ছবিঃ সংগৃহীত
বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা গত দুই দশকে তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেসকো। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পড়াশোনা করছে প্রায় ৬.৯ মিলিয়ন (৬৯ লাখ) শিক্ষার্থী, যার মধ্যে চার মিলিয়নের বেশি পড়ছে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায়।
উচ্চশিক্ষায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে
ইউনেসকোর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সালে যেখানে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল মাত্র ২.১ মিলিয়ন, সেখানে ২০২২ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬.৯ মিলিয়নে। যদিও ২০২০ ও ২০২১ সালে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে অগ্রগতিতে সাময়িক মন্থরতা দেখা যায়, তবে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি ছিল উল্লেখযোগ্য।
উচ্চশিক্ষায় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অংশ ২০০০ সালে ছিল ২.১ শতাংশ, যা ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ২.৭ শতাংশে। তবে ইউনেসকো বলছে, “এই প্রবৃদ্ধির মাঝেও অঞ্চলভিত্তিক বৈষম্য রয়ে গেছে।”
অঞ্চলভিত্তিক চিত্র
ওশেনিয়া অঞ্চলে (অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ) ২০২২ সালে উচ্চশিক্ষায় ভর্তি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২১.১ শতাংশ ছিল আন্তর্জাতিক, অর্থাৎ প্রতি পাঁচজনের একজনই বিদেশি শিক্ষার্থী।
মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের হার সবচেয়ে কম, মাত্র ০.৪ শতাংশ।
উপ-সাহারা আফ্রিকায় উচ্চশিক্ষায় সম্প্রসারণ ঘটলেও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর অনুপাতে কমেছে। ২০০০ সালে যেখানে হার ছিল ২.৭ শতাংশ, সেখানে ২০২১ সালে তা নেমে আসে ১.৮ শতাংশে।
বৈশ্বিক শিক্ষার্থী সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি
২০২৩ সালে বিশ্বে উচ্চশিক্ষায় মোট ভর্তি শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৬৪ মিলিয়ন, যা ২০০০ সালের ১০০ মিলিয়নের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। একই সময়ে বিশ্বের সার্বিক ভর্তি হার বেড়ে ১৯ শতাংশ থেকে ৪৩ শতাংশে পৌঁছেছে। তবে এই বৃদ্ধির মাঝেও ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় ভর্তি হার যেখানে ৭৯ শতাংশ, সেখানে উপ-সাহারা আফ্রিকায় তা মাত্র ৯ শতাংশ।
নারী শিক্ষার্থীর অগ্রগতি
২০১০ সালেই নারী শিক্ষার্থী সংখ্যা পুরুষদের ছাড়িয়ে যায়। ২০২৩ সালে উচ্চশিক্ষায় ভর্তি নারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩৭ মিলিয়ন, যেখানে পুরুষ শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২৭ মিলিয়ন। এই প্রবণতা বৈশ্বিক উচ্চশিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির প্রতিফলন।
উদ্বাস্তুদের শিক্ষায় অংশগ্রহণ বাড়লেও এখনও কম
উদ্বাস্তু শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় অংশগ্রহণ ২০০০ সালের ১ শতাংশেরও কম থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে দাঁড়িয়েছে ৭ শতাংশে। যদিও এটি উন্নয়ন নির্দেশ করে, ইউনেসকোর মতে এটি এখনও প্রয়োজনীয় মানে পৌঁছায়নি।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির নতুন কাঠামো
এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে ইউনেসকোর প্যারিসে আয়োজিত গ্লোবাল কনভেনশন অন হায়ার এডুকেশন সম্মেলন উপলক্ষে। ২০১৯ সালে গৃহীত এই কনভেনশনকে ইউনেসকো বর্ণনা করেছে “যোগ্যতার স্বীকৃতিতে ন্যায়সঙ্গত, স্বচ্ছ ও বৈষম্যহীন প্রথম বৈশ্বিক আইনি কাঠামো” হিসেবে। এ পর্যন্ত ৩৮টি রাষ্ট্র এটি অনুসমর্থন করেছে।
বিশ্বে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা এখনো শিক্ষার্থীদের মূল গন্তব্য। তবে অঞ্চলভিত্তিক অংশগ্রহণের পার্থক্য, উদ্বাস্তুদের কম হারে অংশগ্রহণ এবং শিক্ষায় লিঙ্গভিত্তিক পরিবর্তন নিয়ে আন্তর্জাতিক আলোচনার ক্ষেত্র প্রসারিত হচ্ছে।
সূত্র: www.timeshighereducation.com
নোভা
