
এফবিসিসিআই নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার দাবি উঠেছে
সংগঠনের অডিট রিপোর্ট দাখিলের (ডিভিসি) সুবিধার্থে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার দাবি উঠেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশন ও চেম্বার থেকে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া ও ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী পরিষদ সদস্যদের মনোনয়ন জমাদানের সময়সীমা বৃদ্ধির জন্য এফবিসিসিআই নির্বাচন বোর্ড চেয়ারম্যান ও বাণিজ্য সচিব বরাবর আবেদন করা হয়েছে।
এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের নেতা ও বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল ক্যাবলস্ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ নির্বাচনের সময়সীমা দু’মাস পিছিয়ে দেওয়ার জন্য নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেছেন। অন্যদিকে, বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদের আহ্বায়ক জাকির হোসেন নয়ন মনোয়ন জমাদানের জন্য সময়সীমা বৃদ্ধি করার জন্য আবেদন করেছেন।
আবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. আব্দুল ওয়াহেদ বাণিজ্য সচিব বরাবর চিঠি দিয়ে এফবিসিসিআই এর অধিভুক্ত চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনগুলোর আরজেএসসির অনলাইন রিটার্ন দাখিলের স্বার্থে নির্বাচনের সময় তিন মাস বৃদ্ধির আবেদন করেছেন।
মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ তার আবেদনে জানান, নির্বাচন বোর্ড কর্তৃক আগামী ২ জুলাইয়ের মধ্যে এফবিসিসিআই এর সাধারণ পরিষদের সদস্যদের তালিকা জমাদানের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। আমি লক্ষ্য করছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন বোর্ডের নিকট সদস্যদের তালিকা প্রেরণ করা অ্যাসোসিয়েশন এবং চেম্বারগুলোর জন্য প্রায় অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কারণ, অ্যাসোসিয়েশন এবং চেম্বারগুলোর ডিভিসিসহ অডিট সম্পন্ন করা এবং তা আরজেএসসিতে জমা দেওয়ার ব্যাপারটি এবারই প্রথম এফবিসিসিআই এর নির্বাচনে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা প্রত্যেকটি অ্যাসোসিয়েশন এবং চেম্বারগুলোর জন্য সম্পূর্ণ নতুন ব্যাপার। এই নতুন নিয়মের কারণে বেশিরভাগ অ্যাসোসিয়েশন এবং চেম্বার এফবিসিসিআই এর সদস্য হতে পারবে না এবং নির্বাচনে ভোট প্রয়োগ করতে পারবে না বলে মনেকরি এবং এই কারণে এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন সম্পূর্ণরূপে প্রশ্নবিদ্ধ এবং ব্যর্থ হবে।
অথচ একটি সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য এফবিসিসিআই এর সকল সদস্যদের অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া, প্রত্যেকটি অ্যাসোসিয়েশন এবং চেম্বাররের ডিভিসিসহ অডিট সম্পন্ন করা এবং তা আরজেএসসিতে জমা দেওয়ার জন্য সর্বনি¤œ ২ (দুই) মাস সময় প্রয়োজন। এ অবস্থায় এফবিসিসিআই এর সাধারণ পরিষদের সদস্যদের তালিকা জমাদানের সময় আগামী জুলাই ২, ২০২৫ইং তারিখ হতে বর্ধিত করে আগামী আগস্ট ২, ২০২৫ইং তারিখ নির্ধারণ করার জন্য সবিনয়ে অনুরোধ জানাচ্ছি।
যা এফবিসিসিআই এর নির্বাচনে তার সকল সদস্যদের অংশগ্রহণের জন্য বিশেষ সহায়ক হবে। অন্যদিকে জাকির হোসেন নয়ন তার চিঠিতে জানিয়েছেন-এই প্রথমবার বাণিজ্য সংগঠন চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন সমূহকে ডিভিসি নম্বরসহ নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণী দাখিল করতে হচ্ছে। এটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। অধিকাংশ চেম্বার এবং অ্যাসোসিয়েশন এই কাজে নিয়োজিত থাকায় ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২ জুলাইয়ের মধ্যে তাদের পক্ষে নির্বাচন বোর্ডের নিকট জমা প্রদান করা দুঃসাধ্য এবং অনেকেই পারবেই না।
এ অবস্থায় সাধারণ পরিষদ সদস্যদের মনোনয়ন জমাদানের সময়সীমা বৃদ্ধি করে আগামী নির্বাচন সকলের অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান করা উচিত। এ প্রসঙ্গে বৈষম্য বিরোধী সংস্কার পরিষদের নেতা গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী খোকন বলেন, আমরা পনের দিন সময় চেয়েছি। আশা করছি সময়বৃদ্ধি করা হবে।
মো. আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, এফবিসিসিআই এর অধিভুক্ত বাণিজ্য সংগঠন চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন সমূহ অলাভজনক সংস্থা হওয়া স্বত্ত্বেও বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের অর্থমন্ত্রী আকম মোস্তফা কামাল ২০২০ সালের ১লা জানুয়ারি হতে এসব সংস্থার জন্য বাধ্যতামূলক ডিভিসি অডিটের আওতায় এনে বাণিজ্য সংগঠনের ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপ করে। ফলে বাণিজ্য সংগঠনগুলোর অস্তিত্ব বর্তমানে বিপন্ন হতে চলেছে।
এরই মধ্যে এফবিসিসিআই এর ২০২৫-২০২৭ মেয়াদের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে এবং তফসিল ঘোষণার ১৫ দিনের মধ্যে অর্থাৎ আগামী ২রা জুলাই ২০২৫ তারিখের মধ্যে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অফিসে (আরজেএসসি) অনলাইন রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করায় অধিকাংশ চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন এই ১৫ দিনের মধ্যে এই শর্তাদি প্রতিপালন করতে না পারায় ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারছেন না।
উল্লেখ্য ডিভিসি অডিট ২০২০ সাল হতে প্রতিপালন করে এসে অধিকাংশ সংস্থার আবার মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ হতে এজিএম ও অডিট দেরিতে করায় কোম্পানি আইন মোতাবেক অনুমতি নিতে অন্তত তিন মাস সময় প্রয়োজন। বিধি মোতাবেক অডিটগুলো এজিএম এর মাধ্যমে অনুমোদন করতে হয়। এতে করে ন্যূনতম তিন মাস সময় দরকার। বর্ণিত অবস্থায় সার্বিক দিক বিবেচনা নিয়ে এফবিসিসিআই এর বর্তমান নির্বাচন প্রক্রিয়া তিন মাস বৃদ্ধি করে সবার অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনে আপনার সদয় অনুমতি কামনা করছি।
উল্লেখ্য, আগামী ৭ সেপ্টেম্বর এফবিসিসিআই পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিনক্ষণ নির্ধারণ করেছে সংগঠনটির নির্বাচন বোর্ড। এদিন সকল ভোটারের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এফবিসিসিআই এর ২০২৫-২০২৬ ও ২০২৬-২০২৭ মেয়াদের জন্য সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি, সহ-সভাপতি এবং পরিচালক নির্বাচিত হবে।