
তথ্যপ্রযুক্তি- উদ্ভাবন ও দক্ষতায় এগিয়ে চলার গল্প
বৈশ্বিক প্রযুক্তি অঙ্গনে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে সাফল্য পাচ্ছে। মেধাবী তরুণদের শক্তিশালী উপস্থিতি, উদ্যোক্তাদের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণ এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জ্ঞানের বিস্তারের মাধ্যমে দেশের আইটি খাত কেবল সফটওয়্যার রপ্তানি নয়, ফিনটেক, টেলিকম, এন্টারপ্রাইজ সফটওয়্যার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো ক্ষেত্রেও নিজস্ব উদ্ভাবন তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের একাধিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সমাধান সরবরাহ করছে। এরা কেবল আউটসোর্সিং কোম্পানি নয়, বরং বাস্তব সমস্যার স্থানীয় সমাধানে দক্ষ, পূর্ণাঙ্গ উদ্ভাবনধর্মী প্রতিষ্ঠান। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এরকম কয়েকটি কোম্পানির সাফল্যের গল্প এখানে তুলে ধরা হলো। সঠিক নীতিগত সহায়তা, বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই খাত দেশের ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির অন্যতম চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারে।
ফিনটেক ও এন্টারপ্রাইজ সফটওয়্যারে পথপ্রদর্শক ॥ ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকাভিত্তিক সফটওয়্যার কোম্পানি ‘ব্রেইন স্টেশন ২৩’ ফিনটেক এবং এন্টারপ্রাইজ সফটওয়্যার তৈরিতে অগ্রগামী একটি প্রতিষ্ঠান। ২০১৭ সালে সিটি ব্যাংকের জন্য তৈরি করা ‘সিটি টাচ’ ছিল বাংলাদেশের প্রথম দেশীয় মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৭০০ প্রকৌশলী কর্মরত এবং ৩০০-র বেশি ক্লায়েন্টকে বিভিন্ন পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে কাস্টম সফটওয়্যার, ওয়েব প্ল্যাটফর্ম এবং ক্লাউড পরিষেবা।
‘ব্রেইন স্টেশন ২৩’ বর্তমানে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ায় মতো আন্তর্জাতিক পরিম-লে বাজার সম্প্রসারণ করছে। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার অর্ধেকেরও বেশি বিদেশ থেকে আসছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা বিভাগ বলছে, বিদেশি আয় আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। স্থানীয় প্রতিভা ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের সংমিশ্রণে এটি বাংলাদেশের ফিনটেক উদ্ভাবনের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
আন্তর্জাতিক বাজার প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো কিভাবে সুযোগ নিতে পারে, এ প্রশ্নে ব্রেইন স্টেশন এর সিএফও মুসাব্বির আলম দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের দেশের আইসিটি খাত যে সুযোগটা নিতে পারে সেটা হল সস্তা শ্রম।
আমাদের গার্মেন্টস খাত এত বড় হওয়ার প্রধান কারণ হলো, সস্তা শ্রম। তবে গার্মেন্টস খাতে যে সমস্ত রিসোর্স পাওয়া যায়, আমাদের এই খাতে তেমন নয়, এখানে একটা মিনিমাম যোগ্যতাসম্পন্নরাই যুক্ত হয়। তবে তুলনামূলকভাবে বললে, ইউরোপ বা উন্নত বিশ্বের জীবনমানের চেয়ে আমাদের দেশের জীবনমান কিছুটা অনুন্নত হওয়ায় এখানে ওইসব দেশের চেয়ে এই খাতে আমাদের দেশের শ্রম কিছুটা সস্তা করা যায়।
দ্বিতীয়ত হলো আমাদের রিসোর্স। আমাদের হিউজ পরিমাণ রিসোর্স আছে। এখন এই রিসোর্সগুলোকে যথাযথ ট্রেনিং দিয়ে রাইট ওয়েতে সেল করতে হবে।
