
ছবিঃ সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট এক ঐতিহাসিক রায়ে ঘোষণা করেছে যে, কোনো একক ফেডারেল বিচারক আর রাষ্ট্রপতির আদেশ সারা দেশের জন্য স্থগিত করতে পারবেন না। এই রায়ের ফলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের আদেশ কার্যকর করার পথ খুলে গেছে।
সুপ্রিম কোর্টের ছয়জন রক্ষণশীল বিচারপতি ট্রাম্পের পক্ষে রায় দেন, যেখানে বলা হয়েছে, নিচের আদালতের নিষেধাজ্ঞা কেবলমাত্র মামলাকারীদের জন্যই প্রযোজ্য, পুরো জাতির জন্য নয়। আদালতের তিনজন উদারপন্থী বিচারপতি এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন, বলছেন এটি প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং বিচার বিভাগের ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে।
ট্রাম্প ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেওয়ার পরপরই একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যেখানে বলা হয়— যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে জন্ম নিলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব পাওয়া যাবে না, যদি না জন্মদাতারা যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে বসবাস করেন।
এই আদেশের বিরুদ্ধে ২২টি অঙ্গরাজ্য, ৫ জন গর্ভবতী নারী, ২টি শহর ও কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থা মামলা দায়ের করে। তারা যুক্তি দেন, এই আদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর লঙ্ঘন। ১৪তম সংশোধনী অনুযায়ী, “যে কেউ যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেবে এবং এখানকার আইনের আওতায় থাকবে, সে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিক হিসেবে গণ্য হবে।” তবে ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি— “আইনের আওতায়” অর্থ হলো, যারা স্থায়ী বা বৈধভাবে বাস করেন তারাই এর অন্তর্ভুক্ত।
বিচারপতি অ্যামি কনি ব্যারেট আদালতের মতামত লেখেন। তিনি বলেন, “নিম্ন আদালতগুলোর ক্ষমতা সীমাবদ্ধ। তারা কেবল নির্দিষ্ট মামলাকারীদের ক্ষেত্রেই আদেশ জারি করতে পারে।”
বিচারপ ব্রেট ক্যাভেনগ বলেন, মামলাকারীরা চাইলে “জাতীয় স্তরে ক্লাস অ্যাকশন মামলা” করতে পারেন, যা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।
তবে বিচারপ সোনিয়া সোটোমায়োর তার বিরোধী মতামতে বলেন, এই রায় বিচার বিভাগের ক্ষমতা হ্রাস করছে এবং প্রেসিডেন্ট যদি অসাংবিধানিক আদেশ জারি করেন, তবে আদালতের পক্ষে তা বন্ধ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
সুপ্রিম কোর্ট এখনো জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব সংক্রান্ত আদেশের সাংবিধানিকতা নিয়ে চূড়ান্ত রায় দেয়নি। তবে এই রায়ে বলা হয়েছে, যারা এই আদেশের বিরুদ্ধে মামলা করেনি, তাদের জন্য আদেশ কার্যকর হবে ৩০ দিনের মধ্যে।
আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শেষ পর্যন্ত এই আদেশ অসাংবিধানিক বিবেচিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বিচারপতি সোটোমায়োর বলেন, “জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব হলো এই দেশের ‘আইনের ভিত্তি’। এই আদেশ সরাসরি সংবিধানবিরোধী।”
তবে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারোলাইন লেভিট জানিয়েছেন, তারা আশা করেন অক্টোবরে আদালত তাদের পক্ষে রায় দেবেন এবং আদেশটি বহাল থাকবে।
সূত্র: বিবিসি
নোভা