
ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর অভিজাত এলাকা উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে হোটেল মিলিনায় সংঘটিত দখলচেষ্টার ঘটনায় ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১। পুরনো ব্যবসায়িক বিরোধকে কেন্দ্র করে মোটরসাইকেল বহর নিয়ে সশস্ত্রভাবে হোটেল দখলের চেষ্টা করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। তবে র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি ও তাৎক্ষণিক অভিযান এবং উত্তরা পূর্ব থানার পুলিশের সমন্বিত তৎপরতায় বড় ধরনের সহিংসতা এড়ানো সম্ভব হয়।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, শনিবার ২৮ জুন ২০২৫ দুপুর ১টা ৩০ মিনিটের দিকে আনোয়ার হোসেন নামের এক ব্যবসায়ীর মালিকানাধীন হোটেল মিলিনায় শফিক মোল্লা (৩০) নামক এক ব্যক্তির নেতৃত্বে ২৪ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল মোটরসাইকেলে করে হোটেলে আসে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তারা ১০টি মোটরসাইকেলে করে এসে হোটেলের মূল ফটকে জড়ো হয়ে উচ্চস্বরে হুমকি দিতে থাকে এবং ভেতরে ঢোকার চেষ্টা চালায়। পুরো মব ছিল সংঘটিত, হোটেল কর্মীদের আতঙ্কগ্রস্ত করে তোলে।
র্যাব-১-এর একটি গোয়েন্দা দল আগেই এই চক্রের গতিবিধি নজরে রাখছিল। দূর থেকে ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে গেলে মব সদস্যরা তাদের ঘিরে ধরে এবং ভিডিও ধারণে বাধা দেয়। র্যাব তাৎক্ষণিক টহল ইউনিটকে ঘটনাস্থলে পাঠায়। পাশাপাশি উত্তরা পূর্ব থানা পুলিশের একটি দল দ্রুত সংযুক্ত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
র্যাবের অভিযানে ঘটনাস্থল থেকেই ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলো—মোঃ সাজ্জাদ হোসেন (২৮), মোঃ শফিক মোল্লা (৩০), মোঃ আরিফুল ইসলাম (৩০), মোঃ তন্ময় হোসেন শাওন (২৭), মোঃ রবিউল ইসলাম (২৫), মোঃ আনোয়ার হোসেন আশিক (২৭), মোঃ সাইফুল ইসলাম সাগর (২৭), মোঃ জালাল খান (৩০) ও মোঃ আমির (২১)।
তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজে বাধা প্রদান, বেআইনি জনসমাবেশ গঠন এবং হোটেল দখলের উদ্দেশ্যে হামলা চেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করে তাদের শনাক্তের কাজ চলছে।
র্যাব-১ এর একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, "যে কোনো ব্যবসায়িক বিরোধ আইনিভাবে সমাধানের পথ রয়েছে। হঠাৎ করে মব গঠন করে দখলের চেষ্টা চালানো একটি গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ। এই চক্র পরিকল্পিতভাবে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করতে চেয়েছিল, কিন্তু আমরা আগেই তথ্য পেয়েছিলাম এবং দ্রুত অভিযান চালিয়ে ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই।" তিনি আরও বলেন, "আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজে বাধা প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।"
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বলেন— “সম্প্রতি রাজধানীতে বাণিজ্যিক সম্পত্তি ও হোটেল দখলকে কেন্দ্র করে সহিংস ঘটনা বাড়ছে। এসব ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক পরিচয়ধারী, চাঁদাবাজ চক্র বা পুরনো ব্যবসায়িক শত্রুতার যোগসূত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গোয়েন্দা নজরদারি ও দ্রুত প্রতিক্রিয়া না থাকলে সাধারণ মানুষ আরও বড় ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় পড়ত।” তিনি বলেন, “র্যাব ও পুলিশের মধ্যে যে দ্রুত সমন্বয় হয়েছে তা প্রশংসনীয়। তবে দীর্ঘমেয়াদে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে জমি ও হোটেল সংক্রান্ত বিরোধগুলোর দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া দরকার।”
স্থানীয় দোকান মালিক হাফিজুর রহমান বলেন, “দেখলাম একদল ছেলে মোটরসাইকেল নিয়ে এসে চিৎকার করছে, হোটেলে ঢুকতে চাইছে। আমরা ভেবেছিলাম হামলা হবে। পরে র্যাব এসে দ্রুত পরিস্থিতি শান্ত করে। তাদের জন্য বড় কিছু ঘটেনি।” আরেক বাসিন্দা বলেন, “যেভাবে তারা ঢুকছিল, মনে হচ্ছিল কিছু একটা ঘটবেই। র্যাব না আসলে হয়তো ভাঙচুর-রক্তপাত হতো।”
এই ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গোয়েন্দা তথ্য, দ্রুত পদক্ষেপ এবং সংস্থাগুলোর সমন্বিত কাজ অপরিহার্য। ব্যবসায়িক বিরোধকে অস্ত্রের মাধ্যমে সমাধান করার অপচেষ্টা কখনোই বরদাশতযোগ্য নয়।
র্যাব ও পুলিশ এ ঘটনায় যে ধৈর্য, বুদ্ধিমত্তা ও পেশাদারিত্ব দেখিয়েছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য এবং শহরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ ধরনের দৃঢ় অবস্থান ভবিষ্যতেও বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা।
আসিফ