কোম্পানির ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে এই কর্মকর্তা জানান, ভবিষ্যত পরিকল্পনা বলতে আমরা পুরোপুরি গ্লোবাল প্রতিষ্ঠান হতে চাচ্ছি। ২০২৮ সালের মধ্যে অন্তত ১০-১২টি দেশে কার্যক্রম চলবে, অনশোর-অফশোর মিলিয়ে। অনশোর-অফশোর মানে, ধরুন নেদারল্যান্ডসে আমরা একটি কোম্পানি অনবোর্ড করব। সেক্ষেত্রে ১০ জন ডেভেলপার প্রয়োজন হলে, বাংলাদেশি ৪ জন এবং সেখানকার ৬ জন ডেভেলপার নেব। এভাবে আমরা কাজ সম্পন্ন করব। এতে ভালো একটি প্রাইজ পাওয়া যায়, পাশাপাশি নলেজ শেয়ার হওয়ায় বেটার আউটপুট পাওয়া যাবে। এখন সরকার এবং পলিসি যদি এটাকে সাপোর্ট করে তাহলে হয়তো সম্ভব হবে। আমরা মনে করি এটা সম্ভব হলে শুধু আমাদের কোম্পানিই প্রতিবছর ১০০ মিলিয়ন ডলার আয় করতে পারবে।
টেলিকম ও মেসেজিং প্ল্যাটফর্মে আন্তর্জাতিক সাফল্য ॥ বাংলাদেশের আরেকটি আইটি প্রতিষ্ঠান ‘রিভ সিস্টেমস’ যা আন্তর্জাতিকভাবে বিশেষ করে টেলিকম খাতে পরিচিতি পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ভিওআইপি ও ক্লাউড-টেলিফোনি, এসএমএস ও চ্যাট প্ল্যাটফর্ম এবং ওএসএস/বিএসএস সফটওয়্যার তৈরি করে থাকে। এদের পণ্য বিভিন্ন দেশে মোবাইল ডায়ালার, কল রাউটিং ও মেসেজিং সার্ভিসে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বেসিস সফটএক্সপো ২০২৩-এ রিভ সিস্টেমস তাদের শক্তিশালী এসএমএস প্ল্যাটফর্ম, ওটিটি সমাধান এবং লাইভ চ্যাট পণ্য প্রদর্শন করে। এটি প্রমাণ করে যে রিভ কমিউনিকেশন টেকনোলজিতে কতটা শক্তিশালী। আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী যেমন মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস-এ অংশগ্রহণ করে, রিভ বাংলাদেশকে বৈশ্বিক টেলিকম প্রযুক্তির মানচিত্রে স্থান করে দিয়েছে।
ডিজিটাল পেমেন্ট ও ই-কমার্সে অগ্রণী ॥ ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এসএসএল ওয়্যারলেস বাংলাদেশের প্রথম ও বৃহত্তম অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে ‘ঝঝখঈঙগগঊজত’ চালু করে। এটি বর্তমানে ৩,৫০০-এর বেশি মার্চেন্টকে সেবা দিচ্ছে এবং ২০২২ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পেমেন্ট সিস্টেম অপারেটরের লাইসেন্স পেয়েছে। এছাড়া, এসএসএল ওয়্যারলেস এন্টারপ্রাইজ মেসেজিং, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস ও ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করে।
এদের লজিস্টিক সমাধান খঙএরঞঅ ২০১৯ সালের ইঅঝওঝ ওঈঞ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংক-ডেইলি স্টার ওঈঞ অ্যাওয়ার্ডে ‘ডিজিটাল কমার্স কোম্পানি অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার লাভ করে। এছাড়া, ওঝঙ ২৭০০১ সার্টিফিকেশন তাদের নিরাপত্তা ও গুণগত মানের প্রতি প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে।
স্মার্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় সাফল্য ॥ ডেটাসফট নেক্সট (পূর্বে ডেটাসফট) বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় আইটি প্রতিষ্ঠান, যা বড় পরিসরে ইনফ্রাস্ট্রাকচার এবং ফিনটেক অটোমেশন নিয়ে কাজ করে। গত ২৪ বছর ধরে ব্যাংকিং, লজিস্টিকসসহ বিভিন্ন খাতে কার্যকর সমাধান দিয়ে আসছে। বর্তমানে এখানে ৩০০-এর বেশি পেশাদার কাজ করছেন।
ডেটাসফট সরকারি খাতেও অটোমেশন প্রকল্পে নেতৃত্ব দিয়েছে, যেমন বন্দর ও কাস্টমস প্রক্রিয়ার ডিজিটাইজেশন। এরা বাংলাদেশের প্রথম প্রতিষ্ঠান যারা অজ/ঠজ, ওড়ঞ এবং মেশিন লার্নিং নিয়ে কাজ শুরু করে। আজ, এ প্রযুক্তিগুলো দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি এআই-ভিত্তিক জালিয়াতি শনাক্তকরণ, শিল্প প্রশিক্ষণ এবং স্মার্ট সাপ্লাই চেইন তৈরি করছে।
