
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে গারো পাহাড় এক অনন্য প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যের নাম। মেঘলা আকাশ, সবুজ বন, ঢেউ খেলানো পাহাড় আর নিসর্গে ঘেরা এই অঞ্চল যেন প্রকৃতির আঁকা এক নিখুঁত ক্যানভাস। শ্রীবরদী, নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলায় বিস্তৃত এই গারো পাহাড় শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য নয়, এর ভৌগোলিক, পরিবেশগত এবং নৃতাত্ত্বিক গুরুত্বও অপরিসীম।
গারো পাহাড়ের একটি বড় অংশ ভারত সীমান্ত ঘেঁষা, বিশেষ করে মেঘালয়ের ঘন অরণ্যের ধারঘেঁষে এর অবস্থান। এখানকার ভূমিরূপ পাহাড়ি হলেও ততটা খাড়া নয়, বরং ঢালু ও তরঙ্গায়িত। এ কারণে পাহাড়ি কৃষিও এখানে সহজতর। স্থানীয় আদিবাসী গারো, হাজং, কোচসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ যুগ যুগ ধরে এই বনভূমিতে বসবাস করে আসছে, যাদের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতি এই প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
গারো পাহাড়ে রয়েছে মধুটিলা ইকোপার্ক, লাউচাপড়া পিকনিক স্পট যা এখন পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণীয় স্থান। এছাড়া গজনী অবকাশ কেন্দ্র, রাংটিয়া রেঞ্জের বনের ভিতরে থাকা ঝরনা ও পাহাড়ি ঝোপঝাড় প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য দারুণ অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে। বনের মাঝে মাঝে দেখা মেলে বনহাতি, হরিণ, বানর, নানা প্রজাতির পাখি ও বিরল প্রজাতির ঔষধি গাছগাছালি। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য এই অঞ্চল অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয়।
তবে এই প্রকৃতির ঐশ্বর্য আজ হুমকির মুখে। নির্বিচারে গাছ কাটা, পাহাড় কাটা, বালু উত্তোলন, এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও চাষাবাদের জন্য বন উজাড় করার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এভাবে চলতে থাকলে এই গারো পাহাড় শুধু পরিবেশের জন্য নয়, সেখানকার আদিবাসী সংস্কৃতির জন্যও ভয়াবহ হুমকি হয়ে উঠবে।
সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো ইতোমধ্যে এই এলাকায় টেকসই বন ব্যবস্থাপনা, কমিউনিটি ফরেস্ট এবং পর্যটন উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। গারো সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা চায়, তাদের জীবনধারা ও পরিবেশ একে অপরের সম্পূরক হিসেবেই টিকে থাকুক, যেন প্রকৃতি ও মানুষ একসাথে বাঁচে।
গারো পাহাড় শুধু একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থান নয়, এটি একটি জীবন্ত পরিবেশ ও সংস্কৃতির ভাণ্ডার। এর সবুজ স্নিগ্ধতা, পাহাড়ি বাতাস আর বন্যপ্রাণের ডাক যেন প্রকৃতির এক গভীর আহ্বান। এই অপার রহস্যঘেরা ভাণ্ডারকে টিকিয়ে রাখা আমাদের দায়িত্ব নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার ।
Jahan