
সপ্তাহের শুরুটা ছিল উত্তেজনায় ঠাসা—ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির ভঙ্গুর পরিস্থিতি নিয়ে হোয়াইট হাউস লনে সাংবাদিকদের সামনে রীতিমতো ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর সপ্তাহ শেষ করলেন বিজয়ের হাসি মুখে, টানা দু'বার সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়ে নিজের সাফল্যের ফিরিস্তি তুলে ধরে।
এই সপ্তাহে ট্রাম্পের বড় চারটি সাফল্যকে ঘিরে রয়েছে উচ্ছ্বাস, যদিও কিছু অমীমাংসিত বিষয়ও থেকে গেছে।
১. ‘অবিশ্বাস্য’ হামলা ও যুদ্ধবিরতি
২১ জুন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সফল মার্কিন হামলার ঠিক তিন দিন পর ট্রাম্প ঘোষণা করেন “সম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি”—যেটি তিনি ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
যদিও যুদ্ধবিরতির আগেই ইরান কাতারে অবস্থিত এক মার্কিন ঘাঁটিতে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে উত্তেজনা বাড়ায়। যুদ্ধবিরতির পরও উভয় পক্ষের বিরুদ্ধে তা লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে, যার প্রেক্ষিতে হোয়াইট হাউস লনে ট্রাম্পের মুখে উঠে আসে অশালীন শব্দ।
তিনি নিজেই স্বীকার করেন যে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে হামলা বন্ধে রাজি করাতে কঠিন লড়াই করতে হয়েছে।
তবুও যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়, এবং ট্রাম্প নিজেকে এক ‘শান্তি দূত’ হিসেবে তুলে ধরেন—যেটি গাজা ও ইউক্রেনে ব্যর্থতার প্রেক্ষিতে তার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি অর্জন।
২. ন্যাটোর ‘ড্যাডি’ ও ৫% প্রতিরক্ষা ব্যয়
নেদারল্যান্ডসে ন্যাটো সম্মেলনে যাওয়ার পথে ট্রাম্প একটি বার্তা পান—ন্যাটো সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক রুটে তাকে ইরানে হামলার জন্য প্রশংসা জানান। সম্মেলনে সদস্য দেশগুলো প্রতিরক্ষায় ৫% ব্যয় নিশ্চিত করে, যা ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছেন।
সংবাদ সম্মেলনে রুটে মজা করে ট্রাম্পকে ‘ড্যাডি’ বলে সম্বোধন করেন। ট্রাম্প হাসতে হাসতে বলেন, “সে সম্ভবত আমাকে পছন্দ করে। যদি না করে, তবে আমি ফিরে এসে তাকে ধাক্কা দেব।”
হোয়াইট হাউস পরে ট্রাম্পের বিজয়ী মুখাবয়বসহ ভিডিও পোস্ট করে ক্যাপশন দেয়: “Daddy’s home”।
৩. সুপ্রিম কোর্টে ‘জায়ান্ট উইন’
সপ্তাহ শেষ হয় সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ে, যা ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশগুলোর বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতের বাধা দেওয়ার ক্ষমতা সীমিত করে দেয়।
এই রায় ট্রাম্পের অভিবাসন, ট্যাক্স, আশ্রয়প্রার্থী স্থগিতকরণ এবং লিঙ্গ পরিবর্তন অস্ত্রোপচারে সরকারি অর্থায়ন বন্ধের মতো নীতিগুলোর পথ সুগম করে দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, “এটি সংবিধান, ক্ষমতার পৃথকীকরণ এবং আইনের শাসনের জন্য একটি ঐতিহাসিক বিজয়।”
৪. আফ্রিকায় শান্তিচুক্তি
শুক্রবার ট্রাম্প রুয়ান্ডা ও ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, যারা ওয়াশিংটনে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেন—যার লক্ষ্য দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সংঘাতের অবসান।
ট্রাম্প দাবি করেন, “আজ সহিংসতা শেষ হলো এবং এই অঞ্চল একটি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করলো।” এছাড়া চুক্তির ফলে যুক্তরাষ্ট্র কঙ্গোর মূল্যবান খনিজ সম্পদের অধিকারও লাভ করেছে বলে জানান তিনি।
যদিও তিনি স্বীকার করেন, “আমি এই সংঘাত সম্পর্কে খুব বেশি জানি না, শুধু জানি ওরা অনেক বছর ধরে একে অপরকে দা দিয়ে কাটাকুটি করেছে।”
তবে কিছু দুশ্চিন্তাও রয়ে গেছে হোয়াইট হাউসে
ট্রাম্পের অন্যতম প্রধান আইন প্রস্তাব—“One Big, Beautiful Bill” নামক বিশাল কর সংস্কার বিল—সিনেটের বাধায় স্থবির হয়ে আছে।
সিনেট পার্লামেন্টারিয়ান বলেছেন, এতে কিছু অংশ সিনেটের নিয়ম লঙ্ঘন করছে, ফলে বিলিয়ন ডলারের কর হ্রাস অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এছাড়া গাজা ও ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ট্রাম্প এখনো সফল হতে পারেননি। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ নিয়ে এক প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, “ওটা আমরা এখনো কাজ করছি।”
আর ইরানের বিষয়ে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “হ্যাঁ, প্রয়োজনে আবারও বোমা মেরে দেব।”
Jahan