্তর্জাতিক প্রতিভা আকর্ষণ এবং উদ্ভাবনী সক্ষমতা ধরে রাখা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

২০২৬ সালের QS World University Rankings-এ ব্রিটেনের দুই মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় অক্সফোর্ড ও ক্যামব্রিজ যথাক্রমে এক ধাপ পিছিয়ে চতুর্থ ও ষষ্ঠ স্থানে নেমে এসেছে। এছাড়া, ৯০টি ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৫৪টির অবস্থান নিম্নমুখী, যার মধ্যে রয়েছে এডিনবরগ বিশ্ববিদ্যালয় (৭ ধাপ পিছিয়ে ৩৪তম) এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স (৬ ধাপ পিছিয়ে ৫৬তম)।

র‌্যাঙ্কিংয়ে গবেষণা, শিক্ষা অভিজ্ঞতা, কর্মসংস্থান, আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা ও টেকসই উন্নয়ন–এই সূচকগুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়।

কিংস্টন বিজনেস স্কুলের প্রধান সঙ্কর সিভারাজাহ বলেন, যুক্তরাজ্যের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় পিছিয়ে পড়লেও, এখনও ১৭টি প্রতিষ্ঠান শীর্ষ ১০০-তে রয়েছে। এর মধ্যে ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন, অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ ও ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন শীর্ষ দশে অবস্থান ধরে রেখেছে।

তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, “যুক্তরাজ্যের উচ্চশিক্ষা খাত এখন তীব্র আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা, গবেষণায় অর্থায়নের ঘাটতি, শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত ও আন্তর্জাতিকীকরণ সূচকে দুর্বলতার কারণে সংকটে পড়েছে।”

তিনি বলেন, চীন, সিঙ্গাপুর ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলো টেকসইভাবে গবেষণা, আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব এবং শিক্ষকমণ্ডলী নিয়োগে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে, যেখানে যুক্তরাজ্য পিছিয়ে পড়ছে।

‘ইউনিভার্সিটিজ ইউকে’ এর এক জরিপে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে ৬০টি ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অনেকেই গবেষণায় বিনিয়োগ কমানো, বিভাগ বন্ধ ও শিক্ষক ছাঁটাইয়ের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে ৪৯% বিশ্ববিদ্যালয় কোর্স বন্ধ করেছে, ২৫% বাধ্যতামূলক ছাঁটাই করেছে, ১৯% গবেষণা বাজেট কমিয়েছে।

এর প্রধান কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ২০১৭ সালে টিউশন ফি স্থির করে £৯,২৫০ নির্ধারণ করার পর থেকে সেটি মুদ্রাস্ফীতির সাথে বাড়েনি, ফলে অর্থনৈতিক চাপ বেড়েছে।

এছাড়া, যুক্তরাজ্যের প্রায় ৪৩% বিশ্ববিদ্যালয় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ঘাটতিতে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ‘অফিস ফর স্টুডেন্টস’, যা উচ্চশিক্ষার নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এর অন্যতম কারণ, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভর্তি হ্রাস।

অ্যান্টলার নামক ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্মের প্রেসিডেন্ট এডওয়ার্ড নাইট বলেন, র‍্যাঙ্কিং পতনের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর প্রস্তাবিত ৬% কর এই দেশকে আরও অপছন্দনীয় গন্তব্যে পরিণত করতে পারে।

তিনি বলেন, “চীন ও ভারতে এখন শিক্ষার্থীদের মাঝে একটা নতুন বার্তা প্রচার হচ্ছে—বিদেশে না গিয়েও দেশে থেকে ভালোভাবে পড়াশোনা করা যায়। এর সঙ্গে কর আরোপ যুক্ত হলে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য এটি নিরুৎসাহজনক পরিবেশ তৈরি করবে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পতন যুক্তরাজ্যের প্রযুক্তি ও স্টার্টআপ খাতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যদিও যুক্তরাজ্য ইউরোপে উদ্ভাবনের শীর্ষে থাকলেও, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের তুলনায় ইউরোপ অনেক পিছিয়ে।

নাইট উদাহরণ দিয়ে বলেন, চীনে প্রাথমিক স্তর থেকেই জাতীয় পাঠ্যক্রমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র $৫০০ বিলিয়নের Stargate Project চালু করেছে, এবং আবু ধাবিতে AI-ভিত্তিক MGX বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে।

তিনি বলেন, “ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জন্ম নেওয়া DeepMind ও Darktrace-এর মতো প্রতিষ্ঠান শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছে, কারণ মার্কিন বাজারে তাদের মূল্যায়ন বেশি এবং ব্যবসায়িক পরিবেশ আরও সহায়ক।”

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, Revolut-এর মতো বিলিয়ন ডলারের কোম্পানি কোথায় তালিকাভুক্ত হবে—যুক্তরাষ্ট্রে, না যুক্তরাজ্যে? Spotify যেমন স্টকহোমে শুরু হয়েছিল, কিন্তু তালিকাভুক্ত হয়েছে NASDAQ-এ।“আপনি যদি এমন প্রতিষ্ঠানগুলো ধরে রাখতে চান, তাহলে তাদের জন্য সহায়ক, উদ্ভাবনবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে,” —যোগ করেন নাইট।

তথ্যসূত্র: সিএনবিসি, QS Rankings

সায়মা ইসলাম

×