
কলম্বোতে সিরিজ জয়ী শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল
কলম্বো টেস্টে তৃতীয় দিন শেষেই অসহায় টাইগারদের ইনিংস ব্যবধানে হারের কথা উঠেছিল। ১১৫ রানে ৬ উইকেট নিয়ে চতুর্থ দিন শুরু করা বাংলাদেশ মাত্র ৩৪ বল খেলেই গুটিয়ে গেল। দুই ইনিংসে যবুথবু ব্যাটিংয়ে ইনিংস ও ৭৮ রানে লজ্জার হার দেখল নাজমুল হোসেন শান্তর দল। প্রথম টেস্ট ড্র হওয়ার পর এই টেস্টে দাপটে জয়ে সিরিজের ট্রফি ঘরে তুলল শ্রীলঙ্কা। সেই সঙ্গে বিশ^ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ২০২৫-২০২৭ চক্রে একধাপ এগিয়ে গেল লঙ্কানরা।
প্রথম ইনিংসে ২১১ রানে পিছিয়ে থেকে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে তৃতীয় দিন শেষে ৯৬ রানে পিছিয়ে ছিল সফরকারীরা। হাতে ছিল ৪টি উইকেট। ইনিংস ব্যবধানে হার এড়াতে অসম্ভব কিছুই করতে হতো বাংলাদেশকে। একমাত্র ভরসা ছিলেন লিটন কুমার দাস। কিন্তু তার ব্যাটও কথা বলেনি, মাত্র চার বল খেলেই সাজঘরে ফিরলেন এই স্বীকৃত ব্যাটার। ৪০তম ওভারে প্রবাথ জয়সুরিয়ার বল লিটনের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে তালুবন্দি হয় উইকেটকিপার কুশল মেন্ডিসের গ্লাভসে। যাবার আগে ৪৩ বল খরচায় ১৪ রান করেন তিনি। এরপর চোখের পলকেই বিদায় নেন নাঈম হাসান, তাইজুল ইসলাম ও এবাদত হোসেন।
এর আগে কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব (এসএসসি) মাঠে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। ৭৯.৩ ওভার খেলে ২৪৭ রানে অলআউট হয় সফরকারীরা। জবাবে পাথুম নিশাঙ্কার ১৫৮, দিনেশ চান্দিমালের ৯৩ ও কুশল মেন্ডিসের ৮৪ রানে ভর করে ৪৫৮ রান সংগ্রহ করে স্বাগতিকরা। ২১১ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে মুখ থুবড়ে পড়ে বাংলাদেশ। গলে দুই ইনিংসে ব্যর্থ ছিলেন এনামুল হক বিজয়। কলম্বোতেও সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখলেন তিনি। তবে ব্যাটিংয়ের ধরন পাল্টে ওয়ানডে মেজাজে ব্যাট করে ১৯ রান করতে পারেন তিনি। বিজয় ফিরলে ভাঙে ৩১ রানের উদ্বোধনী জুটি।
বিজয়ের ৩ বল পরই সাজঘরে ফেরেন আরেক ওপেনার সাদমান ইসলাম। আগের ইনিংসে ৪৬ করার পর এই ইনিংসে তার ব্যাট থেকে আসে ১২ রান। তিনে নেমে ১৫ রানের বেশি করতে পারেননি অভিজ্ঞ ব্যাটার মুমিনুল হক। টপ অর্ডারের পর একই পথে হাঁটলেন মিডল অর্ডারের ব্যাটাররা। কিছুটা আশা দেখিয়েও হাল ধরতে পারেননি মুশফিকুর রহিম-শান্তরা। থিতু হয়েও ৪৮ বলে ১৯ রান করেন শান্ত।
৫৩ বলে ২৬ করেন মুশফিক। ১১ রান করে সাজঘরে ফেরেন অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজ। দ্বিতীয় ইনিংসে টাইগারদের কোনো ব্যাটারই প্রতিরোধ করতে পারেননি লঙ্কান স্পিনার প্রবাথ জয়সুরিয়াকে। এই বোলার একাই শিকার করেছেন ৫ উইকেট। এছাড়া ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও থারিন্দু রতœায়েকে দুটি এবং আসিথা ফার্নান্দো একটি করে উইকেট নেন।
এদিকে এই টেস্ট সিরিজ হারের পর অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন আগের থেকে উন্নতি হয়েছে টেস্ট দলের। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আপনি যদি শেষ দুই-এক বছরের টেস্ট দল দেখেন, আমরা দেশের বাইরে এসে এখন জিতছি বা ড্র করছি। আগের থেকে যদি আপনি বলেন, আগের থেকে ভালো হয়েছে। তবে ধারাবাহিকতার জায়গায় ঘাটতি আছে। খেলায় হার-জিত থাকবে। আমার মনে হয় যে, প্রথম টেস্টটি আমরা যেভাবে ডমিনেট করে খেললাম, এই টেস্টটা আরেকটু ভালো খেলতে পারতাম, ডমিনেট করে খেলতে পারতাম তাহলে উন্নতির জায়গাটা আমরা দেখতে পেতাম।’
দেশের মাটিতে স্পিনারদের পারফরম্যান্স নিয়ে শান্ত বলেন, ‘আমার মনে হয় নাঈমের বোলিংটা আমরা এই সিরিজ থেকে নিতে পারি। সাতটা টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছে তার। ডিফিকাল্ট, এভাবে ভালো পারফর্ম করা, স্পেশালি এই টেস্ট ম্যাচের শুরুর কয়েকটা ওভার ভালো না করার পরে, যেভাবে তৃতীয় দিনে বোলিং করে কামব্যাক করেছে। আমরা জানি যে, তাইজুল ভাই দলের জন্য ৪০-৪৫ ওভার করে বল করে এটা কিন্তু অনেক ডিফিকাল্ট একটা ব্যাপার।’