ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

গরম পানির চেয়ে ঠান্ডা পানি কতটা ঝুঁকিপূর্ণ? বিজ্ঞান যা বলে

প্রকাশিত: ১৭:১৬, ২৮ জুন ২০২৫

গরম পানির চেয়ে ঠান্ডা পানি কতটা ঝুঁকিপূর্ণ? বিজ্ঞান যা বলে

ছবি: সংগৃহীত

ঠান্ডা পানি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, এ ধরনের কোনো প্রমাণ নেই। ঠান্ডা পানি বা ঘরের তাপমাত্রার পানি দুইই শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে। তবে গরম পানির কিছু বিশেষ উপকারিতা আছে, যেমন—পাচন ক্ষমতা বাড়ানো এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়া।

শরীরের যথাযথ হাইড্রেশন মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ডাক্তারদের মতে, ১৯ বছর বা তার বেশি বয়সের পুরুষদের দৈনিক ৩.৭ লিটার (১৫.৫ কাপ) পানি পান করা উচিত এবং ১৯ বছর বা তার বেশি বয়সের মহিলাদের দৈনিক ২.৭ লিটার (১১.৫ কাপ) পানি পান করা প্রয়োজন। কিন্তু ঠান্ডা পানি পান করা স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে কি না, তা নিয়ে অনেক ধারণা আছে।

কিছু মানুষ বিশ্বাস করেন, ঠান্ডা পানি পান করা খারাপ অভ্যাস যা দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। তাদের ধারণা, ঠান্ডা পানি পান করলে পেট সংকুচিত হয়, ফলে খাবার হজমে অসুবিধা হয়।

কিছু মানুষ মনে করেন, যখন আপনি বরফের মতো ঠান্ডা (৩৬°F বা ৪°C এর নিচে) পানি পান করেন, তখন শরীরকে তার অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা ৯৮.৬°F (৩৭°C) বজায় রাখতে বেশি পরিশ্রম করতে হয়।

কিন্তু এই ধারণাগুলোর পেছনে কি সত্যি কিছু আছে? চলুন ঠান্ডা পানি পান করার সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং উপকারিতা জানি।

ঠান্ডা পানি পান করলে আপনার শরীরে এমন কিছু প্রভাব পড়ে যা আপনি আশা করেননি বা পছন্দ নাও করতে পারেন। ১৯৭৮ সালের একটি ছোট ও পুরনো গবেষণায়, যেখানে মাত্র ১৫ জনের ওপর পরীক্ষা করা হয়েছিল, দেখা গিয়েছিল যে ঠান্ডা পানি পান করলে নাকের লালা গাঢ় ও ঘন হয় এবং শ্বাসনালী দিয়ে তা পার হওয়া কঠিন হয়।

পরিমাপ করলে দেখা গেছে, চিকেন স্যুপ এবং গরম পানি শ্বাসপ্রশ্বাসকে সহজ করে তোলে। তাই যদি আপনি সর্দি বা ফ্লুতে ভুগছেন, ঠান্ডা পানি পান করলে আপনার কনজেশন বা নাকজমাট অনুভূতি আরও বেড়ে যেতে পারে।

কিছু শারীরিক অবস্থায় ঠান্ডা পানি পান করাও সমস্যা বাড়াতে পারে। ২০০১ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা মাইগ্রেন রোগে ভুগছেন, তাদের মধ্যে ঠান্ডা পানি মাইগ্রেনের আক্রমণ ঘটাতে পারে।

২০১২ সালের আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যাক্যালেসিয়া নামক রোগে, যার ফলে খাদ্য নলিকা (ইসোফেগাস) দিয়ে খাবার পাস করতে অসুবিধা হয়, ঠান্ডা পানি খেলে সেই ব্যথা বেড়ে যায়।

প্রাচীন চীনা চিকিৎসাবিদ্যায় বিশ্বাস করা হয় গরম খাবারের সঙ্গে ঠান্ডা পানি পান করলে শরীরে অমিল সৃষ্টি হয়। সাধারণত চীনা সংস্কৃতিতে খাবারের সঙ্গে গরম পানি বা গরম চা পরিবেশন করা হয়। বিশ্বব্যাপী আরও অনেক সংস্কৃতিতেই এই বিশ্বাস বিদ্যমান।

অনেকেই মনে করেন গরম দিনে ঠান্ডা পানি পান করলেও শরীর ঠান্ডা হয় না। তবে এই ধারণাগুলো সত্য নাকি মিথ্যা, এ নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা নেই।

উপকারিতা
ঠান্ডা পানি পান করার কিছু উপকারিতাও আছে।

২০১২ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যায়ামের সময় ঠান্ডা পানি পান করলে শরীর অতিরিক্ত গরম হওয়া থেকে রক্ষা পায় এবং শরীরের কোর তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে, যার ফলে ওয়ার্কআউট আরও সফল হয়।

ঠান্ডা পানি ও ওজন কমানো
পানি পান করার ফলে (পানি যেকোন তাপমাত্রার হতে পারে) সারাদিনের মোট ক্যালোরি গ্রহণ কমে বলে যুক্তিসঙ্গত প্রমাণ আছে।

চিনি ভর্তি পানীয়ের বদলে পানি পান করা পাচনে সহায়ক এবং মাঝারি ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করে, যদিও পানি ঠান্ডা হলেও।

ঠান্ডা পানি পান করলে শরীরকে তার অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা ধরে রাখতে বেশি পরিশ্রম করতে হয়, তাই কিছু অতিরিক্ত ক্যালোরি জ্বালাতে পারে, কিন্তু ঠান্ডা পানি পান করা ওজন কমানোর জন্য কোনো মহাবিশ্বস্ত বা দ্রুত উপায় নয়।

গরম পানি কি ঠান্ডা পানির চেয়ে ভালো?
গরম পানি পান করলে:

  • পাচন প্রক্রিয়া ভালো হয়

  • রক্তসঞ্চালন উন্নত হয়

  • শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দ্রুত বের হয়

এগুলো কোনো ঝুঁকি নয়, তবে পানি পান করার ধরন নির্ধারণের সময় মনে রাখা ভালো।

গরম বা খুব গরম পানি পান করলে তৃষ্ণার অনুভূতি কম হতে পারে, যা গরম দিনে ক্ষতিকর হতে পারে কারণ শরীর ঘামের মাধ্যমে পানি হারায় এবং আবার পানি খাওয়ার সংকেত পায়। তাই গরম পানি পান করলে মনে রাখবেন, আপনি প্রয়োজনীয় পরিমাণে পানি পান করছেন কি না।

সারসংক্ষেপ
কিছু মানুষ ঠান্ডা পানি পান করা এড়াতে পারেন। সর্দি-জ্বর বা পাচনে ধীর গতি সংক্রান্ত কোনো জটিলতা থাকলে ঠান্ডা পানি পান করা আদর্শ নয়।

যদিও অনেক সংস্কৃতিতে ঠান্ডা পানি পান করা স্বাস্থ্যঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত হয়, তেমন কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।

গরম পানি পান করার অনেক উপকারিতা আছে।

ঠান্ডা পানি পান করার উপকারিতা মূলত ঘরের তাপমাত্রার পানি পান করার মতই — শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা এবং সতেজ বোধ করানো।

আপনি যদি পাচন সমস্যায় ভুগেন, ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চান, বা বারবার ডিহাইড্রেশন বোধ করেন, তবে একজন ডাক্তার বা স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে সঠিক পরিকল্পনা করা উচিত।

আবির

×