ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৯ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

ইয়াঙ্গুনে নারী এশিয়ান কাপ বাছাই ফুটবলে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ বাহরাইন, আত্মবিশ্বাসী কোচ পিটার বাটলার ও অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার

প্রত্যয়ী মেয়েদের মিশন শুরু আজ

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ২২:৪১, ২৮ জুন ২০২৫

প্রত্যয়ী মেয়েদের মিশন শুরু আজ

বাহরাইন ম্যাচ সামনে রেখে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের ঘাম ঝড়ানো অনুশীলন, শনিবার ইয়াঙ্গুনে

ইয়াঙ্গুনে বাহরাইনের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের ২০২৬ এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাই মিশন শুরু হচ্ছে আজ। খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। সিÑ গ্রুপে বাংলাদেশের সঙ্গে আরও রয়েছে তুর্কমেনিস্তান ও স্বাগতিক মিয়ানমার। এই চার দলের মধ্যে গ্রুপসেরা দলই কেবল আগামী বছর নারী এশিয়ান কাপের মূল মঞ্চে খেলার সুযোগ পাবে। ২ জুলাই প্রতিপক্ষ স্বাগতিক মিয়ানমার এবং ৫ তারিখ তুর্কমেনিস্তানের সঙ্গে লড়বে আফঈদা খন্দকারের দল।

পাঁচদিন আগে ইয়াঙ্গুন গিয়ে বৃষ্টির বাগড়ার মধ্যেই অনুশীলনে নিজেদের ঝালিয়ে নিয়েছে মেয়েরা। সর্বশেষ শনিবার সকালেও দুই ঘণ্টা ঘাম ঝড়িয়েছে তারা। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে বড় বাধা মিয়ানমার। এই গ্রুপে কেবল তুর্কমেনিস্তানই (১৪১তম) বাংলাদেশ (১২৮তম) থেকে পিছিয়ে আছে। নারীদের ফুটবলে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ৫৫তম স্থানে থাকা মিয়ানমার এই গ্রুপের শীর্ষ র‌্যাঙ্কের দল, বাহরাইন র‌্যাঙ্কিংয়ের ৯২তম স্থানে রয়েছে। খুব বেশি না ভেবে ম্যাচ বাই ম্যাচ এগোতে চায় বাংলাদেশ।  
এশিয়ান কাপের মূল মঞ্চের টিকিট পাওয়ার এই লড়াইয়ে বড় প্রত্যাশার কথাই শুনিয়েছেন কোচ পিটার বাটলার এবং অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার। আর তাদের এই আত্মবিশ্বাসের রসদ জুগিয়েছে সাম্প্রতিক পারফর্ম্যান্স। গত মে মাসে জর্দানে অনুষ্ঠিত ফিফা ত্রিদেশীয় সিরিজে শক্তিশালী জর্দান (র‌্যাঙ্কিং ৭৪) ও ইন্দোনেশিয়ার (র‌্যাঙ্কিং ৯৪) বিপক্ষে ড্র করেছিল বাংলাদেশ (তখনকার র‌্যাঙ্কিং ১৩৩)। ওই দুই ম্যাচের পর আফঈদারা ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ৫ ধাপ উন্নতি করেছেন।

কোচ বাটলার জানিয়েছেন, সেই সিরিজে যারা ভালো পারফর্ম করেছিল, তাদের ওপরই এবারও আস্থা রাখছেন তিনি। ২৩ জনের চূড়ান্ত দলে ছিল মাত্র তিনটি পরিবর্তন। দলে ফিরেছেন অভিজ্ঞ দুই গোলরক্ষক স্বর্ণা রানী ও মিলি আক্তার এবং সাফ জয়ী ডিফেন্ডার নিলুফা ইয়াসমিন। বাদ পড়েছেন গোলরক্ষক মেঘলা রানী ও ফেরদৌসী আক্তার এবং মিডফিল্ডার শান্তি মার্ডি। ‘আমরা জর্দানে দু’টি ম্যাচ খেলেছি। ভালো প্রস্তুতি হয়েছে। এশিয়া কাপে খেলার আশা রাখি।’ বলছিলেন আফঈদা।

