গোপন বন উজাড় আর আড়ালে থাকবে না, নজরে আনছে ইউরোপের নতুন স্যাটেলাইট

বিশ্বের বৃষ্টিবন (রেইনফরেস্ট) আমাদের টিকে থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি পৃথিবীর মোট স্থলভাগের মাত্র ৬% জুড়ে বিস্তৃত হলেও এখানে বাস করে পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি প্রজাতি। তাছাড়া এই বনভূমি বিপুল পরিমাণ কার্বন ধারণ করে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে একটি বড় রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে।

তবে এতদিন পর্যন্ত গবেষকরা গাছের পাতা ও ডালপালায় ঢাকা এই ঘন বনভূমির নিচের দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করতে পারেননি, কারণ প্রচলিত স্যাটেলাইট প্রযুক্তি এই ঘন চাঁদোয়ার ভেতর দেখতে সক্ষম নয়। অবশেষে, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ESA) নতুন স্যাটেলাইট "Biomass" এই সমস্যার সমাধান এনেছে।

নতুন প্রযুক্তির স্যাটেলাইট: Biomass
২০ বছর গবেষণার পর তৈরি এই স্যাটেলাইট প্রথমবারের মতো এমন একধরনের রাডার ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করছে, যা মেঘ এবং ঘন গাছপালার ভেতর দিয়ে প্রবেশ করে। এর ফলে গবেষকরা এখন গাছের কাণ্ডের ভেতর থাকা কাঠের উপাদান মাপতে পারছেন, যেখানেই কার্বনের মূল সঞ্চয়ন হয়।

এই স্যাটেলাইটের রঙিন চিত্রগুলো বনের ভেতরের বিভিন্ন প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য তুলে ধরছে — যেমন বনাঞ্চল, তৃণভূমি, জলাভূমি এবং এমনকি গোপন অবৈধ বন উজাড়ের ঘটনাও।

বৈজ্ঞানিক লক্ষ্য
এই স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গবেষক দল রেইনফরেস্টের দুর্গম অংশে গিয়ে মাটি থেকে পরিমাপ করবে। আগামী কয়েক বছরে একটি তিন-মাত্রিক (3D) গ্লোবাল বন মানচিত্র তৈরি করার লক্ষ্য রয়েছে, যার মাধ্যমে নির্ভুলভাবে বোঝা যাবে কোন বন কতটুকু কার্বন সংরক্ষণ করছে।

ইন্দোনেশিয়ার আগ্নেয়গিরি-সমৃদ্ধ হালমাহেরা রেইনফরেস্টের মতো দুর্গম স্থানগুলোতেও Biomass সহজেই বনের ভেতরের দৃশ্য তুলে ধরতে পারছে। ফলে কৃষির জন্য বন কাটা বা অবৈধ উজাড় এখন সহজেই নজরে আসবে, যা কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করবে।

আর্কটিক ও হিমবাহ গবেষণায়ও সহায়ক
Biomass স্যাটেলাইটের P-band রাডার তুষার ও বরফের ভেতর দিয়েও ঢুকতে পারে। এর মাধ্যমে অ্যান্টার্কটিকার নিমরড হিমবাহের বিস্ময়কর দৃশ্য প্রথমবারের মতো প্রকাশ পেয়েছে।

বরফের নিচের গঠন বুঝে গ্লেসিয়ারের গতি ও গলনের তথ্য পাওয়া যাবে, যা পানির ওপর নির্ভরশীল কোটি কোটি মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

সূত্রঃ বিবিসি