ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

নিদ্রাহীনতা বাড়ায় হৃদরোগের ঝুঁকি: বিশেষজ্ঞের সতর্কতা ও পরামর্শ

প্রকাশিত: ১৩:৩০, ২৮ জুন ২০২৫

নিদ্রাহীনতা বাড়ায় হৃদরোগের ঝুঁকি: বিশেষজ্ঞের সতর্কতা ও পরামর্শ

ছবি: সংগৃহীত

ঘুম না হওয়া শুধু বিরক্তিকরই নয়, মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিরও কারণ হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ দীর্ঘমেয়াদি নিদ্রাহীনতায় ভোগেন, আর আরও বহু মানুষ ভালো ঘুম না হওয়ার অভিযোগ করেন। নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিনের খারাপ ঘুম হৃদরোগসহ নানা জটিল শারীরিক সমস্যার জন্ম দিতে পারে।

পেন স্টেট কলেজ অব মেডিসিন-এর মনোরোগ ও জনস্বাস্থ্য বিভাগের অধ্যাপক ড. জুলিও ফার্নান্দেজ-মেন্ডোজা সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ভালো ঘুম শুধু শারীরিক নয়, মানসিক সুস্থতার জন্যও অত্যন্ত জরুরি। কী পরিমাণ ঘুম প্রয়োজন, ঘুম কম হলে কী ক্ষতি হতে পারে এবং ওষুধ ছাড়াও ঘুম ভালো করার উপায়—এসব নিয়েই কথা বলেন তিনি।

কার জন্য কতটুকু ঘুম যথেষ্ট?

ড. ফার্নান্দেজ-মেন্ডোজা বলেন, ‘প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য রাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে উপকারী। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই প্রয়োজন কিছুটা কমে আসে। ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে মানুষের জন্য ছয় ঘণ্টা ঘুমও যথেষ্ট হতে পারে।’

অন্যদিকে, কিশোর-কিশোরীদের জন্য নয় ঘণ্টা বা তারও বেশি ঘুম দরকার। ছোটদের জন্য প্রয়োজন আরও বেশি সময় ঘুম।

ঘুম কম হলে শরীরে কী হয়?

‘আমরাই প্রথম গবেষণার মাধ্যমে দেখিয়েছি, যারা ঘুম না হওয়া বা ঘন ঘন ঘুম ভেঙে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন, তাদের উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি’, বলেন তিনি।

তরুণ-তরুণী এবং প্রাপ্তবয়স্ক উভয় ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, কম ঘুম শরীরে স্ট্রেস হরমোন, প্রদাহ এবং অন্যান্য বিপজ্জনক রাসায়নিক উপাদানের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এগুলো হৃদরোগ হওয়ার আগেই শরীরে ক্ষতি করতে শুরু করে।

ভালো ঘুমের জন্য ৬টি নিয়ম

শুধু চা-কফি কম খাওয়ার মতো সাধারণ ঘুম স্বাস্থ্যবিধির বাইরে ড. মেন্ডোজা ছয়টি নির্দিষ্ট নিয়ম মানার পরামর্শ দিয়েছেন, যেগুলো গবেষণালব্ধ:

১. প্রতিদিন একই সময়ে উঠুন, ঘুম যতই কম হোক না কেন। এতে সারাদিনের ঘুম-জাগরণ চক্র (circadian rhythm) ঠিক থাকে।

২. বিছানা শুধু ঘুম আর যৌন সম্পর্কের জন্য ব্যবহার করুন। অন্য কিছু নয়।

৩. ঘুম না এলে বিছানায় পড়ে থাকবেন না। উঠে পড়ুন, অন্য রুমে গিয়ে কিছু মনোরম বা শিথিলকারী কাজ করুন, তারপর ফের বিছানায় যান।

৪. ঘুম কম হলেও দিন শুরু করুন। আগের রাতে ঘুম কম হয়েছে বলে দিনে ঘুমিয়ে নেওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন।

৫. শুধু তখনই শুতে যান, যখন আসলেই ঘুম পাচ্ছে।

৬. প্রথমে যত ঘুম হচ্ছে, তা থেকেই শুরু করুন (সর্বনিম্ন ৫ ঘণ্টা) এবং প্রতি সপ্তাহে ১৫ মিনিট করে সময় বাড়ান।

কিশোরদের জন্য আলাদা পরামর্শ

ড. মেন্ডোজা বলেন, ‘কিশোরদের ঘুমের ধরনে জীববৈজ্ঞানিক পরিবর্তন ঘটে। তাদের ঘুমাতে যেতে মন চায় দেরিতে, যেটা শুধু সামাজিক নয়, বরং শরীরের নিজস্ব ঘড়ির পরিবর্তনের ফল।’

তার পরামর্শ—শিশু-কিশোরদের ধীরে ধীরে সকালে একটু আগে উঠতে শেখান। সাপ্তাহিক ছুটিতে তাদের ঘুমের সময় একটু একটু করে এগিয়ে আনুন। হঠাৎ করে খুব ভোরে জোর করে তোলার চেষ্টা করবেন না।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?

‘যদি কেউ দিনের বেলায় ক্লান্ত বোধ করেন, ঘুম ভালো না হয়, ঘুমের মধ্যে দাঁত ঘষেন বা নাক ডাকার সমস্যা থাকে—তাহলে ঘুম বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত’, বলেন ড. মেন্ডোজা।

তিনি বলেন, ওষুধ ছাড়াও কার্যকর চিকিৎসা রয়েছে। বিশেষভাবে ‘কগনিটিভ বিহেভিয়রাল থেরাপি ফর ইনসমনিয়া’ (CBT-I) এবং লাইট থেরাপি এখন নির্দিষ্ট ঘুম সমস্যার জন্য অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে প্রমাণিত।

 

সূত্র: সিবিএস নিউজ।

রাকিব

×