ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

স্বাদের ফেরে ঐতিহ্যের খোঁজে জাবিতে ‘লোকলাহাড়ি’ অনুষ্ঠান

রাশেদুল ইসলাম, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ০৩:২৬, ২৭ জুন ২০২৫

স্বাদের ফেরে ঐতিহ্যের খোঁজে জাবিতে ‘লোকলাহাড়ি’ অনুষ্ঠান

ওয়ার্ল্ড আর্কিওলজিক্যাল কংগ্রেস (ডব্লিউএসি—১০)—এর গ্লোবাল হাবের অংশ হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো এক ব্যতিক্রমধর্মী প্রদর্শনী: ‘লোকলাহাড়ি’।

বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সকাল ১০ টা থেকে নতুন কলা ভবনের ৩য় তলায় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে ‘লোকলাহাড়ি’ অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যবাহী খাদ্যের প্রদর্শনী করেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

এই বিশেষ প্রদর্শনীর মূল লক্ষ্য ছিল বাংলার লোকজ ও ঐতিহ্যবাহী রান্নার স্বাদ, গন্ধ ও ইতিহাসকে একত্রে তুলে ধরা, যাতে নবীন প্রজন্ম খাদ্যসংস্কৃতির শিকড়ের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। লোকলাহাড়ি মানে হল লোকজ ধারা ও খাবারের আনন্দ একসাথে। ওয়ার্ল্ড আর্কিওলজিক্যাল কংগ্রেস (ডব্লিউএসি)  বিশ্বের সর্ববৃহৎ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক সংগঠন, যা প্রতি তিন বছর অন্তর একটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের আয়োজন করে থাকে। এই বছর অস্ট্রেলিয়ার ডারউইনে দশম ওয়ার্ল্ড আর্কিওলজিক্যাল কংগ্রেস (ডব্লিউএসি—১০) অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং এই আন্তর্জাতিক আয়োজনের গ্লোবাল হাব হিসেবে প্রথমবারের মতো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মনোনীত হয়েছে।

২৩ জুন শুরু হওয়া গ্লোবাল হাব প্রোগ্রামের আজ ছিল তৃতীয় দিন। দিনটির বিশেষ আকর্ষণ ছিল নতুন কলা ভবনের তৃতীয় তলায় সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলা প্রদর্শনী, যেখানে দর্শনার্থীরা বাংলার ঐতিহ্যবাহী খাদ্যের স্বাদ গ্রহণের পাশাপাশি সেই খাদ্যের পেছনের গল্প, আঞ্চলিক বৈচিত্র্য এবং লোকজ ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারেন। প্রদর্শনী দেখতে আসেন কলা ও মানবিক অনুষদের সম্মানিত ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক, বিশিষ্ট প্রত্নতত্ত্ববিদ অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক বুলবুল আহমেদ, অধ্যাপক জয়ন্ত সিংহ রায়, এবং বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের অবসরপ্রাপ্ত কিপার স্বপন কুমার বিশ্বাস। তারা এই আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করেন বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ শুধু বাংলার হারিয়ে যাওয়া স্বাদকে ফিরিয়ে আনবে না, বরং নতুন প্রজন্মকে আমাদের রন্ধন ঐতিহ্যের সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত করে।

প্রদর্শনীতে ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে রাখা হয়েছিলো — বাংলা অঞ্চলের, বিশেষত উত্তরবঙ্গের শিদল, শুক্তানি, খিচুড়ি, আমের চাটনি, শুঁটকি ভর্তা, আলু ভর্তা, কচুর মুখী ভর্তা, কাঁচকলা ভর্তা, লইট্যা শুঁটকি ভুনা, চিড়ার মোয়া, রসবরা, নারকেল নাড়ু, দুধ নাড়ু, মেলানি ও ভাত, বগুড়ার কটকটি ও আলু ঘাটি। এই খাবার গুলোর মধ্যে উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী খাবার সিদল ও শুক্তানি—এর সঙ্গে প্রথমবার পরিচিত হবার সুযোগ পান অন্যান্য বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এমন একটি ব্যতিক্রমী আয়োজন সফলভাবে সম্পন্ন করতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। পাশাপাশি তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাবিকুন নাহার—এর প্রতি, যার উৎসাহ ও সার্বিক সহযোগিতা এই আয়োজনকে সফল হতে সহযোগিতা করছে।

প্রদর্শনী শেষে শিক্ষার্থীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ভবিষ্যতেও এই ধরনের গবেষণাভিত্তিক ও ঐতিহ্য—নির্ভর প্রদর্শনীর ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে, যা বাঙালির রন্ধন ঐতিহ্য সংরক্ষণে এবং প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

 

রাজু

আরো পড়ুন  

×