
ছবি: জনকণ্ঠ
আজ ১৬ জুন বাংলাদেশের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম জগতের ইতিহাসে এক কলঙ্কিত দিন, যা “সংবাদপত্রের কালো দিবস” নামে পরিচিত। ১৯৭৫ সালের এই দিনে দেশে স্বাধীন সংবাদপত্রের কণ্ঠ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সামরিক শাসনের শুরুতে একটি অধ্যাদেশ জারি করে ৪টি ছাড়া বাকি সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই পদক্ষেপ দেশের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক চর্চার ওপর এক ভয়াবহ আঘাত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।
১৯৭৫ সালের এই দিনে দেশের ১১টি জাতীয় দৈনিক এবং শতাধিক আঞ্চলিক পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হয়। শুধুমাত্র সরকার-নিয়ন্ত্রিত চারটি পত্রিকা—দৈনিক বাংলাদেশ টাইমস, দৈনিক জনকণ্ঠ, দৈনিক সংবাদ ও দৈনিক ইত্তেফাক—চালু রাখার অনুমতি দেওয়া হয়, তাও রাষ্ট্রীয় নজরদারির অধীনে। ফলস্বরূপ হাজার হাজার সাংবাদিক, কলাকুশলী, ছাপাখানার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েন।
গণমাধ্যমের ওপর এই নিষ্ঠুর বিধিনিষেধ শুধু পেশাগত স্বাধীনতা হরণ করেনি, তা ছিল গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে এক সুপরিকল্পিত আঘাত। তখনকার শাসকদের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্নমতকে রুদ্ধ করে রাষ্ট্রীয় বয়ানকে একমাত্র সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার আন্দোলনে তখন বহু সাংবাদিক হয়রানির শিকার হয়েছেন, কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়েছেন, অনেকের জীবন ও কর্মজীবন থমকে গেছে।
আজকের এই দিনে দেশের বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন, মানবাধিকার সংস্থা ও সুশীল সমাজ সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে থাকে। জাতীয় প্রেসক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) সহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে আলোচনা সভা, স্মরণানুষ্ঠান ও প্রতিবাদ কর্মসূচি আয়োজন করে থাকে ।
একটি জাতির আয়না যদি হয় সংবাদপত্র, তবে সেই আয়নায় কালিমা লেপন ছিল ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন।
এই দিনে সাংবাদিক সমাজ প্রত্যয় ব্যক্ত করে যেকোনো শাসন বা শক্তির মুখে সত্য প্রকাশের অধিকার কখনো বিসর্জন দেওয়া হবে না। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার এবং গণতন্ত্রের পক্ষে এই লড়াই চলবে অনন্তকাল।
সাব্বির