অধিনায়ক সরাসরি আশা ব্যক্ত করলেও পাশে কোচ পিটার বাটলার অবশ্য একটু বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে মন্তব্য করেছেন, ‘মিয়ানমার স্বাগতিক ও কঠিন প্রতিপক্ষ। বাংলাদেশের জন্য কাজটা চ্যালেঞ্জিং। আমরা বাহরাইন ও তুর্কমেনিস্তান দুই দলকে হারিয়ে এগিয়ে থাকতে চাই।’ টুর্নামেন্টে ভালো করার জন্য বাংলাদেশ অধিনায়ক আফঈদা, ঋতুপর্ণা চাকমাদের মতো অভিজ্ঞদের ওপর নির্ভর করবে।
পাশাপাশি শক্ত দলের বিপক্ষে গোলবার সামলানোটাও হবে গুরুত্বপূর্ণ। গোরক্ষক রুপনা চাকমা বলেছেন, ‘আমরা সবার কাছে দোয়া চাই। তিনটি ম্যাচই যেন ভালো খেলতে পারি। গোলরক্ষক হিসেবে আমার দায়িত্ব গোল সেভ করা। কোচের নির্দেশনায় আমরা কঠোর অনুশীলন করে যাচ্ছি।’ বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল দক্ষিণ এশিয়ায় টানা দুইবার চ্যাম্পিয়ন। সাফের গ-ি পেরিয়ে এশিয়ার শীর্ষ পর্যায়ে যেতে হলে কঠোর পরিশ্রমের বিকল্প নেই।

এটা ভালো করেই জানা বাংলাদেশ দলের গোলকিপিং কোচ মাসুদ আহমেদ উজ্জ্বলের,‘এশিয়ান পর্যায়ে যে ধাঁচের পারফর্ম্যান্স দরকার আমি সেভাবে গোলরক্ষক রুপনা ও অন্যদের তৈরি করছি। আশা করছি আমরা ভালো কিছু করেই দেশে ফিরব।’ আগামী বছরের মার্চে অস্ট্রেলিয়ায় হবে এএফসি এশিয়ান কাপের ২১তম আসর। ১২ দলের সেই লড়াইয়ে আয়োজক অস্ট্রেলিয়া ছাড়া ২০২২ সালে এই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়া চীন, রানার্সআপ দক্ষিণ কোরিয়া ও তৃতীয় হওয়া জাপানের অংশগ্রহণ নিশ্চিত। আর বাছাইয়ের আট গ্রুপের সেরা আট দল পাবে মূল পর্বে খেলার টিকিট। 
মূলত র‌্যাঙ্কিংয়ে উপরের দিকে থাকা জর্দান ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে ড্রয়ে নতুন স্বপ্নের জাল বুনেছে কোচ পিটার বাটলারের দল। নারী ফুটবলের ইতিহাসে প্রথমবার এশিয়া কাপে খেলার স্বপ্ন দেখছে মেয়েরা। গ্রুপ ‘সি’তে সেরা হতে পারলেই এশিয়া কাপের মূল পর্বে খেলার স্বপ্ন পূরণের উচ্ছ্বাসে ভাসবেন আফঈদা খন্দকার-ঋতুপর্ণা চাকমারা। ব্রিটিশ কোচের অধীনে অনেকদিন ধরে ক্যাম্পে ঘাম ঝড়িয়েছে মেয়েরা। কঠিন চ্যালেঞ্জ জয়ের জন্য সব প্রস্তুতিই নিয়েছে তারা।

ইতিহাস হাতছানি দিচ্ছে বলে মেয়েদের নানাভাবে উৎসাহ দিয়েছে কোচিং প্যানেল। গ্রুপে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী অবশ্যই মিয়ানমার। গ্রুপ সেরা হতে হলে লাল-সবুজের দলটিকে চ্যালেঞ্জে ফেলতে পারে মিয়ানমার। তবে বাংলাদেশ নারী দলের গোলরক্ষক কোচ মাসুদ আহমেদ উজ্জ্বলের বিশ্বাস মিয়ানমারকে হারাতে পারবেন তারা। তিনি বলেন, ‘আমার কেন যেন মনে হচ্ছে এবার আমরা এশিয়া কাপে খেলব। আমাদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী মিয়ানমার। তবে তাদের খেলা দেখে মনে হয়েছে আমরা জিততে পারব। জর্দান, ইন্দোনেশিয়ার মতো দলের সঙ্গে ড্রয়ে দলের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে গেছে। এশিয়ান কাপ বাছাই পর্ব নিয়ে আমরা খুব আশাবাদী।’

×