ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

টঙ্গীতে ঝুট ব্যবসা নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলিবর্ষণ, আহত ২০

মোঃ সজিব হোসেন টঙ্গী, গাজীপুর

প্রকাশিত: ১৮:০৭, ২৮ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৮:০৮, ২৮ জুন ২০২৫

টঙ্গীতে ঝুট ব্যবসা নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলিবর্ষণ, আহত ২০

ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের টঙ্গীতে একটি পোশাক কারখানার ঝুট ব্যবসা নিয়ে আবারও মুখোমুখি হয়েছে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের দুই গ্রুপ। শনিবার (২৮ জুন) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে টঙ্গী পশ্চিম থানাধীন গাজীপুরা এলাকার সেটাং অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার সামনে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।

ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলির ভয়

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষের সময় উভয়পক্ষ অন্তত ২০টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় এবং পাঁচ রাউন্ড ফাঁকা গুলি চালায়। এ ঘটনায় এলাকা জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

ঝুট ব্যবসা ঘিরে দীর্ঘদিনের বিরোধ

পুলিশ জানায়, গাজীপুর মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব হালিম মোল্লা ও ৫০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী হুমায়ুনের সমর্থকদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ঝুট ব্যবসা নিয়ে বিরোধ চলছে। শনিবার দুপুরে কারখানার ঝুট মালামাল নামানোকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সমর্থকরা প্রথমে বাগবিতণ্ডায় জড়ায়, পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়।

আহত অন্তত ২০, এলাকায় আতঙ্ক

সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে রয়েছেন মো. রাসেল (৩০), মাহবুব হোসেন (৩২), বাবু মিয়া (২৮), আনোয়ার হোসেন (৩৫), ফরহাদ মিয়া (২৬), হাফিজুল ইসলাম (৩৩), শিপন (২৯), মাসুম (৩৭) ও হানিফ মোল্লা (৩১)। তাঁদেরকে টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।

চোখের সামনে তাণ্ডব

স্থানীয় বাসিন্দা মো. আলাউদ্দিন বলেন, “বিকট শব্দে হঠাৎ মনে হলো বোমা ফাটছে। আতঙ্কে পরিবার নিয়ে ঘরে লুকিয়ে পড়ি।” নারগিস বেগম জানান, “আমার ছোট ছেলে ছাদে খেলছিল। বিস্ফোরণের শব্দে ছেলের চিৎকার শুনে দৌড়ে ছাদে যাই। এখনও ভয়ে কাঁপছি।” ফল বিক্রেতা রমজান মিয়া বলেন, “দোকান বসাতে এসেই দেখি দুইপক্ষ দেশীয় অস্ত্রসহ ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় লিপ্ত। চোখের সামনে কমপক্ষে ১৫-২০টা বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছি। পিস্তলও দেখা গেছে।”

অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ

ঘটনার বিষয়ে কাজী হুমায়ুন সাংবাদিকদের বলেন, “আমার সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক করা একটি ঝুট ব্যবসা জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করছে হালিম মোল্লা। তার নেতৃত্বে শতাধিক লোক হামলা চালায়।” অন্যদিকে হালিম মোল্লার ঘনিষ্ঠ নেতা আল মামুন বলেন, “ঝুট ব্যবসার আয়ে বিএনপি শক্তিশালী না হয়ে, কিছু নেতা তা আওয়ামী লীগের পক্ষে ব্যবহার করছেন। কাজী হুমায়ুন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে ষড়যন্ত্র করছেন।”

দলের অবস্থান

টঙ্গী পশ্চিম থানা বিএনপির আহ্বায়ক প্রভাষক বসির উদ্দিন বলেন, “সংঘর্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে মহানগর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।”

পুলিশ বলছে, ছাড় নেই কারো জন্য

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান জানান, “কে কোন দলের সেটা মুখ্য নয়। যারা সংঘর্ষে জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”

পূর্বেও ছিল সংঘর্ষের ইতিহাস

উল্লেখ্য, এর আগেও গত ২৩ মে একই কারখানার সামনে এই দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। তখনও ককটেল বিস্ফোরণ, দেশীয় অস্ত্রের মহড়া ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ১০-১৫ জন আহত হয়েছিলেন এবং পুলিশ যৌথ অভিযানে দুজনকে গ্রেফতার করেছিল।

আসিফ

×