
ছবিঃ সংগৃহীত
ওষুধ আমাদের সুস্থ রাখার জন্য—কিন্তু যদি তা একদিকে রোগ সারিয়ে অন্যদিকে নিঃশব্দে হৃদপিণ্ডে ক্ষতি করে, তাহলে সে ওষুধ কতটা নিরাপদ?
কার্ডিওলজিস্ট ড. দিমিত্রি ইয়ারানভ সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে একটি সতর্কতা জানিয়েছেন, যেখানে তিনি বলেন— কিছু সাধারণভাবে ব্যবহৃত ওষুধ নীরবে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই হৃদযন্ত্রজনিত সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য এই ওষুধগুলো রক্তচাপ বাড়ানো, হৃদপেশি দুর্বল করা অথবা হার্টবিটের ছন্দ বিঘ্নিত করার কারণ হতে পারে।
এই পাঁচটি ওষুধ নিয়ে বিশেষভাবে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি:
১️ এনএসএআইডি (NSAIDs) যেমন: আইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রক্সেন
সাধারণ মাথাব্যথা, জয়েন্টের ব্যথা বা প্রদাহে বহুল ব্যবহৃত এই ওষুধগুলো নিয়মিত কিংবা মাত্রাতিরিক্ত গ্রহণ করলে রক্তচাপ বাড়াতে পারে, ফ্লুইড রিটেনশন ঘটায়, এমনকি হার্ট ফেইলিউর পর্যন্ত ঘটাতে পারে।
বিশেষত যাদের হৃদরোগের ইতিহাস আছে, তাদের জন্য এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
২️ কিছু কেমোথেরাপি ওষুধ: যেমন ডক্সোরুবিসিন, ট্রাসটুজুম্যাব
ক্যানসারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু ওষুধ ধীরে ধীরে হৃদপেশি দুর্বল করে ফেলে।
এ কারণে অনেক ক্যানসার রোগীকে চিকিৎসার সময় ও পরবর্তীকালে কার্ডিয়াক মনিটরিং করা হয়। হার্ট ফেইলিউরের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে এসব ওষুধে।
৩️ স্টিমুল্যান্ট ওষুধ (যেমন অ্যামফেটামিনস, ADHD-এর ওষুধ)
ADHD বা নারকোলেপসি রোগে ব্যবহৃত এই ওষুধগুলো হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়।
কখনো কখনো তা অ্যারিদমিয়া (হার্টবিটের ছন্দপতন) বা এমনকি হার্ট অ্যাটাকের কারণও হতে পারে, বিশেষ করে যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে।
৪️ পুরনো প্রজন্মের ডায়াবেটিস ওষুধ (যেমন রোজিগ্লিটাজোন)
এই ধরনের ওষুধ রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করলেও, গবেষণায় দেখা গেছে— এতে হার্ট ফেইলিউরের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ কারণে এখন চিকিৎসকরা এসব ওষুধকে প্রথম পছন্দ হিসেবে বিবেচনা করেন না। নতুন প্রজন্মের ওষুধগুলো তুলনামূলকভাবে হৃদযন্ত্রের জন্য নিরাপদ।
৫️ ডিকনজেস্ট্যান্ট (যেমন: সিউডোএফেড্রিন)
ঠান্ডা বা ফ্লু’র সময় ব্যবহৃত এই ওষুধ নাক বন্ধ খুলতে সাহায্য করে রক্তনালী সংকুচিত করে।
কিন্তু এর ফলে রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে এবং হার্ট রিদমের সমস্যা তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এই ওষুধ সেবন একেবারেই উচিত নয়।
ডাক্তারের পরামর্শই সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা
ড. ইয়ারানভ পরামর্শ দিয়েছেন, এই ওষুধগুলো নেওয়ার আগে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত, বিশেষ করে যাদের হৃদযন্ত্রজনিত সমস্যা রয়েছে বা আগে ছিল।
পরিচিত ও সহজলভ্য বলেই কোনো ওষুধ পুরোপুরি নিরাপদ—এমন ধারণা ভুল হতে পারে। সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন।
ইমরান