ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৯ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

ট্রাম্প বলছেন আলোচনায় আগ্রহী ইরান, তেহরানের সাফ জবাব-অমূলক কথা!

প্রকাশিত: ২২:৪৪, ২৮ জুন ২০২৫

ট্রাম্প বলছেন আলোচনায় আগ্রহী ইরান, তেহরানের সাফ জবাব-অমূলক কথা!

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায়। তবে তেহরান বলছে, এমন কোনো আলাপ বা উদ্যোগই হয়নি। সাম্প্রতিক হামলার পর দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য আলোচনা নিয়ে যখন নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে, ঠিক তখনই উভয়ের বক্তব্যে দেখা যাচ্ছে বিস্তর ফারাক।

সপ্তাহের শুরুতে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, আগামী সপ্তাহেই ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনা হতে পারে। এমনকি তার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেছিলেন, দুই দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে কথাবার্তা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সেই আলোচনার কোনো দিনক্ষণ নির্ধারিত হয়নি।

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ইরানের সঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠকের তারিখ ঠিক হয়নি। অন্যদিকে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি একই দিন রাতে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলেছেন, “নতুন কোনো আলোচনার জন্য আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ, চুক্তি বা প্রস্তুতি হয়নি।”

তবু যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন আশাবাদ ছাড়ছে না। কংগ্রেসে অনুষ্ঠিত ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও আবারও বলেছেন, আলোচনার জন্য একটা সুযোগ এখনো আছে এবং সেটি কাজে লাগানো উচিত।

রিপাবলিকান সিনেটর কেভিন ক্র্যামার বলেন, “ইরান হঠাৎ করে আমাদের আপন বলে জড়িয়ে ধরবে না, সেটা আমরা জানি। কিন্তু তাদের সামনে এখন তেমন কোনো বিকল্পও নেই।”

তবে সব আইনপ্রণেতা এতটা আশাবাদী নন। ডেমোক্রেট সদস্য জিম হাইমস সতর্ক করে বলেন, তেহরান এখনো উত্তর কোরিয়ার মতো গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথ বেছে নিতে পারে। তার মতে, “আমরা এখনো বুঝে উঠতে পারছি না, ইরান কোন পথে হাঁটবে।”

বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগের জায়গা আরও গভীর। কারণ ইরানের সংসদ বৃহস্পতিবার একটি বিল পাস করেছে, যার মাধ্যমে তারা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA)-এর সঙ্গে সহযোগিতা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই পদক্ষেপ গোটা বিশ্বে উদ্বেগ ছড়িয়েছে।

পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে কাজ করা বিশ্লেষক থমাস কান্ট্রিম্যান বলেন, “IAEA-র পর্যবেক্ষক দল ছাড়া ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি কোনো আলোচনাই কার্যকর হতে পারে না। তেহরানকে বুঝতে হবে, যতই তাদের ক্ষোভ থাকুক, এই পর্যবেক্ষকদের ফিরিয়ে আনা এখন সময়ের দাবি।”

তবে অনেক কূটনীতিক বলছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উচিত কিছু ইতিবাচক বার্তা পাঠানো। সাবেক আন্ডারসেক্রেটারি অব স্টেট বনি জেনকিন্স এবং জাতিসংঘে সাবেক রাষ্ট্রদূত থমাস পিকারিং সহ বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ কূটনীতিক এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রকে এখন সত্যিকার অর্থে কূটনীতি চালাতে হবে।”

এদিকে, ট্রাম্প বৃহস্পতিবার তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, তিনি ইরানের ওপর থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার কথা চিন্তা করেছিলেন। কিন্তু তেহরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির সাম্প্রতিক ভাষণে ‘বিজয় ঘোষণা’র পর সেই ভাবনা থেকে তিনি সরে এসেছেন।


দুই দেশের বক্তব্যে যে ব্যবধান, তা শুধু কথার নয় বিশ্বাসের। আলোচনার টেবিলে ফিরতে চাইলে কেবল চাপ বা সামরিক শক্তি যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন পারস্পরিক আস্থা ও প্রস্তুতির। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান কি শেষ পর্যন্ত মুখোমুখি বসবে, নাকি অনিশ্চয়তার এ লড়াই আরও দীর্ঘ হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

 

 


সূত্র:Politico

আফরোজা

×