বায়োমেট্রিক পরিচয়ে পথিকৃত ॥ বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতে টাইগার আইটি অন্যতম অগ্রগামী প্রতিষ্ঠান। তারা দেশের প্রথম আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অঁঃড়সধঃবফ ইরড়সবঃৎরপ ওফবহঃরভরপধঃরড়হ ঝুংঃবস (অইওঝ) তৈরি করেছে, যেখানে রয়েছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ফেস এবং আইরিস মিলিয়ে পরিচয় যাচাইয়ের ক্ষমতা।
তাদের ঞরমবৎঅঋওঝ (স্বয়ংক্রিয় আঙ্গুলচিহ্ন শনাক্তকরণ সিস্টেম) পণ্যটি ঘওঝঞ (ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেকনোলজি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) কর্তৃক প্রত্যয়িত। ঞরমবৎওঞ ল্যাবরেটরির অ্যালগরিদমগুলো বৈশ্বিক পরীক্ষায় শীর্ষস্থান অধিকার করেছে - ২০২৩ সালে টহরাবৎংরঃু ড়ভ ইড়ষড়মহধ’র ঋঠঈ-ড়হমড়রহম প্রতিযোগিতায় ঞরমবৎঅঋওঝ প্রথম স্থান পেয়েছে এবং ২০১৮ সালে ঘওঝঞ কর্তৃক প্রকাশিত ওৎরং ঊীপযধহমব (ওজঊঢ) ওঢ পার্ট ওয়ান: আইরিস শনাক্তকরণের কার্যকারিতা মূল্যায়নে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে।
টাইগার আইটির নির্বাহী পরিচালক রিফাত আবেদিন বলেন, ‘বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র (ঘওউ) ব্যবস্থা, পুলিশ, বিআরটিএ সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় টাইগার আইটির সিস্টেম ব্যবহৃত হচ্ছে। আমরা সম্পূর্ণ ওপেন-সোর্স প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে এই সমাধান তৈরি করেছি, যা প্রমাণ করে দেশীয় প্রযুক্তিও বৈশ্বিক মানে পৌঁছাতে পারে। এর মাধ্যমে টাইগারআইটি সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় করেছে এবং কোটি কোটি ডলার বিদেশে পাঠানো (বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়) রোধ করতে সক্ষম হয়েছে।”
পরিচয় শনাক্তকরণ সমাধানের বাইরেও, টাইগারআইটি চিপভিত্তিক নিরাপদ কার্ড প্রযুক্তিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে, যেখানে বিআরটিএ’র ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্রের স্মার্ট কার্ড আন্তর্জাতিকভাবে তাদের নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক মানদ-ের সঙ্গে সামঞ্জস্যতার জন্য স্বীকৃত।
রিফাত আবেদিন আরো বলেন, ‘আমাদের এন্টারপ্রাইজ সলিউশন ইতোমধ্যে ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে চাহিদা তৈরি করেছে। নেপাল, ভুটান, তাজিকিস্তান, মলদোভা এবং পোল্যান্ডে আমাদের কোম্পানির জাতীয় পরিচয়পত্র ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। আমরা স্মার্ট কার্ড ও নিরাপদ মেসেজিং প্ল্যাটফর্মের দিকেও কাজ করছি, যা আফ্রিকার একাধিক দেশ ব্যবহার করার আগ্রহ দেখিয়েছে।’
অপার সম্ভাবনার একটি খাত ॥ ব্রেইন স্টেশন ২৩, রিভ সিস্টেমস, এসএসএল ওয়্যারলেস, ডেটাসফট নেক্সট ও টাইগারআইটির মত প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্জন প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশের আইটি খাত ইতোমধ্যেই উদ্ভাবন ও প্রভাব রাখতে শুরু করেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো কেবল আউটসোর্সিং-এর বাইরে এসে বিশ্বমানের পণ্য ও সমাধান তৈরি করছে।
যুব ও দক্ষ জনবল, প্রতিযোগিতামূলক সেবা, এবং বাড়তে থাকা বৈশ্বিক সুনাম এই সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশের আইটি খাত আরও বিস্তৃতির পথে রয়েছে। তবে এর পূর্ণ সম্ভাবনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন কৌশলগত বিনিয়োগ, নীতিগত সহায়তা এবং দক্ষতা উন্নয়নে মনোযোগ।
যদি সঠিক পরিকল্পনাও সহযোগিতা করা হয়, এই খাতই হতে পারে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক রূপান্তরের কেন্দ্রবিন্দু- তৈরি করতে পারে কর্মসংস্থান, বাড়াতে পারে রপ্তানি এবং বাংলাদেশকে পরিণত করতে পারে একটি স্বীকৃত বৈশ্বিক প্রযুক্তি কেন্দ্রে।
