ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

এআই নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভুল ধারণা: যেগুলো আর বিশ্বাস করা উচিত নয়

প্রকাশিত: ১০:৪২, ২৮ জুন ২০২৫

এআই নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভুল ধারণা: যেগুলো আর বিশ্বাস করা উচিত নয়

ছবি: প্রতীকী

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দ্রুত বিকাশমান ও ছড়িয়ে পড়ছে, কিন্তু আমাদের সুরক্ষার জন্য গড়ে ওঠা আইনসমূহ এর গতি ধরে রাখতে পারছে না। এ কথা আপনি হয়তো আগেই জানতেন। তবে এআই নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নানা ভুল ধারণা আছে যা অনেক সময় সত্যের সঙ্গে মেলে না।

এআই নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি ব্যাপক; এটি ব্যক্তিগত অধিকার, গোপনীয়তা থেকে শুরু করে যেসব ওপেন সোর্স টুল সবাই সহজেই ব্যবহার করতে পারে, সেসব নিয়ন্ত্রণের কঠিনতায় বিস্তৃত। কিন্তু ব্যবসা ও ব্যক্তিগত জীবনে এআই ব্যবহারের ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে এর প্রভাব বোঝা এখন জরুরি।

সুতরাং, চলুন দেখি এআই নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যে ৫টি ভুল ধারণাকে আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত—

১. এআই নিয়ন্ত্রণ শুধু প্রযুক্তিবিদদের ব্যাপার

অনেকের ধারণা, এআই নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শুধু এআই ইঞ্জিনিয়ার, ডাটা সায়েন্টিস্ট ও ডেভেলপাররা চিন্তিত হন। কিন্তু এখন এআই ব্যবহার ব্যবসার নানা ক্ষেত্রে যেমন মার্কেটিং, এইচআর, কাস্টমার সার্ভিসে ঘনীভূত হওয়ার কারণে, প্রত্যেকেরই আইনি ও নিরাপদ ব্যবহারের দায়িত্ব আছে।

বর্তমান বিশ্বের বড় আইনগুলো (ইইউ, চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো) মূলত এআই ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে, ডেভেলপমেন্টে নয়। তাই যেই পেশায় কাজ করুন, এআই সংক্রান্ত নিয়ম-কানুন জানা প্রয়োজন।

২. এআই নিয়ন্ত্রণ উদ্ভাবন বন্ধ করে দেয়

অনেকে মনে করেন আইন থাকলে এআই ডেভেলপারদের কাজ বাধা পড়ে, আর ব্যবহারকারীর স্বাধীনতা কমে যায়। তবে এর উল্টোই সত্য: সঠিক নিয়ন্ত্রণ বাজারে স্বচ্ছতা ও বিশ্বাস বাড়ায়, ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা দেয় এবং নতুন উদ্ভাবনের সুযোগ করে দেয়।

আইন প্রয়োগে একটি ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি—উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে ঝুঁকি কমানো। তাই নিয়ন্ত্রণকে বাধা হিসেবে দেখা বিপজ্জনক ভুল।

৩. এআই নিয়ন্ত্রণ নির্ধারণ করে কী তৈরি হবে

অনেকে ভ্রান্তভাবে মনে করেন যে বড় কোম্পানিগুলো যেমন গুগল বা ওপেনএআই এর কাজ আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। কিন্তু বাস্তবে, অধিকাংশ আইন ব্যবহারকারীদের নিয়ন্ত্রণ করে, ডেভেলপারদের নয়।

যেমন, ইইউর আইন ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ এআই ব্যবহার যেমন সামাজিক স্কোরিং, জনসাধারণের মধ্যে জীববৈচিত্র্য শনাক্তকরণ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, কিন্তু ডেভেলপাররা এখনও শক্তিশালী মডেল তৈরি করতে স্বাধীন।

সুতরাং, প্রযুক্তিগত সম্ভাবনা সবসময় আইনি নয়, এবং ব্যবহারকারীদের নিজের ব্যবহারের দায় নিতে হয়।

৪. ভূ-রাজনীতি এআই আইনকে অগ্রাহ্য করে

২০১৭ সালে ভ্লাদিমির পুতিন বলেছিলেন, যে দেশ এআই নিয়ে এগিয়ে যাবে সে বিশ্ব নেতা হবে। তাই দেশগুলো যুদ্ধ, গোয়েন্দা ও অর্থনীতির জন্য এআই উন্নয়নে উৎসাহী।

তবে বাস্তবে তারা জানে, এআই নিজে থেকেই নিয়ন্ত্রণ ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারযোগ্য। যেমন, ইইউ গোপনীয়তা ও নাগরিক অধিকার রক্ষায় জোর দেয়, চীন সামাজিক সুশৃঙ্খলা বজায় রাখতে চায়, আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজের এআই শিল্পকে শক্তিশালী করতে চায়।

এআই নিয়ে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকার জন্য নিয়মনীতি প্রণয়ন ও প্রয়োগ গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।

৫. এআই ‘ব্ল্যাক বক্স’, তাই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়

বড় ভাষা মডেল যেমন চ্যাটজিপিটির নির্মাতারাও সম্পূর্ণ জানেন না কীভাবে মডেলগুলো কাজ করে। সুতরাং, কীভাবে নিয়ম আরোপ করবেন? তারা কি নিয়ম মানবে? হয়তো তারা ভুয়া সম্মতি দেখাবে?

এসব প্রশ্ন উঠলেও, নিয়ন্ত্রণ মূলত বিপজ্জনক ব্যবহার রোধের জন্য। প্রযুক্তির কৌশল পুরোপুরি বুঝতে না পারলেও ফলাফল ভিত্তিক নিয়ম প্রণয়ন সম্ভব।

যা এখনই করা হচ্ছে তা ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী ও বিপজ্জনক এআই মোকাবেলায় সহায়ক হবে।

 

সূত্র: https://www.forbes.com/sites/bernardmarr/2025/06/27/5-ai-regulation-lies-everyone-must-stop-believing/?ss=ai

রাকিব

×