
ছবি: সংগৃহীত
বাড়ির দায়িত্ববান পুরুষটি—বাবা।
সন্তানদের পড়াশোনা, স্ত্রীর আবদার, ঘরোয়া বাজার, অফিসের কাজ—সব কিছু সামাল দেওয়ার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে তাঁর অদৃশ্য লড়াই। অনেক সময় নিজেকে এতটাই গুটিয়ে ফেলেন, যে বোঝা যায় না—মনের গভীরে উদ্বেগ আর অবসাদ বাসা বেঁধেছে কিনা।
🔎 কে বলেছে পুরুষরা অবসাদে ভোগেন না?
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা যেমন বলছে, তেমনই ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেল্থ অ্যান্ড নিউরোসায়েন্সেস (NIMHANS) এবং ন্যাশনাল মেন্টাল হেল্থ সার্ভে-এর তথ্য অনুযায়ী, ভারতের শহরাঞ্চলে প্রতি ২০ জন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজন অবসাদে ভোগেন। এই সমীক্ষা ২০১৫ সাল থেকে শুরু হয়ে গত কয়েক বছরে করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অবসাদ ও উদ্বেগ কেবল মহিলাদের সমস্যা নয়। যদিও পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মহিলাদের মধ্যে এই সমস্যা কিছুটা বেশি, তবু পুরুষরাও পিছিয়ে নেই।
কিন্তু পুরুষরা কষ্ট লুকিয়ে রাখেন কেন?
মনো-সমাজকর্মী মোহিত রণদীপ জানাচ্ছেন, পুরুষদের মানসিক যন্ত্রণা সহজে বোঝা যায় না, কারণ তাঁরা অনেক সময়ই সেটা প্রকাশ করতে চান না।
কেউ কাঁদেন না, কেউ নিজের মনোভাব বলেন না—তাই "সাধারণ মন খারাপ" আর প্রকৃত অবসাদের ফারাক ধরা পড়ে না।
কোন লক্ষণগুলোতে সতর্ক হবেন?
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ত্রিদিব চৌধুরী এবং মোহিত রণদীপ দু’জনেই বলছেন, পুরুষদের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন দেখা দিলে তা অবসাদের ইঙ্গিত হতে পারে। যেমন:
- আগ্রহের অভাব বা হঠাৎ নির্লিপ্ততা
- রেগে যাওয়া বা বিরক্ত হয়ে যাওয়া
- ঘুমে ব্যাঘাত বা অতিরিক্ত ঘুম
- সামাজিক দূরত্ব তৈরি করা
- কাজকর্মে উৎসাহ হারিয়ে ফেলা
- একাকীত্ব, আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি
- ভবিষ্যৎ নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা
বাবার মন ভালো রাখতে কী করবেন?
- তাঁর সঙ্গে কথা বলুন—খুব সাধারণ বিষয় নিয়েও, যেন মন খুলে বলতে পারেন।
- কাজের চাপ কমাতে সহযোগিতা করুন—শুধু আর্থিক নয়, আবেগিক সঙ্গও জরুরি।
- তাঁর আগ্রহের বিষয়গুলোতে প্রশ্রয় দিন—ঘুরতে যাওয়া, হবি ফিরিয়ে আনা ইত্যাদি।
- প্রয়োজনে পেশাদার সাহায্যের কথা বলুন, কিন্তু গোপনীয়তা বজায় রেখে।
বাবারা কষ্ট পেলে কাঁদেন না, বলেনও না। কিন্তু তার মানে এই নয়, তাঁদের কষ্ট নেই। Father's Day হোক বা যেকোনো দিন—বাবার মনের খেয়াল রাখুন। কারণ তিনিও তো মানুষ।
আঁখি