আগস্ট থেকে নগরীতে
(প্রথম পৃষ্ঠার পর)
হয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগের নক্সা অনুযায়ী তৈরি ব্যাটারিচালিত ই-রিক্সা ব্যবস্থাকে শৃঙ্খলিত ও নিরাপদ করার লক্ষ্যে চালকদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রশিক্ষক তৈরির কর্মসূচির উদ্বোধন করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। সেখানে জানানো হয়েছে, বুয়েটের ডিজাইন অনুযায়ী রিক্সাগুলোর সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো চালানো যাবে ঢাকার প্রধান সড়ক বাদ দিয়ে পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে। প্রশিক্ষিত চালকরাই লাইসেন্স পাবেন এবং এই ব্যবস্থার মাধ্যমে নগরীতে রোড সেফটির একটি কার্যকর কাঠামো গড়ে উঠবে।
শনিবার গুলশান নগর ভবনের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। উপদেষ্টা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম অংশীদার ছিলেন আমাদের রিক্সাওয়ালা ভাইয়েরা। তাদের যখন আমরা নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে লাইসেন্সিং সিস্টেমে আনব, তখন আর কেউ তাদের অবৈধ বলার সুযোগ পাবে না। তারা যথাযথ নাগরিক মর্যাদা নিয়ে চলতে পারবেন।
ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, আগামী আগস্ট মাস থেকেই বুয়েটের ডিজাইন করা ব্যাটারিচালিত ই-রিক্সা নগরীর অলিগলিতে চলতে দেখা যাবে।
আমরা এই যানবাহনের ডিজাইনে নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছি। প্রশিক্ষিত চালকরাই লাইসেন্স পাবেন এবং এই ব্যবস্থার মাধ্যমে নগরীতে রোড সেফটির একটি কার্যকর কাঠামো গড়ে উঠবে।
প্রশাসক আরও জানান, একটি মানসম্পন্ন, নির্ধারিত গতিসীমার মধ্যে চলাচলযোগ্য এবং প্রযুক্তিনির্ভর ই-রিক্সা ব্যবস্থা চালু করার মাধ্যমে নগরজীবনে সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব ও শৃঙ্খলিত গণপরিবহন বিকাশ পাবে। প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আওতায় নির্বাচিত ৩০০ জন প্রশিক্ষককে ‘মাস্টার ট্রেইনার’ হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে, যারা পরে ই-রিক্সাচালকদের প্রশিক্ষণ দেবেন। প্রথম দফায় ২০০ জন প্রশিক্ষককে তিন দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে ২৮, ২৯ ও ৩০ জুন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ই-রিক্সা আজ নগরজীবনের পরিচিত ও জনপ্রিয় বাহন হলেও এর ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘদিন ধরে শৃঙ্খলার অভাব ছিল।
এই খাতে রোড সেফটি, ট্রাফিক আইন ও যাত্রীসেবার উন্নয়ন নিশ্চিত করতেই প্রশিক্ষণ কর্মসূচিটি হাতে নেওয়া হয়েছে। বুয়েটের ডিজাইন অনুযায়ী রিক্সাগুলোর সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো চালানো যাবে ঢাকার প্রধান সড়ক বাদ দিয়ে পাড়া-মহল্লায় অলিগলিতে। প্রশিক্ষণের প্রথমদিনে অংশগ্রহণকারীরা প্রশিক্ষণ কনটেন্ট ও উপস্থাপন কৌশল শিখছেন।
দ্বিতীয় দিনে প্রশিক্ষণ প্রদানের চর্চা, আর তৃতীয় দিনে রিক্সার কারিগরি দিক ও রক্ষণাবেক্ষণের উপস্থাপনা শেখানো হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে ডিএনসিসি ও ডিএসসিসির মোট ১০টি অঞ্চলে প্রশিক্ষণ একযোগে পরিচালিত হচ্ছে। গুলশান নগর ভবন, উত্তরার অঞ্চল-১, মহাখালীর অঞ্চল-৩ এবং মিরপুরের অঞ্চল-২ ও ৪-এ এই কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া, বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ এহসান, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব প্রমুখ।